দাবির মুখে সেই ‘মুক্ত সংলাপ’ স্থগিত
একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. মইনুলের বিরুদ্ধে সমন্বয়ক রাসেলের এন্তার অভিযোগ
চবি প্রতিনিধি
শিক্ষাব্যবস্থা যারা ধ্বংস করেছেন সেই আওয়ামীপন্থিরাই আবার শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে সেটার আউটলাইন (রূপরেখা) তৈরি করছেন।-এমন মন্তব্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদের। বিশেষ করে রাসেল একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে তুললেন এন্তার অভিযোগ।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়ি ব্র্যাক সেন্টারে ‘কেমন শিক্ষা ব্যবস্থা চাই, কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই?’ শিরোনামে একটি মুক্ত সংলাপ হওয়ার কথা ছিল। অনুষ্ঠানটি বর্জন করে দুপুরে এক ফেসবুক লাইভে এসব কথা বলেন রাসেল আহমেদ। এদিকে রাসেল লাইভে এসে বক্তব্য দেওয়ার পর পরই ওই মুক্ত সংলাপ স্থগিত ঘোষণা করেন আয়োজকরা।
লাইভে রাসেল বলেন, ‘গতকাল চট্টগ্রামে একটা ধর্মীয় সংঘাত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। আলহামদুলিল্লাহ, এখন এটা নিয়ন্ত্রণে আছে। যেটা জানিয়ে রাখার জন্য লাইভে আসা সেটা হচ্ছে— আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে এ নিয়ে একটা মুক্ত সংলাপের আহ্বান করেছে আওয়ামী লীগের দালালেরা। আমরাও চাই মুক্ত সংলাপ হোক। বিশ্ববিদ্যালয় কেমন হবে, শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে, আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে এ নিয়ে সেমিনার হোক এবং সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকল ধরনের পেশাজীবীর অংশগ্রহণ থাকুক। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আওয়ামী লীগের দোসর শিক্ষক নগরের কাজীর দেউড়িতে একটা মুক্ত সংলাপের আহ্বান করেছে। অর্থাৎ কাজীর দেউড়ির আশপাশেই যেখানে গতকাল একটা সাম্প্রদায়িক সংঘাত হবার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। ঠিক সেই জায়গায় আওয়ামী একজন শিক্ষক মুক্ত সংলাপের আহ্বান করেছে।’
রাসেল আরও বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে আমরা স্বাধীনভাবে আমাদের মতামত ও চিন্তাধারা প্রকাশ করতে পারছি এবং আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে সেসব নিয়ে আলোচনা করতে পারছি। যারা এ আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনে ছিল ও নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকে না জানিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে এরকম সংলাপ আশা করতে পারি না। এটা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মইনুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগের হলুদ দলের আহ্বায়ক ছিলেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি-সেক্রেটারি ছিলেন এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনা কর্তৃক নিয়োগকৃত বিআইবিডিএমের ডিরেক্টর জেনারেল ছিলেন। এখন পর্যন্ত আওয়ামী মনোনীত সিলেকশন বোর্ডের সদস্য আছেন, আওয়ামী মনোনীত ইউজিসি অধ্যাপক।’
‘আওয়ামী, জেদি ও হিংসুটে শিক্ষক মইনুল বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ভিন্নমতের শিক্ষকদের হয়রানি করতেন’ অভিযোগ করে সমন্বয়ক রাসেল বলেন, ‘তিনি আওয়ামী সরকারের পক্ষে পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখে সবক দিতেন। অর্থাৎ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আস্থাভাজন একজন শিক্ষক যিনি কি-না মুক্ত সংলাপের আহ্বান করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে আহ্বানটা করেছেন, স্বাধীনতার নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের না জানিয়েই। অর্থাৎ গোপনে একটা মুক্ত সংলাপের আহ্বান করেছেন। প্রশ্ন থেকেই যায়, সেটা কার সাথে হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে।’
শিক্ষাব্যবস্থাকে যারা ধ্বংস করেছেন তারাই আবার শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে সেটার আউটলাইন তৈরি করতে চাচ্ছেন জানিয়ে রাসেল আহমেদ বলেন, ‘সকলের মতামতের স্বাধীনতা সরকার নিশ্চিত করছে। কিন্তু যারা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে তারাই যদি শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আবার আলোচনা করতে চায়, শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে তা নিয়ে সংলাপ করতে চায়, সেটা এক ধরনের স্ববিরোধিতা। আমরা এই মুক্ত সংলাপকে প্রত্যাখ্যান করছি। যারা গোপনে আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন তাদেরকে হুঁশিয়ার করে জানিয়ে দিতে চাই, আপনারা আওয়ামী লীগের দোসর হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবেন না। আপনারা সাবধান হয়ে যান।’