Cvoice24.com

প্রভাবশালী দখলদারদের ‘হটিয়ে’ জঙ্গল সলিমপুরে সরকারি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা ডিসির

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:২২, ২০ জুলাই ২০২২
প্রভাবশালী দখলদারদের ‘হটিয়ে’ জঙ্গল সলিমপুরে সরকারি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা ডিসির

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের প্রভাবশালী দখলদারদের ‘হটিয়ে’ সেখানে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এর মধ্যেই প্রকল্পের সমীক্ষার কাজ শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী দেড়-দু’মাসের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যানের কাজ শেষ হবে। এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চাইলে সে যতই প্রভাবশালী হোক না কেন টিকবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন জেলা প্রশাসক।

বুধবার (২০ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘জঙ্গল সলিমপুরে প্রায় ৩ হাজার ১শ’ একর জমি রয়েছে। এ জমি উদ্ধার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে যারা প্রকৃত অর্থে ভূমিহীন এবং সেখানে আশ্রয় নিয়েছে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। একইসঙ্গে যারা লালদিয়ার চর থেকে যারা উচ্ছেদ হয়েছে; যারা যুগ যুগ ধরে সেখানে বসবাস করতো তাদেরও পুনর্বাসন করা হবে। তাদের জন্য একটা ফান্ড পেয়েছি; তা দিয়ে লালদিয়ার চর থেকে যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন হয়েছেন তাদের পুনর্বাসন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।’

তবে এক্ষেত্রে ভূমিদস্যুদের বিষয়টি কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশে আমরা যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি, সেখানে কোনো পাহাড় খেকো বা ভূমিদস্যুকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা আমাদের কাজ করে যাব। সেখানে পাহাড় ব্যবস্থাপনার অফিস, পরিবেশের অফিস, আনসার ক্যাম্প থাকবে। একই সঙ্গে এলাকাটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হবে।’

প্রভাবশালী যেই হোক টিকতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকার যখন চাই এ প্রকল্প করবে; তখন সে যেই (প্রভাবশালী) হোক না কেন টিকতে পারবে না। আমরা পজিশনে নেমেছি এবং এ মাস্টারপ্ল্যানের কাজ আগামী দেড়-দু মাসের মধ্যে শেষ করা হবে। অলরেডি সার্ভে করার কাজ শুরু হয়েছে; তা শেষ করে সরকারে কাছে ডিপিবি করে জমা দেওয়া হবে এবং দ্রুতই সেখানে এ প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’

মমিনুর রহমান আরও বলেন, ‘সেখানকার বিষয়ে সবকিছু স্টাডি করা হয়েছে। এবার যেটা ধরেছি; একদম গোড়া থেকে ধরেছি। ৩ হাজার ১শ’ একর জমিতে কোথায় কি হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে সরকারের প্রজেক্টে সেটা বাস্তবায়ন করা হবে। জঙ্গল সলিমপুরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, স্পোর্টস ভিলেজ, রিফ্রেশনাল জোন, রিসোর্ট, এন্টারটেইনমেন্ট পার্ক, সাফারী পার্ক করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘যারা পরিবেশের আইন ও অন্যান্য আইনগুলো মেনে ইন্ডাস্ট্রি পরিচালনা করবে তাদের জন্য থাকবে গ্রীন ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন। এছাড়া সেখানে চট্টগ্রামের হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, ক্যান্সার হাসপাতাল, জাতীয় তথ্য ভবন, নভোথিয়েটার, আইকোনিক মসজিদ, রেডিও বাংলাদেশের উচ্চশক্তি সম্পন্ন প্রেরণ কেন্দ্রসহ আরও অনেকগুলো প্রকল্প সেখানে বাস্তবায়ন করা হবে।’

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যারা এখানে প্রকৃত অর্থে ভূমিহীন ও যাদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হবে; তাদের সরকারের অর্থায়নে পুনর্বাসন করা হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ছয় হাজার একর অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। সবাইকে সেতুর অর্থায়নে পুনর্বাসন করা হয়েছে। সেভাবে এখানেও খাস জমি থেকে যাদের উচ্ছেদ করা হবে তাদের সরকারের অর্থায়নে পুনর্বাসন করা হবে। আর যারা ভূমিদস্যু তাদের কোনো পুনর্বাসন করার প্রশ্নই আসে না। তাদের উচ্ছেদই করা হবে।’

সূত্র জানায়, সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে নানাভাবে পাহাড় কাটছে প্রভাবশালীরা। পাহাড় কেটে প্লট বিক্রি করা হয়। বসতি গড়ে তোলা হয়। এর বাইরে বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে এবং ঢালুতে ঘর তৈরি করে অবৈধভাবে বসবাস করে নিম্ন আয়ের মানুষ। জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়ে ৩০ হাজার পরিবার পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০১৭ সালের ২১ জুলাই এই জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড়ধসে একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হন।

বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যানে জানা যায়, সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা, পৌর সদর, কুমিরা, সোনাইছড়ি ও সলিমপুর ইউনিয়নে বনভূমি রয়েছে ১৬ হাজার ২৪৪ একর। এর মধ্যে বেদখলে রয়েছে সাড়ে ৫ হাজার একর বনভূমি। যার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন লক্ষাধিক মানুষ। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে এসব পাহাড় দখল করে প্লট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। আর ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ স্থান হিসেবে উপকূলীয় এলাকার লোকজন অল্প দামে এসব জায়গা কিনে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসতি গড়ে বসবাস করছেন।

-সিভয়েস/এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়