Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড

চবিতে তিন যুগ পর ছাত্রলীগের হল কমিটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

চবি প্রতিনিধি:

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
চবিতে তিন যুগ পর ছাত্রলীগের হল কমিটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ছয় বছর পর গত জুলাইয়ে ঘোষণা করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে মোট সদস্য হবেন ১৫১ জন। তবে গঠনতন্ত্র ভেঙ্গে চার শতাধিক সদস্যের বিশাল কমিটি গঠন করা হলেও সন্তুষ্ট হননি নেতাকর্মীরা। কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপগুলো। চবি ছাত্রলীগের এমন টালমাটাল অবস্থায় দীর্ঘ তিন যুগ পর হল এবং অনুষদগুলোর কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সভাপতি-সম্পাদক। 

বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক এহছান আহমেদ প্রত্যয়ের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আগ্রহী পদপ্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়েছে। এতে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। 

জানা যায়, বিগত তিন যুগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে সাতটি। প্রতিটি কমিটিই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হল ও অনুষদ কমিটি ঘোষণা দিলেও সফল হতে পারেননি। শুধু ছাত্রলীগই নয়, বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদলও হল ও অনুষদ কমিটি গঠন করেও ব্যর্থ। এবার প্রায় তিন যুগ পরে হলেও আবারো হল ও অনুষদ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ছাত্রলীগের বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি।

এদিকে হল ও অনুষদ কমিটিকে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের ‘মুলা ঝুলানো’ সিস্টেম ও তালবাহানা বলে দাবি করছেন নেতাকর্মীরা।

শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রকিবুল হাসান দিনার সিভয়েসকে বলেন, ‘যোগ্য ও পরিশ্রমীরা বাদ পড়েছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। অথচ কমিটি পুনর্গঠন না করে হল-অনুষদ কমিটি করতে চাচ্ছে দুই নেতা। বিষয়টি বাদ পড়া ত্যাগী কর্মীদের সাথে প্রতারণার শামিল।’

তিনি বলেন, 'হল ও অনুষদ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াকে আমরাও সাধুবাদ জানাবো। তবে যেসব সিনিয়র নেতা যারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বাদ পড়ছে তাদেরকে পদায়নের পর। কারণ তারাতো হল ও অনুষদ কমিটিতে আসবে না। তাদের সাথে তালবাহানা করেছে সভাপতি ও সম্পাদক। আমরা চাই পূর্ণাঙ্গ কমিটি বর্ধিত করে তারপর হল-অনুষদ কমিটি করা হোক। মূলত কমিটি বর্ধিত করতে চলমান আন্দোলনকে ধামাচাপা দিতে দুই নেতা এমন ছল ছাতুরীর আশ্রয় নিয়েছেন।’

ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মী আছে কয়েক হাজার। যতোই চেষ্টা করি সবাইকে তো কমিটিতে সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যোগ্যতার ভিত্তিতে কমিটি দিতে। তবু অনেকে আন্দোলন করেছে পদের দাবিতে। তাই সবকিছু বিবেচনা করে এবং বাদপড়া যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে আমরা হল ফ্যাকাল্টি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে চবি হল কমিটি গঠন করা হয়নি। এ দীর্ঘ সময় পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার পাশাপাশি হল ও অনুষদগুলোর কমিটি গঠন করবো। সামনে নির্বাচন। কর্মীদের উৎসাহিত করতে ও তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে হল ও অনুষদ কমিটি গঠন করা হবে।’

পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে রেজাউল হক বলেন, বিতর্কিত কেউ থাকলে প্রমাণসহ দিতে বলেছি। আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। শুধু মৌখিক অভিযোগে তো আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। আর কমিটি তো আমরাই গঠন করি না, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও দলীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পরামর্শের ভিত্তিতে কমিটি হয়।’

প্রসঙ্গত, চবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে গত ৩১ জুলাই দিনগত রাতে। কমিটি ঘোষণার পরপরই রাস্তায় নামেন শাখা ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপ বিজয়। এছাড়া কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে গত ১০ আগস্ট চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে শাখা ছাত্রলীগের সাত উপ-গ্রুপ। উপ-গ্রুপগুলো হলো- ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স), বাংলার মুখ, রেড সিগনাল, একাকার, কনকর্ড, এপিটাফ ও উল্কা। গ্রুপগুলো সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

সম্মেলনে চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেন কমিটিতে পদ পাওয়া উপ-গ্রুপগুলোর ৯৪ জন নেতাকর্মী। এছাড়া উত্থাপনকৃত তিন দফা দাবি মানা না হলে ‘শোকাবহ আগস্ট’ মাসের পর লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেন নেতারা।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে মানববন্ধন করে এই সাত উপ-গ্রুপ। এ সময় তারা কিছু দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- ত্যাগী ও পরিশ্রমী কর্মীদের মূল্যায়ন করে কমিটিতে অন্তর্ভুক্তকরণ, কমিটিতে পদপ্রাপ্ত নেতাদের যোগ্যতা অনুযায়ী যোগ্যস্থানে ক্রমানুসারে পুনরায় মূল্যায়ন ও কমিটিতে পদপ্রাপ্ত বিবাহিত, চাকরিজীবী ও দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ।

একই দাবিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করে উপ-গ্রুপগুলো। এছাড়া গত রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন পদবঞ্চিতরা।

তাদের দাবি পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অনেকেরই ছাত্রত্ব নেই, কেউ বিবাহিত, কেউ বা করছেন চাকরি। কারো নামে আবার আছে একাধিক মামলাও। অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজির। ছাত্রী হেনস্তায় বহিষ্কার হওয়া কয়েকজনও পদ পেয়েছেন কমিটিতে। এমন বিতর্কিত নেতাদের নিয়ে ‘ঢাউস কমিটি’ গঠনের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন সাবেক ছাত্রলীগের নেতারাও।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়