Cvoice24.com

চবিতে সংঘর্ষে অস্ত্রের সম্ভার, অভিযানে গায়েব

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ২ জুন ২০২৩
চবিতে সংঘর্ষে অস্ত্রের সম্ভার, অভিযানে গায়েব

নিজেদের মধ্যকার অন্তঃকোন্দল, আধিপত্য আর শক্তিমত্তাকে জিইয়ে রাখতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক হলগুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নানান ধরনের দেশীয় অস্ত্রের সম্ভার। ‘পান থেকে চুন খসলেই’ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক গ্রুপগুলো। এসব সংঘর্ষে প্রতিপক্ষকে আক্রমণের জন্য রামদা, কিরিচ, কিংবা চাকু-চাপাতি দিয়ে অস্ত্রের মহড়া দেয় বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা।

সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আমানত ও শাহজালাল হলে অবস্থানরত শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন সিক্সটি নাইন ও সিএফসি সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় লোহার চাপাতি, হকিস্টিক ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায় উভয় গ্রুপকে। কিন্তু রাতে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বড়ি হলগুলোতে অভিযান চালালেও গায়ের হয়ে যায় এসব ধারালো অস্ত্র। ঘণ্টাব্যাপী চলা এই তল্লাশিতে পাওয়া যায় কয়েকটা লাঠি, রড়, ক্রিকেট খেলার স্টাম্প আর জং ধরা দা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দিতে তল্লাশি চালিয়ে লাঠিঁসোটা ও হাতেগোনা কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারে সীমাবদ্ধ থাকে প্রশাসনের অভিযান। অথচ এসব ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গত চার বছরে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী। এসব ঘটনায় অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।  এমনকি সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক রমযান হোসাইনকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষের কর্মীরা। 

এদিকে হলে অভিযান চলার এক ঘণ্টা আগে সব নেতাকর্মীরা জেনে যায় অভিযানের বিষয়ে। আগে থেকে সতর্ক থেকে এসব ধারালো অস্ত্র সরিয়ে নেয়া হয় হল থেকে। এতে প্রশাসন অভিযান চলালে তেমন কিছু মেলে না।

নাম প্রকাশে অনিশ্চুক ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী সিভয়েসকে জানিয়েছেন, হলে তল্লাশি চলার আগে গ্রুপের নেতাদের অবগত করে থাকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পরে গ্রুপের নেতারা কর্মীদের জানিয়ে সতর্ক করে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, 'বৃহস্পতিবার পুলিশের সহায়তায় আমরা অভিযান চালিয়ে কিছু দেশীয় উদ্ধার করেছি। তবে আমরা চাই ক্যাম্পাসে সবসময় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকুক।  প্রশাসন অপরাধীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। আমরা অস্ত্রধারী কাউকে ছাড় দিব না।'

অভিযানের চালার আগেই সবাই কিভাবে জানে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংঘর্ষের পর বিভিন্ন সময় হলগুলোতে অভিযান চালানো হয়েছে। এখান থেকেও হয়তো অস্ত্রধারীরা সতর্ক থাকে। তবে আমরা সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দোষীদের সনাক্ত করার চেষ্টা করছি।


৪ বছরে তিন শতাধিক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার:

সংঘর্ষের পরে অভিযান চালিয়ে গত চার বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলগুলো থেকে তিন শতাধিক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কোনো গ্রুপ-উপগ্রুপ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেও চোখে পড়ছে দেশীয় অস্ত্রের সমাহার।

পুুলিশ জানায়, অভিযানে উদ্ধার হওয়া বেশিরভাগ অস্ত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়ায় অপরাধীদের সনাক্ত করা যায়নি।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে একটি দুটি নয় বর্তমানে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নয়টি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এগুলো বিভক্ত রয়েছে দুটি ধারায়। একপক্ষ শিক্ষাউপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। অপর পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। যদিও শিক্ষায় উপমন্ত্রী শুরু থেকে তাঁর কোন গ্রুপ নেই বলে জানিয়ে আসছেন। এসব গ্রুপ নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে হলগুলোতে প্রতিনিয়ত ঢুকছে নানা অস্ত্র।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়