Cvoice24.com

প্রশাসনকে আটকাতে জঙ্গল সলিমপুরের রাস্তায় ইয়াছিন বাহিনীর ‘কোপ’

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:৪২, ৮ আগস্ট ২০২২
প্রশাসনকে আটকাতে জঙ্গল সলিমপুরের রাস্তায় ইয়াছিন বাহিনীর ‘কোপ’

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের স্বঘোষিত রাজ্য আলীনগরে প্রবেশের সড়ক কেটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে ইয়াসিনের সহযোগীরা। সড়কের অন্তত ৬টি পয়েন্টে ৩ ফুট গভীর ও ৮ ফুট প্রশস্ত করে কাটা হয়েছে। গত ২ আগষ্ট জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের পর এখানে প্রবেশের কয়েকটি সড়ক কেটে গর্ত করা হয়েছে, যাতে সরকারি কর্মকর্তারা সেখানে যেতে না পারেন।

তবে আগেও ‘আলীনগর’ বাংলাদেশ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন ছিল। দেশের কোন আইনই সেখানে কার্যকর ছিলনা। সেখানকার অধিবাসীরা চলত তাদের রাজা ইয়াসিন ও ফারুকের নিজস্ব আইনে। আলীনগরের প্রবেশের যেসব পথ ছিল সব পথেই সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করতেন তার নিজস্ব সিকিউরিটির সদস্যরা। বাইরের কোন লোক ভেতরে প্রবেশ করতে পারতেননা। ভেতর থেকেও কেউ বাইরে যেতে পারতেন না। বসবাসকারীদের কোন অতিথি আসলে তাদের ভোটার আাইডি কার্ড অথবা জন্ম নিবন্ধন কার্ড নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। জমা দিতে হত সাথে আনা এন্ড্রয়েড ফোন। এখানে বসবাসকারীদেরও কেউ এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারতেন না। আর যারা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা অর্থাৎ যারা জায়গা কিনে বসবাস করছেন তাদের ইয়াসিনের স্বাক্ষর করা বিশেষ পাস দেওয়া হত। পাস দেখিয়ে তারা ভেতর থেকে বাইরে ও  বাইরে থেকে ভেতরে আসতেন। এখানের কেউ কখনো থানা বা অন্য কোথাও কোন অভিযোগ নিয়ে যেতে পারতেন না। সেটা যত বড় অপরাধ হোকনা কেন বিচার হত ইয়াসিন ও ফারুকের ‘আদালতে’।

আলীনগরের সাবেক এক বাসিন্দা জানান, ইয়াসিন নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সন্দ্বীপ, বাশঁখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের এনে এখানে আশ্রয় দেন। তাদের নিয়ে গড়ে তুলেন নিজস্ব বাহিনী। তাদের কয়েকটা দলে ভাগ করা হয়। তবে প্রত্যেক দলের কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন ইয়াসিনের ঘনিষ্ট আত্মীয়রা। ইয়াসিনের ভাই ফারুক, বোনের স্বামী মোখলেস, চার ভাগিনা আনোয়ার, হাসান, সোহেল ও আল আমিন ছিলেন এক একটা দলের কমান্ডার। এছাড়া দুই বছর আগে এখানে আনা হয় বেশ কিছু রোহিঙ্গাকেও। প্রায় ৩০জনের মতো রোহিঙ্গাকে রাখা হয়েছে আলীনগরের নিরাপত্তায়।

সম্প্রতি সরকার জঙ্গল সলিমপুরের খাস জমিতে বৃহৎ পরিকল্পনা করে। সেই অনুযায়ী তথ্যমন্ত্রীসহ কয়েকজন এমপি, সিটি মেয়র ও বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা একাধিকবার এই এলাকা পরিদর্শন করেন। তাতে ক্ষেপে গিয়ে গত ১৫ জুলাই সরকারি কর্মকর্তাদের সামনে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যকে বুকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর করে ইয়াসিন বাহিনী। এরপর আলোচনায় আসে ইয়াসিন ও তার ছোট ভাই ফারুক। এই ঘটনায় মামলা দায়ের হলে ১৮ জুলাই ইয়াসিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর দুই দফায় আলীনগরে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। প্রথম দিনের অভিযানে তিনটি মাটি কাটার স্ক্যাভেটর, ৬টি ড্রাম ট্রাক ও ১টি বড় ট্রাক জব্দ করে প্রশাসন। পরবর্তী অভিযানে ১৭৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়