Cvoice24.com

পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের নাম সরকারের খাতায় রয়েছে: তথ্যমন্ত্রী

সিভয়েস প্রতিবেদক ও সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ১ জুলাই ২০২২
পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের নাম সরকারের খাতায় রয়েছে: তথ্যমন্ত্রী

চট্টগ্রামের পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের নাম সরকারের খাতায় রয়েছে উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, অনেক পাহাড় কাটা হয়েছে। তবে পাহাড়ের পাদদেশে যারা বসতি করেছেন; তাদের মধ্যে খুব বেশিজন পাহাড় কাটার সঙ্গে যুক্ত না। তাদেরকে এখানে যারা নিয়ে এসেছে; তারাই পাহাড় কাটার সঙ্গে যুক্ত। তাদের নাম সরকারের খাতায় আছে। 

শুক্রবার (১ জুলাই) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুরে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত স্থান এবং ওই এলাকার পাহাড় পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় আর কেউ যাতে পাহাড় না কাটে সেজন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বায়েজিদ লিংক রোড করার সময় সিডিএ’র পাহাড় কাটা সমীচীন হয়নি মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সিডিএ যে পাহাড় কেটে বায়েজিদ লিংক রোড করেছে; তা মোটেও সমীচীন হয়নি। সেটি বেআইনিভাবে করার কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের (সিডিএ) দশ কোটি টাকা জরিমানা করেছে। রোডের জন্য ওভাবে পাহাড় কাটা সমীচীন নয়।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সৌন্দর্য হচ্ছে পাহাড়। তাই এখানে আমরা যখন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবো তখন অবশিষ্ট পাহাড়গুলো অর্থাৎ একটু একটু দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোকে অক্ষুণ্ন রেখে এবং প্রচুর বনায়ন করে প্রকল্প গড়া হবে। এছাড়া পানির ছড়া প্রকৃতি যেন নিজের মতো করে চলতে পারে সেটিও নিশ্চিত করা হবে। 

হাসান মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রাম নগর, পাহাড়, সমুদ্র, নদীর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে চমৎকার এ শহর। কিন্তু দিনে দিনে এটার সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা যখন ছোট ছিলাম; তখন চট্টগ্রাম শহরে একটাই স্টেডিয়াম ছিল। স্টেডিয়ামে খেলার সময় ধারা ভাষ্যকার বলতেন, চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামটা একটি অপূর্ব সুন্দর জায়গায় অবস্থিত। স্টেডিয়ামের মিডিয়া বক্স থেকে দূরের পাহাড়ের চূড়ায় ছোট ছোট বাংলো দেখা যায়। সেই সময় তাই ছিল। তবে এখনও বাংলোগুলো আছে; কিন্তু এগুলো আর দেখা যায় না। কারণ অনেকগুলো পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। অথচ পুরো জায়গাটা পাহাড় ছিল; এগুলো নির্বিচারে ধ্বংস করা হয়েছে। নানা সমিতির নামে নানাভাবে এ পাহাড় কাটা হয়েছে। 

চট্টগ্রাম শহরে প্রশাসনিক কার্যক্রম করার জন্য বর্ধিত চাহিদা সেটি নিরসন করলে জায়গার খুব অভাব পড়ে। এটির জন্য আমাদের কর্ণফুলীর ওপারে যেতে হয়। হাটাহাজারীর পাহাড়ে যেতে হয় অথবা আরও দূরে বোয়ালখালী কিংবা পটিয়ায় যেতে হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক জায়গা খোঁজাখুঁজি করেছি। কয়েকমাস আগে ডিসি সাহেবকে বায়েজিদ লিংক রোডের পাশের খালি জায়গায় প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ করার জন্য একটা প্ল্যান করার কথা বলেছিলাম।  এরপরই তিনি জায়গা খুঁজে বের করেন। কিন্তু আমার ধারণায় ছিল না এখানে এতো খাস জমি আছে। ১৪শ’-১৫শ’ একর খাস জমি এ মৌজাতে আছে। পেছনে আরও আছে ১৭শ’একরের মতো। এখানে নির্বিঘ্নে বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে।

