চবির আবাসিক শিক্ষার্থীরা কষ্টে, কবে খুলবে হল
চবি প্রতিনিধি
ফারিহা ইয়াসমিনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত এক গ্রামে। ছয় সদস্যের পরিবার তার। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারটির ভরণপোষণ ও অন্যান্য খরচ মিটে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বাবার সামান্য আয়ে। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও ঠিকমতো সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খাওয়া বাবা আর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মায়ের সকল অভাব অনটন দূর করার স্বপ্ন নিয়েই মেয়েটি ভর্তি হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি)।
ফারিহার মতো হাজারো শিক্ষার্থী প্রতিবছর বুকভরা আশা আর বড় হওয়ার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে ভর্তি হয় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এই বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রয়োজনের তুলনায় আবাসিক হলে সিট সংকটের কারণে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাদের। রাজনৈতিকভাবে কিংবা প্রভোস্ট ও বিভাগের চেয়ারম্যানের সুপারিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে একটি সিট বরাদ্দ পাওয়া গেলে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন তারা। তবে সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং হল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর বিপাকে পড়েন আবাসিক হলে থাকা এসব শিক্ষার্থীরা।
এরপর থেকে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ। পদত্যাগ করা উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোতে এখনো কাউকে নিয়োগ না দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত অচল হয়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে হলগুলোও খুলে দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে দূর-দূরন্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল বন্ধ দেওয়ায় পরও বাড়িতে যেতে পারেননি। আবার টিউশনির কারণেও অনেককে অবস্থান করতে হয়েছে চট্টগ্রাম শহরে।
জানতে চাইলে মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন ফাহিম বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে দিনাজপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসে ভর্তি হই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভেবেছিলাম হলে একটা সিট পাবো। পড়াশোনার ভালো পরিবেশ পাবো। মানসম্মত খাবার পাবো। পড়াশোনার পাশাপাশি বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ঘুরেফিরে জ্ঞান শেয়ার করে সমৃদ্ধ হবো। তবে এর কিছুই হলো না। শাহ আমানত হলে উঠলাম। হলের খাবারের মানও তত ভালো না। তার ওপর পারিবারিক আর্থিক অবস্থাও ভালো যাচ্ছিল না। টিউশনি করা শুরু করলাম। আন্দোলনের সময় হল ছেড়ে দিতে হলো। এখন টিউশনির কারণে চট্টগ্রাম শহরে আছি একজনের বাসায়। তবে এভাবে আর কতদিন থাকা যায়!’
একই শিক্ষাবর্ষের আরেক শিক্ষার্থী জি. এম রিয়াদ বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন আর আশা নিয়ে সাতক্ষীরা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি। নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেকেই চালাতে হয়। এজন্য কয়েকটা টিউশনি করাতাম। হল বন্ধ করে দেওয়ার পর বাড়িতে চলে আসি। এখনও হলে খোলেনি। কোথাও থাকার জায়গা না থাকায় চট্টগ্রামেও যেতে পারছি না। টিউশনিটা চলে গেলে আরও বিপদে পড়ে যাবো। অতিদ্রুত প্রশাসন নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেওয়া উচিত। না হয় দূর-দূরান্তের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।’