চবিতে শাটলের শিডিউল বৃদ্ধি, সুবিধা পাচ্ছে ৮ হাজার শিক্ষার্থী
চবি প্রতিনিধি, সিভয়েস২৪
দীর্ঘ অপেক্ষার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শাটল ট্রেনের শিডিউল বৃদ্ধি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শুক্রবার (১ নভেম্বর) থেকে নতুন শিডিউলে চলাচল শুরু করেছে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান বাহন শাটল ট্রেন। এর ফলে ৭ থেকে ৮ হাজার শিক্ষার্থী নতুন করে যাতায়াত সুবিধা পাবে আশা সংশ্লিষ্টদের।
এখন দিনে ১৮ বার শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করছে ট্রেনগুলো। এর আগে ১৪ বার আসা-যাওয়া করতো এক জোড়া শাটল ট্রেন।
চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একমাত্র বাহন এই শাটল ট্রেন। ক্লাস শেষে বাসায় ফেরা, কিংবা টিউশন করাসহ যেকোনো কাজে শহরে যাতায়াত করতে নির্ভর হতে হয় এই শাটল ট্রেনের ওপরই। যার ফলে উপচেপড়া ভীড় ও অস্বস্থিকর পরিস্থিতির লেগেই থাকে।
তাই শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল শাটল ট্রেনের বগি ও সিডিউল বৃদ্ধির। কিন্তু প্রশাসনের প্রচেষ্টা থাকা সত্বেও এতদিন কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারণে সম্ভব হয়নি। নতুন প্রশাসন আসার পর এবার শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বাড়ানো হয়েছে শাটলের সিডিউল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা ১৯৬৬ সালে হলেও শাটলের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সালে। শাটলের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আজ অবধি ৪৪ বছর পেরিয়ে গেছে। গেল বছরগুলোতে জ্যামিতিক হারে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও শাটলের শিডিউল বাড়েনি।
এদিকে মাঝখানে দুই জোড়া ডেমু ট্রেন দেওয়া হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে রুটে। তবে সেটা বহু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালীন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চালু করা হয় ট্রেনগুলো। কিন্তু কিছুদিন চলার পর ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর থেকে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে বন্ধ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেই বন্ধের ৩৫ মাস পেরিয়ে গেলেও আর চালু হয়নি ডেমু ট্রেন। প্রশাসন কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও চলেনি ডেমু ট্রেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয় নতুন প্রশাসন আসার পরপরই শাটল ট্রেনের শিডিউল বৃদ্ধির উদ্যোগ হাতে নেয়। অবশেষে চলতি মাসের প্রথম দিনেই নতুন শিডিউলে শুরু হয় শাটল ট্রেনের যাত্রা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যাশা নতুন শিডিউলের ফলে ৭ থেকে ৮ হাজার শিক্ষার্থী নতুন করে যাতায়াত সুবিধা পাবে।
তবে নতুন শিডিউলকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
মনোবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রিয়াদ বলেন, ‘নতুন শিডিউলে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে সত্য তবে আমাদের যেহেতু পূর্ব থেকেই টিউশনি ও ক্লাস একটা নির্ধারিত সময়ে হতো এবং আমরা সেভাবে অভ্যস্ত ছিলাম। নতুন করে শিডিউল দেওয়ায় এখন মিলিয়ে নিতে একটু সমস্যা হবে। আরেকটু চিন্তাভাবনা করে শিডিউল দিলে সবার উপকার হতো।’
অন্যদিকে আরেকদল শিক্ষার্থী শাটল ট্রেনের শিডিউল বৃদ্ধিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম শিডিউল বৃদ্ধি নিয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করলেন এভাবে, ‘ইতিপূর্বে দীর্ঘদিন শিডিউল বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছিলাম কিন্তু আমাদের দাবি কর্ণপাত করা হয়নি। ফলে অনেক ভোগান্তির শিকার হয়েছি আমরা। এমনকি আমাদের শিক্ষার্থীদের রক্তও ঝরেছে। নতুন শিডিউলে আপাতত কিছু সমস্যা মনে হলেও কিছুদিনের মধ্যে আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাব। শাটল মানেই ভোগান্তি কথাটা হারিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে আমরা সাত জোড়া ট্রেনের শিডিউলের জায়গায় নয় জোড়া ট্রেন শিডিউল চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। এতে করে কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ হাজার শিক্ষার্থী নতুন করে যাতায়াত সুবিধা পাবে বলে আমরা আশা করি। তবে ডাবল লেন থাকলে আরও সুবিধা হতো। কিন্তু একটা লেইন তার ওপর চট্টগ্রাম টু কক্সবাজার, নাজিরহাট সহ বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন চলাচল করে। ফলে সবগুলো বিষয় বিবেচনায় রেখে আমাদের ট্রেনের শিডিউল মেলাতে হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যাতে শিক্ষার্থীদের সমস্যা না হয়।’