জেলখানা স্থানান্তরের কথা তুলে ধরে হাসান মাহমুদ বলেন, জঙ্গল ছলিমপুর পাহাড়ের ১৪শ’ একর জায়াগায় অনেক কিছুই করা যায়। এখানে হাসপাতাল, স্টেডিয়াম, পার্ক অনেক কিছুই করা যাবে। তাই এখন জরুরিভাবে এখানে নোটিশ দেওয়া দরকার। যাতে আর কেউ কোনোভাবে জায়গা দখল না করে। প্রশাসন সেই নোটিশ দিয়ে দিবে। এখানে কেউ জায়গা দখল করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা আগে দখল করে ইতোমধ্যে বসতি স্থাপন করেছেন; তাদের অবশ্যই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। জায়গা দখল করা অবশ্যই বে-আইনি; তাই জায়গা দখল করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান মন্ত্রী।

এর আগে, গত ২৩ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুর এলাকায় অবৈধ বসবাসকারীদের সরাতে নতুন এক মহাপরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। সেখানে গত এক যুগ ধরে দুর্গম এ পাহাড় কেটে ‘দুর্ভেদ্য সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলেছে দখলদাররা। পুরো এলাকাকে ১১টি ‘সমাজে’ ভাগ করে ‘চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদ’ নামে সমিতি বানিয়ে ২০ হাজার মানুষকে অবৈধ বসতি গড়ার ‘লাইসেন্স’ দিয়েছে দখলদাররা। উচ্ছেদে গেলে ‘পুর্নবাসনের’ দোহাই দিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে প্রশাসনকে বাধা দেয় তারা।

তাই ওই এলাকার অবৈধ বসবাসকারীদের সরাতে জেলা প্রশাসক বলেছিছেন, জঙ্গল ছলিমপুরে স্পোর্টস কমপ্লেক্স, কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তর করা হবে, মডেল মসজিদ হবে, আইকনিক মসজিদ, জাতীয় তথ্যকেন্দ্র, নভোথিয়েটার ও ইকোপার্ক হবে। জঙ্গল ছলিমপুরে কেউ অবৈধভাবে থাকতে পারবে না। জঙ্গল ছলিমপুর নিয়ে যারা মামলা মোকদ্দমা করছেন তাদের বলতে চাই, সরকারের চেয়ে ক্ষমতাশালী কেউ নেই। জঙ্গল ছলিমপুরে যারা বসবাস করছেন, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।

সূত্র জানায়, সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুরে নানাভাবে পাহাড় কাটছে প্রভাবশালীরা। পাহাড় কেটে প্লট বিক্রি করে বসতি গড়ে তোলা হয়। এর বাইরে বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে এবং ঢালুতে ঘর তৈরি করে অবৈধভাবে বসবাস করে নিম্ন আয়ের মানুষ। জঙ্গল ছলিমপুরের পাহাড়ে ৩০ হাজার পরিবার পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০১৭ সালের ২১ জুলাই এই জঙ্গল ছলিমপুরে পাহাড়ধসে একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হন।

বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যানে জানা যায়, সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা, পৌর সদর, কুমিরা, সোনাইছড়ি ও ছলিমপুর ইউনিয়নে বনভূমি রয়েছে ১৬ হাজার ২৪৪ একর। এর মধ্যে বেদখলে রয়েছে সাড়ে ৫ হাজার একর বনভূমি। যার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন লক্ষাধিক মানুষ। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে এসব পাহাড় দখল করে প্লট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। আর ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ স্থান হিসেবে উপকূলীয় এলাকার লোকজন অল্প দামে এসব জায়গা কিনে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসতি গড়ে বসবাস করছেন।

-সিভয়েস/এমএম/এসআই

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়