Cvoice24.com

বকেয়া টাকা পরিশোধ না করেও যুবলীগ নেতা পেলেন নতুন বছরের ইজারা

সাতকানিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ৩ মে ২০২১
বকেয়া টাকা পরিশোধ না করেও যুবলীগ নেতা পেলেন নতুন বছরের ইজারা

সাতকানিয়ায় বাজার ইজারার দেড় কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে বাজারের পূর্ণমেয়াদ শেষ করেছেন ইজারাদার উত্তর সাতকানিয়া যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ওচমান আলী। উপজেলা প্রশাসন ইজারাদারকে বারবার অর্থ পরিশোধে তাগিদ দিলে একদিকে বকেয়া পরিশোধে গড়িমসি করছেন। অন্যদিকে লোকসান দেখিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে রাজস্ব মওকুফের আবেদন করেছেন। অথচ এ বছরও সর্বোচ্চ দর তুলে আবারও লুফে নিয়েছেন ইজারা। যদিও তিনি বকেয়া পরিশোধ না করায় ইজারা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারিয়েছেন তিনি। 

স্থানীয়রা বলছেন, বিষয়টি এখন অনেকটা প্রশাসন ও ইজারাদারের মধ্যে অর্থ লোপাটের খেলা।

জানা যায়, বিগত ১৪২৭ বাংলা সনে সাতকানিয়া উপজেলার অন্যান্য বাজারের মত জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে দরপত্র আহ্বান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সর্বোচ্চ দর দাতা হিসাবে বাজারের ইজারা পান যুবলীগ নেতা ওচমান আলী। বিগত বছর বাজারের পূর্ণাঙ্গ মূল্য নির্ধারণ হয় ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করেছেন ৬৫ লাখ টাকা। বাকি ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা পরিশোধ না করে বাজারের মেয়াদকাল শেষ করে ইজারা আদায় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন ইজারাদার। ইতোমধ্যে নতুন করে বাজারের ইজারা উত্তোলনের মেয়াদ শেষ হলে ১৪২৮ বাংলা সনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়ম অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে পুনরায় বাজারের দরপত্র আহ্বান করেন। 

সেখানেও ইজারাদার ওচমান আলী দরপত্র দাখিল করেন। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে তিনি পুনরায় কেরানীহাট বাজারের ইজারা পান। এতে সর্বসার্কুল্যে ইজারার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এরমধ্যে পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৯০ লাখ টাকা ইজারা বাবদ পরিশোধ করলেও পূর্বের ন্যায় বাকি টাকা এখনো অপরিশোধিত। পুনরায় ইজারা উত্তোলনের জন্য ইউএনও’র কোন কার্যাদেশ না পেয়ে (গত রবিবার ছিল কেরানীহাট বাজার বসার দিন) এখনো পর্যন্ত ইজারা উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন ওই যুবলীগ নেতা। এ নিয়ে সাতকানিয়ায় সর্বমহলে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা বলেন, ‘সরকারকে রাজস্ব না দিয়ে ফাঁকি দেয়া গর্হিত অপরাধ। রাজস্বের টাকা দিয়ে একটি রাষ্ট্রের অর্থনীতির ভীত মজবুত হয়। অথচ রাজস্বের টাকা পরিশোধ না করে কিভাবে তিনি যুবলীগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে পুনরায় ইজারা নেন? এবছরও কিভাবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ইজারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন যা অনেক অমিমাংসিত প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।’ এছাড়া পুরো রাজস্ব ফাঁকির এ কার্যক্রমের সাথে জড়িত চক্রটিকে খুঁজে বের করারও দাবি জানান তিনি। 

এ বিষয়ে জানতে ইজারাদার ওচমান আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে বাজারের ইজারা উত্তোলনে লোকসান হওয়ায় ১৪২৭ বাংলা সনের টাকা মওকুফের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করেছি। আবেদনের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না আসায় এখনো বকেয়াগুলো পরিশোধ করা হয়নি।’ 

বিগত বছর ও চলতি বছরের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ না করে কিভাবে ইজারা আদায় অব্যাহত রেখেছেন এমন প্রশ্নে ওচমান আলী বলেন, ‘চলতি বছরও করোনার কারণে অফিসিয়াল কাজ চলেনি। এবারও যেহেতু ৯০ লাখ টাকার পে-অর্ডার দেয়া আছে, তাই রানিং ইজারাদার হিসেবে ইজারা উত্তোলন করছি।’ কিন্তু গত বছর করোনার লোকসান গুনেও গেল বছরের কম বেশি টাকা দিয়ে পুনরায় ইজারা নিয়েছেন এ প্রশ্নের জবাব ছিল অস্পষ্ট।

সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপি বলেন, ‘এ বিষয়ে ইউএনও সাহেবকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। শুনেছি তিনি (ইউএনও) ইজারাদারকে চিঠি দিয়েছেন টাকা পরিশোধের জন্য।’ 

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কেরানীহাট বাজারের ইজারাদারকে বকেয়া পরিশোধের জন্য ইতোমধ্যে ৩টি চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি এখনো চিঠির জবাব দেয়নি।’ বকেয়া পরিশোধ না করে পুনরায় ইজারা উত্তোলনের বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়