Cvoice24.com

সীতাকুণ্ডে বৃষ্টির পানিতে ভাসছে শ্রেণিকক্ষ ও অফিস

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:০৫, ২০ জুন ২০২২
সীতাকুণ্ডে বৃষ্টির পানিতে ভাসছে শ্রেণিকক্ষ ও অফিস

অস্থায়ী ভবনে ক্লাস করতে গিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছে সীতাকুণ্ড উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের মধ্যেরদারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টি হলেই পানি পড়ছে শ্রেণিকক্ষে। এছাড়া ভাঙা বেড়ার ফাঁক দিয়ে শ্রেণিকক্ষে যখন তখন ঢুকে পড়ে কুকুর, ছাগল। স্থান সংকুলান না হওয়ায় সব শিক্ষার্থীদের একসাথে পাঠদান করাতে পারছেন না শিক্ষকরা। ফলে পালাক্রমে পাঠদান করাতে হচ্ছে।

সোমবার (২০ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষ থেকেই ভাঙা বেড়ার ফাঁক দিয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছে। একটু বৃষ্টিতেই অনবরত পানি পড়ছে সবকটি শ্রেণিকক্ষে। শ্রেণিকক্ষের এক পাশ বৃষ্টিকে ছেড়ে দিয়ে অন্যপাশে গাদাগাদি করে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। তিনটি মাত্র শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলছে। তিনটি কক্ষেই সমান হারে পানি পড়ছে, মেঝেতেও জমে রয়েছে পানি। এছাড়া বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে শৌচাগার ও বিশুদ্ধ পানি সংকট নিয়ে। অস্থায়ী ভবনে কোন শৌচাগার না থাকায় স্কুলের পাশে এক বাড়ির শৌচাগার ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় এই প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বেশ কয়েকজন অভিভাবক। 

তারা বলেন, বাচ্চাদের টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজন হলে তারা ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হয়। পাশের যে বাড়ির টয়লেট শিক্ষকরা ব্যবহার করেন সেই বাড়ির লোকেরা অনেক সময় বাচ্চাদের টয়লেট ব্যবহারে বাধা দেয়। এছাড়াও অস্থায়ী এই ভবনে নেই কোন টিউবওয়েল।

উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এমডিএসপির (মাল্টিপারপাস ডাইজেষ্টার শেল্টার প্রকল্প) আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ আসে বিদ্যালয়টিসহ উপজেলায় মোট ছয়টি সাইক্লোন শেল্টার কাম বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য। কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন। দরপত্রের শর্তানুযায়ী যতদিন ভবনের কাজ শেষ না হয় ততদিন অস্থায়ী ভবনে পাঠদান করাবেন শিক্ষকরা। এজন্য মানসম্মত একটি অস্থায়ী ভবন করে দেবেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল হাসান কেনু বলেন, অস্থায়ী এই ভবনটি অত্যন্ত নিম্নমানের সরঞ্জমাদি দিয়ে তৈরি করার কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। অবর্ণনীয় দুর্দশায় আছি আমরা। বিদ্যালয়ের পরিবেশ ভাষায় প্রকাশ করার মত না। নিরাপত্তার অভাবে অভিভাবকরা তাদের বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে চাননা। শৌচাগার না থাকায় পার্শ্ববর্তী এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত শৌচাগার ব্যবহার করতে হচ্ছে আমাদের। তাদের বাড়িতে তিন পরিবারের ব্যবহারের জন্য একটি মাত্র শৌচাগার। স্থানীয় চেয়ারম্যানের অনুরোধে তারা সেটি আমাদের ব্যবহারের অনুমতি দিলেও, এ নিয়ে অনেক সময় আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে অনেক শিশু ঝরে পড়ার আশংকা প্রকাশ করেন তিনি। 

স্থানীয় চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম নিজামী বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। ঠিকাদার ইচ্ছামতো কাজ করবে এই কারণে বাচ্চারা কষ্ট পাবে এটা মেনে নেওয়া যায়না। এ ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরোচ্ছোফা বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাদের অবগত করার সাথে সাথে আমরা পরিদর্শন করেছি। অস্থায়ী ভবনের পরিবেশ পাঠদানের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। এটিকে পাঠদানের উপযোগী করতে এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ারকে আমরা জানিয়েছি। তবে আপাতত শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি মহানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা করার কথা ভাবছি আমরা।

উপজেলা এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা বলেন, বিষয়টি জানার সাথে সাথে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কন্সট্রাকশনের ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা রোজার আগেই বিদ্যালয়ের সভাপতিকে মেরামতের জন্য ১৫ হাজার টাকা দিয়ে রেখেছি। বাকি যা লাগে তাও দিব বলেছি। কিন্তু উনারা মেরামত করেনি। এখন যেহেতু আমরা জেনেছি মেরামতের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. আলাউদ্দিন বলেন, মেরামত কাজে খরচ হবে অনেক বেশি। ১৫ হাজার টাকায় কিছু হবেনা সেটা আমরা তাদের জানিয়েছি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়