Cvoice24.com

বাধা ডিঙিয়ে জঙ্গল সলিমপুরে উচ্ছেদ চালালো জেলা প্রশাসন 

সিভয়েস প্রতিবেদক, জঙ্গল সলিমপুর থেকে

প্রকাশিত: ১৯:০৩, ২ আগস্ট ২০২২
বাধা ডিঙিয়ে জঙ্গল সলিমপুরে উচ্ছেদ চালালো জেলা প্রশাসন 

ছবি: সিভয়েস

অবৈধ দখলদারদের বাধা ডিঙিয়ে জঙ্গল সলিমপুরে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে যায় জেলা প্রশাসন। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, উচ্ছেদ অভিযান শেষে ফেরার পথে প্রায় ১ হাজার স্থানীয় এলাকাবাসী আলীনগরের তিনটি পয়েন্টে মানব প্রাচীর করে গড়ে তুলে। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সেই প্রাচীর ডিঙিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। পরে জঙ্গল সলিমপুরের জন্য সাজানো মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন কর্মকর্তারা।

এসময় নোটিশ না দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর কারণে স্থানীয় এক রিকশাচালক বলেন, ‘আমি পেশায় এক রিকশাচালক। আমার ঘরটি ভাঙ্গার আগে এক মিনিটও সময় দিল না। অথচ দুই সপ্তাহ আগে ভূমিমন্ত্রী বলছে আমাদের কিছু হবে না। আমাদের পুনর্বাসন করা হবে। আমাদের উপর কোন হয়রানি করা হবে না। এই অবস্থায় আগে থেকে কোন নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হলো। প্রশাসন আজকে গাড়ি করে যে রাস্তা দিয়ে গেল তা ভূমিহীনদের অবদান।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘর উচ্ছেদের সময় ভয়ে এখানের এক মহিলা স্টোক করেছে। উনি এখন মৃত্যু শয্যায়। সরকারের কাছে এর বিচার চাই। আমরা এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাব। আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘অভিযানে গেলে সংঘবদ্ধ চক্র কিছু নারীকে দিয়ে একটা সিনক্রিয়েট করার চেষ্টা করে থাকে সব সময়। এবারও তারা এরকম করার চেষ্টা করেছে। তবে কোনরকম বল প্রয়োগ করা ছাড়াই আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি।‘

এর আগে, মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগর এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। অভিযানের নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।

অভিযানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরের ৩ হাজার ১শ’ একর এলাকায় পাহাড়ি এবং টিলা শ্রেণির খাস জমি রয়েছে। এই পাহাড় এবং টিলা কেটে একদল ভূমিদস্যূ ও সন্ত্রাসী অবৈধ বসতি স্থাপন করছে। পাশাপাশি দোতলা, চারতলা বিশিষ্ট স্ট্রাকচারও গড়ে তুলছে। কেবলমাত্র ভূমি দখলের উদ্দেশ্যে তারা একটি নিজস্ব সিস্টেম চালু করেছে। তারা জমির মালিকানা হস্তান্তর করছে এবং বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করেছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সন্ত্রাসীরা এসে এখানে আশ্রয় নিচ্ছে। ভূমিদস্যূ ইয়াসিন, মশিউররা তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার এখানে একটি মহাপরিকল্পনা করেছে। যেটুকু পাহাড় কাটা হয়েছে তার পরিবেশ প্রতিবেশকে ঠিক রেখে অবশিষ্ট অংশটুকুতে যে পাহাড় এবং টিলা রয়েছে তা আমরা সংরক্ষণ করবো। যে জায়গাটুকুর গাছ কেটে সবুজায়ন ধ্বংস করা হয়েছে সেখানে আমরা ২ লাখের মতো বনজ, ফলজ ও ওষুধি গাছের চারা রোপন করবো। তথ্যমন্ত্রী নিজেই এসে এসব চারা রোপনে অংশ নেবেন।’

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা এ ৩ হাজার ১শ’ একর জমিতে চট্টগ্রামবাসীর জন্য সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সে মহাপরিকল্পনার অধিকাংশ জুড়ে থাকবে ইকোপার্ক, রিসোর্ট, সাফারি পার্ক ইত্যাদি। এখানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাছাড়া এখানে স্পোর্ট ভিলেজ, আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন হাসপাতাল, সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্থাপনা, তথ্য ভবন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হবে। যাতে করে যে টিলা ও পাহাড়টুকু কাটা হয়েছে তা বাদে অবশিষ্ট অংশটুকু আমরা সংরক্ষণ করতে পারে। এখানে যেসব স্থাপনা হবে সবকিছুই পরিবেশ, প্রতিবেশ ঠিক রেখেই বাস্তবায়ন করা হবে।’
 
মমিনুর রহমান বলেন, ‘মাস্টার প্ল্যান প্রনয়নের কাজে আমরা হাত দিয়েছি, সার্ভে চলছে। আগামী এক মাসের মধ্যে জঙ্গল সলিমপুরের মাস্টারপ্ল্যান সরকারের কাছে উপস্থাপন করতে পারবো। প্রকৃত অর্থে যারা একেবারেই ভূমিহীন, নিঃস্ব আমরা তাদেরকে সরকারি আশ্রয়ণ কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেকের পূনর্বাসন করবো। আর যারা ভূমিদস্যূ, এখানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ঘর ভাড়া দিচ্ছে, জমি হস্তান্তর করছে। তাদের কাউকেই আমরা ছাড় দেবো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা এখানে ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছে তাদেরকে যত দ্রুত সম্ভব আমরা এখান থেকে সরিয়ে নেবো। গত দশ বছরে কেবল চট্টগ্রাম জেলায় ২২৭ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা পাহাড়ধসে আর একটি মৃত্যুও দেখতে চাই না।’

এসময় জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, সরকারি খাস জমিতে পাহাড়খেকো ইয়াসিন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা অনেকদিন যাবৎ পাহাড় কেটে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে। যারা এখানে এসব স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসা করছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কুখ্যাত পাহাড়খেকো সন্ত্রাসী ইয়াসিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে জেলহাজতে আছে। তার সাঙ্গপাঙ্গ যারা আছে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রত্যেককেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে এবং পাহাড় কেটে যে অপরাধ তারা করেছে এবং অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছে, এজন্য তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এস এম রশিদুল হক আরও বলেন, এখানে বিভিন্ন সরকারি দফতর স্থাপিত হবে। এই এলাকাটি চমৎকার একটি এলাকায় পরিণত হবে। এখানে কাজের ব্যপ্তি অনেক বেশি। অনেক এলাকা জুড়ে অবৈধ স্থাপনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এসব জায়গায় কাজ করতে হলে প্রত্যেক বাহিনীর সহযোগিতা লাগবে। এখানে জেলা পুলিশের ৬০ সদস্য ও র‌্যাব, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা এসেছেন। বর্তমানে নিরাপত্তা চৌকিতে ৮ জন সদস্য আছে। এর বাইরে এখানে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ও একটি র‌্যাবের ক্যাম্পের জন্য জায়গা নির্ধারণ করেছি। জেলা প্রশাসন চূড়ান্তভাবে জায়গা দিলে আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে পুলিশ ক্যাম্প বিশালাকারে স্থাপন করবো।

অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল এ) মাসুদ কামাল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মো. শাহাদাত হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সীতাকুণ্ড মো. আশরাফুল আলম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নু এমং মারমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সীতাকুন্ড সার্কেল আশরাফুল করিম, অফিসার্স ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ।

-সিভয়েস/এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়