Cvoice24.com

লালবোট চালক থেকে কিছুই জানতে পারেনি পুলিশ, দিচ্ছে মুচলেকায় মুক্তি

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:০৮, ২০ আগস্ট ২০২২
লালবোট চালক থেকে কিছুই জানতে পারেনি পুলিশ, দিচ্ছে মুচলেকায় মুক্তি

৬ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদেও লালবোটের চালক আব্দুল কাদেরের কাছ থেকে কোন তথ্য পায়নি সন্দ্বীপ থানা পুলিশ। অন্যদিকে আব্দুল মান্নান নিখোঁজ হওয়ার ৩৩ ঘণ্টা পরেও কিভাবে নিখোঁজ হলেন সেই বিষয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি সন্দ্বীপের স্থানীয় প্রশাসন। যদিও আগেরদিন একজন বৃদ্ধকে নদীতে পড়ে যেতে দেখার এবং দীর্ঘক্ষণ পরেও তার উদ্ধার না হওয়ার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী আছে। 

এদিকে জিজ্ঞাসাবাদে সন্তোষজনক তথ্য পাওয়া না গেলেও পরিবারের জিম্মায় মুচলেখা দিয়ে লালবোট চালককে জামিনে ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি আব্দুল মান্নানের সন্ধানে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান তৎপরতা দেখা যায়নি প্রশাসনের তরফ থেকে। 

নদীতে পড়ে আব্দুল মান্নান নামে একজন নিখোঁজ হয়েছে স্থানীয় পর্যায় থেকে এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে সে বিষয়ে জানতে চাইলে সন্দ্বীপ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা শুরুতে সিভয়েসের কাছে জানতে চান, ‘খবর কোত্থেকে পাইছেন?’ স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়েছি জানিয়ে আবারও মান্নানকে উদ্ধারে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা নির্বাহী সম্রাট খীসা আবার পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘না আপনি কি খবর পাইছেন?’

আব্দুল মান্নান নিখোঁজ ইস্যুতে কথা বলতে তিনি বিরক্তিবোধ করেন কিনা সিভয়েসের তরফ থেকে জানতে চাওয়া হলে খানিকটা সুর বদলায় উপজেলা নির্বাহী সম্রাট খীসার। এরপর তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘মাঝিকে স্থানীয় পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কী হয়েছে এই বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এখন ওর ভাষ্য হইছে সে তুলছে। এখন প্রকৃতপক্ষে কী হইছে তা উদ্ঘাটনের জন্য তাকে পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়েছে। আপনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলুন।’

আব্দুল মান্নানের সন্ধানে কোন উদ্ধার তৎপরতা চলছে কিনা সিভয়েসের এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা কোস্টগার্ড ও লোকাল থানাকে বলেছি।’

এদিকে নদীতে পড়ে কেউ নিখোঁজ হয়েছে সন্দ্বীপের কোস্টগার্ডের কাছে কোন তথ্য আছে কিনা সিভয়েসের এমন প্রশ্নের জবাবে কোস্টগার্ডের সন্দ্বীপ স্টেশন কমান্ডার আরশাদুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘এই ধরণের তথ্য নাই। আমি ওই মুহূর্তে সেখানে প্রেজেন্ট ছিলাম। যে নৌকাতে পার হইছে এখন পর্যন্ত তার মুখ থেকে কোন তথ্য পাওয়া যায় নাই এবং কোন পেসেঞ্জারের কাছ থেকেও আমরা এই ধরণের কোন তথ্য এখন পর্যন্ত পাইনি।’

সে সময়ে নিজের ভূমিকার কথা তুলে ধরে কোস্টগার্ডের সন্দ্বীপ স্টেশন কমান্ডার আরশাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঘাটে প্রেজেন্ট ছিলাম। তারা বললো যে একটা লোক নামতে গিয়ে পড়ে গেছে। তখন আমি তাদেরকে জিগাইলাম কে পড়ে গেছে। তেমনি একটা লোককে দেখালো যার সমস্ত কাপড় চোপড় ভেজা সে পড়ে গেছে। সবাইতো আসলে ভিজে আসতেছে। যতগুলো লোক আসে ম্যাক্সিমাম লোক ডেউতে ভিজে যায়। আমি ঘাটের ম্যানেজার মানিককে ডাকলাম জিজ্ঞেস করলাম উনাকে কী উদ্ধার করা হইছে? মানিক বললো হ্যাঁ উদ্ধার করা হয়েছে। এবং যে বোট ওয়ালা তাকে কাল রাতে অফিসে নিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত তার কাছে কোন তথ্য পায় নাই।’

