চবির হলে আসন বরাদ্দ
শিক্ষার্থীদের ভুলে ২য় মেধাতালিকা প্রকাশে বিলম্ব, দায় নিবে না প্রশাসন
রেফায়েত উল্যাহ রুপক, চবি
শিক্ষার্থীদের করা ভুলের কারণেই দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসন। যার দায় নিবে না কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যদি কোন কিছুতে ভুল হয়, সেটা নিষ্পত্তি করা হবে এবং এর দায়ভারও কর্তৃপক্ষ নিবে।
আইসিটি সেল এবং বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ অক্টোবর প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশের পর বিভিন্ন সমস্যা ও অভিযোগ নিয়ে প্রায় ৭০০টি আবেদন জমা পড়েছে। এগুলো সমাধান করে দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ করতে সময় লাগছে। শিক্ষার্থীদের প্রতিটি অভিযোগ আমলে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়।
এদিকে আবেদনের সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ত্রুটির কারণে অনেক অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল।
অভিযোগগুলো হলো-
যারা অভিযোগ করার সময় নিজের স্টুডেন্ট আইডি ভুল লিখেছেন অথবা লিখেননি, তাদের অভিযোগ বাতিল করা হয়েছে। অস্পষ্টতার কারণে অথবা বাংলা-ইংরেজির মিশ্রণের কারণে অভিযোগপত্রে যাদের স্টুডেন্ট আইডি পড়া যাচ্ছে না বা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না তাদের অভিযোগও বিবেচনায় নেয়া সম্ভব হয়নি। যারা অনলাইনে সিটের আবেদনের সময় স্টুডেন্ট আইডি, বিকাশ ট্রাঞ্জেকশন আইডি, বিকাশ ওয়ালেট নম্বর, ফোন নম্বর, শিক্ষাবর্ষ, বিভাগ/ইনস্টিটিউট/বিষয়ের নাম ইত্যাদি ভুল করে সংশোধনের জন্য অভিযোগ করেছেন, তাদের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি।
যেসব বিকাশ ওয়ালেট থেকে বহু সংখ্যক আবেদন ফি পেমেন্ট করা হয়েছে, কিন্তু রেফারেন্সে স্টুডেন্ট আইডি উল্লেখ করা হয়নি, সেসব পেমেন্ট কোন আবেদনের বিপরীতে করা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া অসম্ভব বিধায় এসব আবেদন অভিযোগ সত্ত্বেও নিষ্পত্তিযোগ্য নয়। যারা ১ম তালিকায় বা সংশোধিত তালিকায় (সোহরাওয়ার্দ্দী হল) আসন বরাদ্দ পাওয়া সত্ত্বেও অভিযোগ জমা দিয়েছেন, তাদের অভিযোগ বিবেচনায় নেয়া হয়নি।
মেধা তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও আসন বরাদ্দ না পাওয়ার অভিযোগ সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষ নিষ্পত্তি করবেন। একইভাবে যারা বিভিন্ন অপেক্ষমাণ তালিকায় আছেন, অপেক্ষামাণ তালিকা হতে আসন বরাদ্দ শুরু হওয়া পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করার অনুরোধ করা করেছে প্রশাসন।
যারা অনলাইনে আসন বরাদ্দের আবেদন করেননি কিন্তু অভিযোগ জমা দিয়েছেন, অথবা আবেদন ও অভিযোগের সময় ভিন্ন ভিন্ন আইডি ব্যবহার করেছেন, তারা হয় আবেদন করেননি অথবা অভিযোগ করেননি বলে ধরে নেয়া হয়েছে; এসব অভিযোগ নিষ্পত্তিযোগ্য নয়।
একবার অভিযোগ জমা দিলে পুনরায় অভিযোগ জমা না দেয়ার নির্দেশনা সত্বেও যারা একাধিক বা বারবার অভিযোগ জমা দিয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াকে ‘ফ্লাডিং’ করেছেন, এবং অন্যদের অভিযোগ নিষ্পত্তির কাজকে বিলম্বিত করেছেন, তাদের একাধিক অভিযোগসমূহ অধিকতর যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী পর্যায়ে নিষ্পত্তি করা হবে। মেধা তালিকায় যাদের আসন বরাদ্দ পাওয়ার সম্ভাবনা সত্ত্বেও বিভিন্ন কোটায় আবেদন করে সফটওয়্যার গ্লিচ এর জন্য যারা আগের মেধা তালিকায় বাদ পড়েছেন, তাদের আলাদা করে তালিকা প্রকাশ করা হবে না। তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজ নিজ আবেদনকৃত হলে আসনের জন্য বিবেচিত হবেন।
তবে শর্ত থাকে যে, (ক) নিজ নিজ আবেদনকৃত হলে নিজের বর্ষের মেধা তালিকার সর্বনিম্ন স্কোরের চেয়ে অধিক স্কোর হতে হবে, (খ) আবেদনে উল্লিখিত তথ্যাবলী সঠিক মর্মে হল কর্তৃপক্ষের যাচাইয়ে উর্ত্তীর্ণ হতে হবে, (গ) আসন খালি থাকা সাপেক্ষে হল কর্তৃপক্ষ বরাদ্দের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী হলে আসন বরাদ্দের ক্ষেত্রে FFQ1 ও FFQ2 আলাদাভাবে বিবেচিত হবে না। উভয় কোটাকে শুধুমাত্র FFQ হিসাবে বিবেচনা করা হবে। সেমিস্টার পদ্ধতির মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা আবেদনে ৯ম সেমিস্টারের পরিবর্তে ১ম সেমিস্টার উল্লেখ করেছিলেন এবং ভুল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন, তাদের বিষয়ে হল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বিবেচিত হবে। উল্লেখ থাকে যে, তারা আবেদনে ভুল করেছেন বলে বিবেচিত হবে।
দ্বিতীয় মেধাতালিকা দেওয়ার বিষয়ে চবির আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘কাল ও পরশু ২ দিনে যদি ১০ ঘণ্টা করে কাজ করার সময় পাই তাহলে পরদিন সম্ভাবনা আছে।’
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো.কামাল উদ্দিন বলেন, ‘যেসব অভিযোগগুলোতে শিক্ষার্থীরা ভুল করেছে এগুলোর দায়ভার তাদের। এগুলো নিষ্পত্তি করা হবে না। এসব বিষয়ে আবেদন ফর্মে আগেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আমাদের পক্ষ থেকে যদি কোন কিছুতে ভুল হয়, সেটা নিষ্পত্তি করা হবে এবং এর দায়ভার আমাদের।’
এর আগে দীর্ঘ ৮ বছর পর গত ৪ অক্টোবর আবাসিক হলগুলোতে আসন বরাদ্দ দিয়ে প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মেধাতালিকা প্রকাশের পরেই চবির আইসিটি সেলে নানা রকম অভিযোগ জমা দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২য় মেধাতালিকা দেওয়ার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে আবেদনের সময় বিভিন্ন ত্রুটিজনিত কারণে অনেকের অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।