আমলাতন্ত্র দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়: অধ্যাপক আব্দুল মান্নান
চবি প্রতিনিধি
আমলাতন্ত্র কায়েম দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাচিন্তা ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, বঙ্গবন্ধুর অনেক গুণের সাথে একটি বড় গুণ ছিল। তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে যোগ্য ব্যক্তিদের পদায়ন করতেন। বর্তমানের মতো তখন দেশে আমলা বা প্রশাসকদের লাগামহীন দৌরাত্ম্য ছিল না। তবে হ্যাঁ, আমলা ছাড়া কোনো দেশ চলবে না। কিন্তু সেই আমলা যখন দেশে আমলাতন্ত্র কায়েম করে তখন দেশের সর্বনাশের শুরু হয়। সেটি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের ২৩ বছরে দেখেছেন, উপলব্ধি করেছেন, তার শিকারও হয়েছেন। পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থার প্রধান কারণ দেশটির সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের রাষ্ট্রীয় কাজে অযৌক্তিকভাবে হস্তক্ষেপ।
শিক্ষার গুরুত্ব আলোচনা করতে গিয়ে ইউজিসির সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, কুদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনে বলা হয়েছিল দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা হবে একমুখী। শিক্ষার মূল লক্ষ্য হবে শুধু শিক্ষিত বা অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ তৈরি করা নয়, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি করা। প্রাথমিক শিক্ষা হবে একমুখী। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর বছর পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে। হয়েছে অনেক উল্টো। এখন দেশে সনাতনি প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রকারের ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা। এই সব স্কুলের অধিকাংশে শিক্ষার্থীদের বাঙালির ইতিহাস বা সংস্কৃতি শেখার কোন সুযোগ নেই। এখানে শেখানো হয় না কেমন করে এলো বাংলাদেশ। একাধিক প্রজন্মতো বেড়ে উঠেছে একাত্তরে বাঙালি কার সাথে যুদ্ধ করেছিল, তা না জেনে।
অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, বঙ্গবন্ধু এটি সবসময় উপলব্ধি করতেন একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বুনিয়াদ হচ্ছে তার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা। এই গুরুত্বপূর্ণ ভিত শক্ত না হলে পরবর্তী ধাপগুলো নড়বড়ে হতে বাধ্য। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে ৩৭ হাজার প্রাথমিক স্কুলে প্রায় এক লক্ষ শিক্ষক শিক্ষকতা করতেন। এই সব স্কুলের বেশিরভাগই ছিল বেসরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত। বঙ্গবন্ধু শুরুতেই এই সব স্কুল জাতীয়করণ করে দিলেন।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম আফরিন ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহকারী অধ্যাপক (ইংরেজি) কাজী তাসলিমা নাসরিন জেরিনের সঞ্চালনায় শুরু হয় সেমিনারটি। এতে সভাপতিত্ব করেন সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ। তিনি সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন।
সেমিনারে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন চিটাগাং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহফুজুল হক চৌধুরী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র হয়। তিনি চেয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তৈরী হবে শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী। আজকে দেশের ১৮ কোটি জনগণ শিক্ষিত হলে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণ হবে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে শিক্ষার উপর জোর দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে চবি উপাচার্য আরও বলেন, আমি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আহ্বান করবো তারা যেন প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার শিক্ষা দেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে ও চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী।