Cvoice24.com

প্রশাসনের অনিয়মে অসন্তোষ চবি শিক্ষক সমিতি

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:০৪, ২১ মার্চ ২০২৩
প্রশাসনের অনিয়মে অসন্তোষ চবি শিক্ষক সমিতি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ২০টির মতো প্রশাসনিক পদ থেকে দায়িত্বরত শিক্ষকদের একযোগে পদত্যাগের ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে দাবি করছেন শিক্ষক সমিতি। এই গণপদত্যাগ প্রশাসনের অভ্যন্তরে চলমান অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ বলে মত দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি প্রশাসনের নানা অনিয়ম, নিয়মবিরুদ্ধ ও অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ডে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে শিক্ষক নেতারা।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) এক বিবৃতিতে এসব তুলে ধরেন চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকি ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক।

বিবৃতিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে নানা অপকৌশলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ লঙ্ঘন করার অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ইতোমধ্যে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কিত ‘নিয়োগ বাণিজ্য' বিষয়ক কয়েকটি অডিও কেলেঙ্কারিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অডিও কেলেঙ্কারি ও এ সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদে অন্যদের সঙ্গে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারির নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বিনষ্ট হয়েছে চরমভাবে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এ বিষয়ে কার্যকর কোনো আইনানুগ প্রক্রিয়া অদ্যাবধি গ্রহণ করা হয়নি।

চবি শিক্ষক সমিতি গত প্রায় এক বছর ধরে মৌখিক ও লিখিতভাবে মাননীয় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য বরাবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এসকল নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো সত্ত্বেও চবি শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন দাবী এবং গৃহীত কর্মসূচির প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শনপূর্বক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ লঙ্ঘন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অব্যাহতভাবে বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির সুপারিশ ছাড়া বিজ্ঞাপন, বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত নিয়োগ, প্রচিলিত নিয়ম ভঙ্গ করে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড গঠন, কয়েকজন শিক্ষককে বেশ কয়েকটি বিভাগের (এমনকি বিষয় সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্ত্বেও) নিয়োগ বোর্ডের সদস্য মনোনয়ন, তথ্য জালিয়াতির মত অভিযোগে প্রার্থীর আবেদনপত্র বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটি সুপারিশ না করা সত্ত্বেও আইন বহির্ভূতভাবে নিয়োগ দানের জন্য আলম সুপারিশের মতো অগ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ, নিয়ম লঙ্ঘন করে সদ্য বিদায়ী রেজিস্ট্রারকে (ভারপ্রাপ্ত) শুদ্ধাচার পুরষ্কার প্রদান, বাণিজ্য অনুষদের নির্বাচিত ডিনের সাথে উপাচার্যের অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং নজিরবিহীনভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান, বিভিন্ন বিভাগে বছরের পর বছর কর্মচারি নিয়োগ বন্ধ রেখে শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করার অপচেষ্টা, উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিতর্কিত ব্যক্তিদের দিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ বোর্ড গঠন, কৌশলে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে বিভিন্ন পর্ষদে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০টির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদ থেকে দায়িত্বরত শিক্ষকদের একযোগে পদত্যাগ করার মতো নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে, যা প্রশাসনের অভ্যন্তরে চলমান অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ বলে প্রতীয়মান হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ১৯৭৩ এর আইন লঙ্ঘন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন পদ থেকে একযোগে পদত্যাগের মতো ঘটনা জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক, সামাজিক মাধ্যমসহ নানা পত্রপত্রিকায় ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক সমাজের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষক সমিতির সভায় প্রশাসনের নিয়মবিরুদ্ধ ও অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ডে চবি শিক্ষক সমিতি চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। শিক্ষক সমিতি অবিলম্বে এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির অবসান চায়। শিক্ষক সমিতি মনে করে বিভিন্ন পদ থেকে দায়িত্বরত শিক্ষকগণের গণ পদত্যাগে বিদ্যমান অচলাবস্থার অবসান ঘটবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭৩ এর আইন যথাযথভাবে অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজমান চরম অস্থিরতা, আইন ও রীতিবিরুদ্ধ কর্মকাণ্ড থেকে উত্তরণের জন্য প্রশাসনের উচ্চপদে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত ১৯৭৩ এর আইন যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জোর দাবী জানানো হয়। অন্যথায় কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এর দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়