ওই লোক পড়ে যাওয়ার প্রত্যক্ষদর্শী ও নদীতে ভাসার ভিডিও রয়েছে উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, ‘যদি ওই মুহুর্তেও যদি বলতো...... আমাদের ডুবুরি দল ছিলো। আমরা তাদের (ঘাটের লোকজন) জিজ্ঞেস করেছি, তারা বলেছে পড়েছে তারা উদ্ধার করে নিয়ে আসছে। যাত্রীদের কাছেও জিজ্ঞাসা করেছি। তারাও বলছে হ্যাঁ পড়ছে উঠানো হইছে। 

মান্নানকে খোঁজার ব্যাপারে কোন নির্দেশনা পেয়েছেন কিনা সিভয়েসের এমন প্রশ্নের জবাবে আরশাদুল ইসলাম বলেন,‘আমাকে ইউএনও স্যার বলছে যে দেখেন যদি হারাই যাই থাকে তাহলে দেখেন। তো আমরাতো টহলে ছিলাম। এখন পর্যন্ত কিছু পাই নাই।’

এদিকে লালবোট চালক আব্দুল কাদেরের কাছে কোন তথ্য পাওয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আসলেতো এটাতো এক্সিডেন্টাল একটা বিষয়। দূর্ঘটনাক্রমেই এটা হইছে। কেউ ধাক্কা মেরতো আর ফেলে দেয় নাই। একজন উঠছে আর কি আরেকজন তারা ই... করতে পারে নাই। তারা বলছে একজনকে পড়তে দেখছে একজনকে উঠাইছে। মান্নানকে তারা উঠতে দেখেনাই। তার আত্মীয় স্বজন এলে মুচলেখা দিয়া জামিনে ছেড়ে দিবো। আর মান্নান নিখোঁজের বিষয়ে জিডি হয়েছে সেটা আমরা ইনভিসটিগেশন করবো।’

প্রসঙ্গত শুক্রবার (১৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে চট্টগ্রামের কুমিরা থেকে যাত্রী নিয়ে গুপ্তছড়া ঘাটে আসা একটি কাঠের সার্ভিস বোট থেকে লালবোটে নামার সময় এক যাত্রী নদীতে পড়ে যায় বলে জানাচ্ছিল সার্ভিস বোটের যাত্রীরা। এসময় লালবোট ও স্পিডবোট দিয়ে ওই যাত্রীকে উদ্ধার করার চেষ্টা করা হলেও শেষতক তিনি নদীতে ডুবে যান বলে দাবি  একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর। 

কিন্তু ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছিলো, এমন কোন ঘটনাই ঘটেনি। একজন নদীতে পড়ছিলো সে হেঁটে বাড়ি চলে গেছে। সন্ধ্যা নাগাদ জানা যায়, আব্দুল মান্নান নামে ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ সন্দ্বীপ আসার জন্য চট্টগ্রাম থেকে রওয়ানা করে বোটে উঠে তার পরিবারকে জানিয়েছিলেন। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। পরে সার্ভিস বোটের যাত্রীদের মধ্যে একজনের তোলা ছবি দেখে ওই বোটেই আব্দুল মান্নান ছিলেন সেটি শনাক্ত করেন তার মেয়ে চাদনী। চাদনী যাকে শনাক্ত করেন সে লোকটাই সকালে নদীতে ডুবে গেছে বলে শনাক্ত করে প্রত্যক্ষদর্শী তানভীর। 

গত ৩৩ ঘণ্টারও বেশি সময় নিখোঁজ রয়েছেন ৬৫ বছর বয়সী আব্দুল মান্নান। পেশায় তিনি একজন সারেং ছিলেন। এক বছর যাবত তিনি অবসরে আছেন। অসুস্থতাজনিত কারণে চট্টগ্রামে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। তার পরিবারে দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রী রয়েছে। এর মধ্যে দুই মেয়ে বিবাহিতা এবং ছেলে প্রবাসী।

সিভয়েস/এআরটি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়