Cvoice24.com

৯ বছর পর যুবলীগের পদের দৌড়ে চবি ছাত্রলীগের ১৭ নেতা

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ২১ এপ্রিল ২০২২
৯ বছর পর যুবলীগের পদের দৌড়ে চবি ছাত্রলীগের ১৭ নেতা

নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে যুবলীগ চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা শাখার নতুন কমিটি আসছে। ৯ বছর পর নেতৃত্ব পরিবর্তনের আভাস পেয়ে নড়েচড়ে বসছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক একঝাঁক নেতারাও। তিন সাংগঠনিক ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ৬টি পদ পেতে চান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগের ১৭ ছাত্রনেতা। গত ২ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা, দক্ষিণ জেলা ও মহানগর যুবলীগের পদ প্রত্যাশী এসব নেতারা কেন্দ্রীয় দপ্তরে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম যুবলীগকে ঢেলে সাজানো এবং তরুণদের নেতৃত্বে আনার সিদ্ধান্ত হলে সাবেক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্য থেকে শীর্ষ পদে জায়গা পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা আলোচনায় রয়েছেন।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। ৩ মাসের কমিটি ৮ বছর পার করেছে সংঘর্ষ ও সংঘাতের মধ্যদিয়ে। ১১ বছর আগে দক্ষিণ জেলা ও ৯ বছর আগে উত্তর জেলা যুবলীগের কমিটি গঠিত হয়। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দেয় ক্ষোভ আর হতাশা। ঈদের পর সম্মেলনের মধ্যদিয়ে যুবলীগের তিন সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি করার কথা রয়েছে।

এর মধ্যে গত ২ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম উত্তর জেলা, দক্ষিণ জেলা ও মহানগর যুবলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় যুবলীগ। এতে তিন ইউনিটের শীর্ষ ছয় পদের জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন ১৭৭ জন। নতুন কমিটিতে স্থান পেতে বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। তদবির করছেন নীতিনির্ধারকদের কাছে। 

জানা যায়, যুবলীগের তিন ইউনিটে শীর্ষ দুই পদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ জন সাবেক ছাত্র নেতারাও আছেন। শুধুমাত্র একজন সভাপতি প্রার্থী হলেও বাকি ১৬ জনই সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী।

চবি থেকে যারা পদপ্রত্যাশী:

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী একজন হচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাসির হায়দার বাবুল।

এছাড়া চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে পদপ্রত্যাশী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত সাবেক ছাত্রনেতা। এরা হচ্ছেন— বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেদ চৌধুরী, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল মনছুর জামশেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন, সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য মো. সাহেদ সরওয়ার, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল আসাদ ও সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তফা সাইফুল ইসলাম।

দক্ষিণ জেলা যুবলীগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদপ্রত্যাশী তিনজন। এরা হচ্ছেন— কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহসম্পাদক নাছির উদ্দিন মিন্টু, সাবেক সহ-সভাপতি আরমান হেলানী ও সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল মালেক।

মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী প্রার্থী হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় ছাত্রনেতা। এরা হচ্ছেন— চট্টগ্রাম মহানগর যুব মহিলা লীগের সাংগঠিক সম্পাদক কামরুন্নাহার ঝর্না, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল এহসান, সাবেক সভাপতি মো. আলমগীর টিপু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ফজলে রাব্বি সুজন, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সাইফুল আলম লিমন ও সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম রসুল নিশান।

এদিকে দীর্ঘসময় পর নগর যুবলীগের নেতৃত্বে পরিবর্তনের আভাস পেয়ে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের মধ্যে। রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা এসব নেতাকর্মীরা যুবলীগের মাধ্যমে নেতৃত্বে আসার স্বপ্ন দেখছেন।

উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেদ চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, 'স্বাধীনতার পরপরই দেশগড়ার ক্ষেত্রে সেই যুব সমাজকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, সে চিন্তা থেকেই আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘যুবলীগ’ গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। আমরা দায়িত্ব পেলে বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ রচনার রাজনীতিতে যুবলীগ গড়ে তুলবো। চট্টগ্রামে যুবলীগকে মেধা-মননে যুগোপযোগীভাবে ঢেলে সাজাতে আমরা বদ্ধপরিকর।'

মহানগর যুবলীগে পদ প্রত্যাশী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ফজলে রাব্বি সুজন সিভয়েসকে বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমাদের শপথ; মুজিববাদকে সমুন্নত রেখে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি বিজ্ঞান ও মেধাভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, শোষণমুক্ত, মানবিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে যুবলীগ ভূমিকা রাখবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল কাজে লাগাতে এবং সারা দেশে যে অবকাঠামোগত উন্নায়ন হচ্ছে তা টেকসই করতে দক্ষ মানবসম্পদের কোন বিকল্প নেই। আমি চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলে সবাইকে নিয়ে একসাথে দেশ ও দশের ভালোর জন্য কাজ করবো।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দু’টি বলয়ে বিভক্ত। এর মধ্যে একটি প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মহিউদ্দিনের অবর্তমানে এই বলয়কে ছায়া দিচ্ছেন তার সন্তান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এছাড়া নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে আরেকটি বলয় সক্রিয় আছে। এর বাইরে সাংসদ ও জ্যেষ্ঠ্ নেতাদের অনুসারী হিসেবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রুপ থাকলেও মূল রাজনীতি বিভক্ত নওফেল-নাছির বলয়েই। 

তবে তারুণ্যনির্ভর, ত্যাগী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতৃত্ব চাচ্ছে দলের হাইকমান্ড। ফলে চট্টগ্রাম যুবলীগের ছয় শীর্ষ পদ থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িতরা। তাদের পরিবর্তে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়