রাউজানে পানিবন্দি হাজারো মানুষ
মো. হাবিবুর রহমান, রাউজান
টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানি বেড়ে রাউজানের নিম্নাঞ্চাল প্লাবিত হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে চলন্ত অটোরিকশার উপর গাছ ভেঙে পড়ে চালকসহ তিনজন আহত হয়েছেন। দুমড়ে মুচড়ে গেছে অটোরিকশাটি।
জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে দক্ষিণ রাউজানের নোয়াপাড়া ও উরকিরচর ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়লেও শনিবার রাউজান পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড, বিভিন্ন ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। রাউজান পৌরসভা, নোয়াপাড়া ইউনিয়ন, উরকিরচর ও বাগোয়ান ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করেছে ঘরবাড়ি, মসজিদ, স্কুল-মাদ্রাসা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে। ডুবে গেছে সড়ক। এক সময় চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেলে চারলেন উন্নীতকরণের সময় সড়কটি ৪ থেকে ৬ ফুট উচু করায় এবার সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়নি। সেজন্য চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের যাতায়তকারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। তবে পানির নিচে তলিয়ে গেছে পৌর এলাকার বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ সড়ক। পানি প্রবেশ করেছে বসতঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন গবাদি পশু লালন পালনকারীরাসহ সাধারণ মানুষ। ডুবেছে বহু পুকুর। বাড়ির উঠানে ও সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া পানিতে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেন স্থানীয়রা।
অন্যদিকে দক্ষিণ রাউজানের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের পাঁচ ছয়টি গ্রামের কয়েকশ ঘর বাড়ি, স্কুল মাদ্রাসা অতিবৃষ্টির কারণে পার্শ্ববর্তী হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানি পাঁচ থেকে ছয় ফুট বেড়ে পানিতে ডুবে আছে। গত তিন-চার দিন ধরে অনাকাঙ্ক্ষিত প্লাবনে এ ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানিতে তলিয়ে আছে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম। বাড়ি-ঘর, স্কুল, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট, ক্লাব, মসজিদের আঙ্গিনাসহ বিভিন্ন স্থাপনাও ডুবে আছে। ভেঙে অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে ইউনিয়নের মোকামী পাড়া, কচুখাইন গ্রামের বিভিন্ন সড়কও। উরকিরর ইউনিয়নেও একই অবস্থা। এই ইউনিয়নের মূল প্রবেশপথ চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক সংযুক্ত উরকিরচর সড়কটির প্রায় ৩ কিলোমিটার অংশ পানিতে ডুবে গেছে।
আগেরদিন রাতভর অতিবৃষ্টি হওয়ায় পরদিন শনিবার সকাল থেকেই সড়কটি দিয়ে সব ধরনের যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এ কারণে ওই ইউনিয়নের পাঁচ থেকে সাতটি গ্রামের অন্তত ১০ হাজার বাসিন্দা অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন পার করছেন বলে জানা গেছে। এই সড়কেরও বিভিন্ন স্থানে ভেঙে চলাচল অনুপযোগী পড়ার খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতিবৃষ্টি কিংবা বন্যায় বা পাহাড়ি ঢলের কারণে নদীতে পানি বাড়লে মোকামী পাড়া গ্রামের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু তিন থেকে চার ফুট পানিতে তলিয়ে গিয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। অমাবস্যা বা পূর্ণিমাতেও নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এই গ্রামবাসী পানিবন্দি থাকেন। সরকারি প্রকল্পের আওতায় হালদা নদীর হাটহাজারী অংশে বেড়িবাঁধ দেয়া হলেও রাউজান অংশে তা হয়নি। একাণে নদীতে পানি বাড়লে এপাশে পানির স্রোতের চাপ বেড়ে দুর্ভোগে পড়তে হয় বলে দাবি স্থানীয়দের। এদিকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের তাপবিদ্যু এলাকায় অটোরিকশার উপর একটি আকাশমণি গাছ উপরে পড়ে চালক আহত হয়েছেন।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় লোকজন ও রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিসের লিডার জাহেদুর রহমান জানান, প্রবল বর্ষণে সড়কের পাশের একটি গাছের গোড়ার মাটি সরে উপড়ে পড়ে। গাছ চাপায় সিএনজি চালিত অটোরিকশাটি ধুমড়ে-মুচড়ে যায়। চালক গুরুতর আহত হলেও তার পরিচয় জানা যায়নি। প্রায় দুইঘন্টা যানবাহন চালচাল বন্ধ ছিল। পরে রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছটি কেটে অন্যত্র সরিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশাটি উদ্ধার করেন। এরপর যানবাহন চলাচাল স্বাভাবিক হয়।
রাউজান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোরশেদ বলেন, ‘ উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত বড় ধরনের ক্ষতির সংবাদ পাওয়া যায়নি। আমরা তথ্য সংগ্রহে কাজ করছি।’
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুস সামাদ সিকদার বলেন, ‘প্রবল বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ইউনিয়ন জলমগ্ন অবস্থায় আছে বৃষ্টি কমলে জোয়ার নামলে পানি নেমে যাবে বলে ধারণা করছি। কোথাও কোনো দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে রানিং ওয়াটার দ্বারা অস্থায়ী জলাবদ্ধতা বলেও জানান এই কর্মকর্তা।