চবিতে তাণ্ডবের ঘটনায় নীরব প্রশাসন, ৪৮ ঘণ্টায়ও হয়নি তদন্ত কমিটি
চবি প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শাটল ট্রেনে দুর্ঘটনার পর ক্যাম্পাস জুড়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও হয়নি কোনো তদন্ত কমিটি। তবে তান্ডবের ঘটনায় ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপ–গ্রুপের নেতাকর্মীরাও জড়িত ছিল গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় তিনটি মামলা করার কথা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানালে সেই মামলা নিয়ে চলছে লুকোচুরি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের ফতেয়াবাদ স্টেশনের কাছাকাছি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ১৬ শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনার খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে রাত ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক অবরোধ করে প্রশাসনের পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দেন। এ সময় জিরো পয়েন্টের পুলিশ ফাঁড়িতে ভাঙচুর করা হয়।
পরে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আগুন জ্বালিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় ব্যর্থতার দায়ে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। পরে উপাচার্যের তিনতলা বাসভবনে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট দপ্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস, মাইক্রোবাস, মিনি ট্রাকসহ অন্তত ৫৫টি গাড়ি ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত পৌনে ১টার দিকে ২ নম্বর গেট হয়ে র্যাব ও পুলিশের বিশাল বহর প্রবেশ করে। তবে তারা ঘটনাস্থলে আসেনি। এর আগেই শিক্ষার্থীরা বিভক্ত হয়ে আন্দোলন থেকে সরে যান।
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ক্যাম্পাসে ভাঙচুর চালানোকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে প্রশাসন। অভিযোগ উঠেছে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকটি উপগ্রুপের নেতাকর্মীরা জড়িত। নিয়োগ, টেন্ডার, এক নেতার বিরুদ্ধে প্রশাসনের মামলা, নেতাকর্মীদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে চলা ক্ষোভ থেকে তারা এ হামলা চালিয়েছেন।
ভাঙচুরের পরেরদিন গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের এ ঘটনায় তিনটি মামলা কথা উপাচার্য জানালেও তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। এমনকি পুলিশ কিংবা প্রক্টর-কেউই মামলার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করতে পারেননি। এ ঘটনায় ৪৮ ঘণ্টা পার হলে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, প্রশাসন অপরাধীকে আড়াল করতে সময় ক্ষেপণ করছেন।
চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, কোনো একটা ঘটনা ঘটলে শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়া দেখায়, কিন্তু প্রশাসনকে এসব মোকাবিলা করার জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকতে হয়। কিন্তু প্রশাসন অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। তিন ঘণ্টার ভাঙচুর চালালেও প্রশাসনের কেউ ঘটনাস্থলে ছিল না। এমন পরিবেশ তৈরি করেছে যেন সবকিছু ভেঙে ফেলতে মৌন সম্মতি দিয়েছে প্রশাসন।
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, গতকাল (শুক্রবার) গণমাধ্যমে শুনেছি মামলা করেছে প্রশাসন। কিন্তু এখন শুনতেছি মামলার বিষয়টি ধোঁয়াশা। আবার এ ঘটনায় কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। আসলে এ ঘটনায় প্রশাসন যে অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, মনে হয় না তদন্ত কমিটি গঠন করে কিছু হবে। প্রশাসনে এক ভঙ্গুর পরিস্থিতি বিরাজমান এখন।
এদিকে, সার্বিক বিষয়ে জানতে শনিবার বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কারো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এক প্রকার নীরব তারা। কেউ ফোন রিসিভ করছেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড.নূরুল আজিম সিকদারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। কিছুক্ষণ পর তার ফোন সুইচ অফ দেখা যায়।
সহকারী প্রক্টর ড. মোরশেদুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন মামলার বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তদন্ত কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, এটি প্রক্রিয়াধীন আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ ও হাটহাজারী থানার ওসি মো: মনিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে কারো কোনো সাড়া মেলেনি।