Cvoice24.com

চবি ছাত্র অনিকের আত্মহত্যা আর্থিক অনটনে!

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ৩ জানুয়ারি ২০২২
চবি ছাত্র অনিকের আত্মহত্যা আর্থিক অনটনে!

আত্মহত্যা করা চবি ছাত্র অনিক

আর্থিক অনটনে পড়ে মানসিক বিষন্নতা থেকে চবি ছাত্র অনিক চাকমা আত্মহত্যা করতে পারে বলে ধারণা করছে তার সহপাঠীরা। সোমবার (৩ জানুয়ারি) অনিকের লাশ উদ্ধারের পর তার সহপাঠী ও কটেজের অন্যান্য বাসিন্দাদের মধ্যে আর্থিক অনটন নিয়েই আলোচনা চলছে। যদিও অনিকের রুম থেকে পাওয়া সুইসাইড নোটে আত্মহত্যার সুস্পষ্ট কোন কারণ উল্লেখ নেই। তবে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তিনি হতাশায় ভুগতেন বলে উল্লেখ করেছেন।

অনিকের সহপাঠী মেরিন সাইন্স বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী স্মরণ রাজবংশী বলেন, অনিকের সাথে আমার কথা হতো। তবে বেশি হতো না। সে সবার সাথে বেশি মিশতোও না। তার পারিবারিক আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। সে অনেকের কাছে ধারদেনা করেছিল। অনেকের দেনোগুলো পরিশোধও করতে পারেনি। পরিবারের কাছ থেকে আর্থিকভাবে তেমন সাপোর্ট না পাওয়ায় মানসিক ভাবে বিষন্নতায় ভুগতো অনিক।

কটেজের আরেক বাসিন্দা প্লাবণ চাকমা বলেন, আমার সঙ্গে তার প্রতিদিনই কথা হতো। গতকাল সন্ধ্যায়ও কথা হয়েছিল। সে অনেক আর্থিক সমস্যায় ছিল। হলের ডাইনিং এ খাওয়া-দাওয়া করার জন্যও তার টাকা ছিল না। পরিবারের কাছ থেকে তেমন আর্থিক সাপোর্টও পেতো না। ফলে অনেক বন্ধুদের কাছ থেকে ধারদেনা করে চলতো। এসব বিষয় নিয়ে সব সময় ডিপ্রেশনে থাকতো।

পালি বিভাগের এলি মারমা বলেন, অনিক আমাদের ফ্রেন্ড। সে তেমন কারো সাথে মিশতো না। এক ধরণের ডিপ্রেশন তার মধ্যে দেখা যেত। একাকী সময় কাটাতো বেশি।

সমাজতত্ত্ব বিভাগের রবি বিকাশ চাকমা বলেন, আমরা আদিবাসীরা ১৮-২০ সেশনের সবাই একসাথে নানা জায়গায় ঘুরতাম। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতাম। কিন্তু অনিক খু আমাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে ব বেশি আসতো না। তবে তার আর্থিক অবস্থা খুব দুর্বল ছিল এটা আমরা জানতাম।

অনিকের কটেজের বাসিন্দা ত্রিলক চাকমা বলেন, আমাদের কটেজের কারো সাথে তেমন কথা বলতো না অনিক। তবে গভীর রাত পর্যন্ত সে পড়াশোনা করে।

এস আলম কটেজের মালিক মো. শাহ আলম বলেন, ২০১৮ সাল থেকে অনিক এ কটেজে অবস্থান করছে। গতকাল (রোববার) সন্ধ্যায় আমার সাথে অনিকের কথা হয়। সে আমার সাথে হাসি মুখে কথা বলেছে। কোন অস্বাভাবিক আচরণ দেখিনি।

একই কটেজের বাসিন্দা রিপন চাকমা বলেন, অনিক সব সময় একা একা থাকতো। কারো রসাথে বেশি কথাও বলতো না। পারিবারিকভাবে আর্থিক সমস্যায় ছিল সে। গতকাল রাতে আমার সাথে ওয়াসরুমে যাওয়ার সময় দেখা হয়েছিল। সেখানে কোন কথা হয়নি। পরে সে ঘুমাতে যায়। প্রতিদিন সকাল ৮-৯টার দিকে ঘুম থেকে উঠলেও আজ না উঠায় সাড়ে দশটার দিকে আমরা তাকে ডাকাডাকি করেও কোন সাড়া পাইনি। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। পরে জালানার ফাঁক দিয়ে দেখার পর একজন স্যারকে জানায়। তিনি প্রক্টর অফিসে খবর দেন।

এদিকে আত্মহননকারী অনিকের রুমে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। সেখানে আত্মহত্যার কথাটি তিনি স্পষ্ট কিছু উল্লেখ করেননি। তবে তিনি সত্য কথা বলার কারণে নানা সময় সমস্যার পড়েছেন এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছিলেন বলে ডিপ্রেশনে ভুগতেন বলে উল্লেখ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কবির হোসেন বলেন, সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় আমরা এক ছাত্রের লাশ উদ্ধার করেছি। রুমের দরজা বন্ধ ছিল। আমরা দরজা ভেঙ্গে লাশ উদ্ধার করি। হত্যা না আত্মহত্যা সেটা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা আত্মহত্যা বলে ধরে নিচ্ছি।

প্রসঙ্গত, সোমবার সকাল ১১টার দিকে শাহজালাল হলের বিপরীতে এস আলম কটেজের ২১২ নম্বর রুম থেকে দরজা ভেঙে সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়