চবির ঝুলন্ত সেতুর সংস্কারে আলো
চবি প্রতিনিধি, সিভয়েস২৪

ঝুঁকি ও দুর্ঘটনার শঙ্কায় প্রায় ছয় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সৌন্দর্যবর্ধনের জন্যই নির্মাণ করা ঝুলন্ত সেতুটি। কিন্তু সংস্কারের নামে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় সেতুটি তার নিজের সৌন্দর্যটাই হারিয়েছে। তবে আশা কথা, এটা নিয়ে কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, দ্রুত এটি সংস্কার করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। তাহলে আগের সৌন্দর্য ফিরে পাবে বিশ্ববিদ্যালয়।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নান্দনিকতা বাড়াতে চবি সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের পাশে খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল ঝুলন্ত সেতুটি। প্রয়াত উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ দায়িত্বে থাকাকালীন রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুর আদলে ২০০৯ সালে নির্মাণ করেন বিশেষ এই সেতু। কিন্তু ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আগে সংস্কারের নামে সেতুটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর মাঝে ৪ জন উপাচার্য আসা-যাওয়া করলেও আর খোলা হয়নি। তার মধ্যে প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার আগে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কাঁটাতারে বাঁধা হয় সেতুটি।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনীয় স্থাপনাগুলোর মধ্যে ঝুলন্ত সেতু ছিল অন্যতম আকর্ষণ। এই সেতু নির্মাণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পেয়েছিল, তেমনি সমাজবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের প্রশাসনিক ভবনে যাতায়াত করাটা সহজ হয়েছিল। সেতুতে থাকতো নবীন শিক্ষার্থী আর দর্শনার্থীদের ভিড় এবং হিড়িক পড়তো ছবি তেলার। কিন্তু বর্তমানে সেটি ধ্বংসপ্রায়।
সম্প্রতি ঝুলন্ত সেতু ঘুরে দেখা যায়, জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে একসময়ের নান্দনিক সেতুটি। দুই পাশের প্রবেশপথে কয়েকটা বাঁশ আর কাঁটাতার দিয়ে বেড়া দেওয়া সেতুটির চারপাশে লতাপাতা ঘিরে ধরেছে। দেখে মনে হবে, কোনও জঙ্গল। সেতুর কিছু কিছু জায়গায় মরিচা ধরে, শ্যাওলা জমে বিবর্ণ হয়ে আছে। আবার বেশ কিছু জায়গায় পাটাতনও ভেঙ্গে গেছে। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে একটি ঝুলন্ত সেতু আছে।
এদিকে সেতুর নির্মাণ সময়কালের বাজেট সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কোনও ধরনের নথিপত্র দেখাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চবি প্রকৌশল দফতরে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার কর্মকর্তারা একে-অপরকে দোষারোপ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা তাদের রেকর্ড খাতা খুঁজতে থাকেন। কিন্তু রেকর্ড খাতায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই পর্যন্ত সবধরনের তথ্য থাকলেও সেতু সম্পর্কিত কিছুই দেখাতে পারেননি তারা।
তবে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ঝুলন্ত সেতুর সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন চবির বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু তাহের। এজন্য তিনি ইউজিসি বরাবর বাজেটের জন্য আবেদনও করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০ তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি নিয়ে কাজ শুরু করেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এই কাজের জন্য ২০ লক্ষ টাকার অনুমোদন দিয়েছে। কাজটি বাস্তবায়নের জন্য চবির সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মজুমদারকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
চবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত হোসাইন ফাহিম বলেন, ‘মূলত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে ঝুলন্ত সেতুটি। প্রশাসন যদি একটু নজর দেয় তাহলে আমরা আমাদের আগের সেই ঝুলন্ত সেতুটিকে ফিরে পাবো। আমরা আশা করি বর্তমান প্রশাসন এ কাজ দ্রুতই শেষ করবেন।’
চবির নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আজিম সাগর বলেন, ‘আমার যখন ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসি, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কিত বইগুলোতে ঝুলন্ত ব্রিজের ছবি দেখে ভালো লেগেছিল। একদিন খুঁজতে গিয়ে দেখি ছবিতে দেখা এত সুন্দর ঝুলন্ত ব্রিজটা পড়ে আছে পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ অবস্থায়। তখন খুবই খারাপ লাগে। পরে শুনি সংস্কারের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কখনোই দেখলাম না সংস্কারের কাজ করতে।’
জানতে চাইলে চবির সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মজুমদার বলেন, ‘এখনো এটার টেকনিক্যাল দিকগুলো দেখা হচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষার মতো জনাকীর্ণ পরিস্থিতিতে এখানে অনেক লোকের সমাগম ঘটতে পারে। তখন একসাথে ৫০-১০০ জন মানুষও এটা দিয়ে যাতায়াত করবে। কাজটি ভালোভাবে করা না হলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আমরা এটি সময় নিয়ে করছি। টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস চলছে। তবে মনে হয় না ভর্তি পরীক্ষার আগে কাজটি শেষ করা যাবে। কারণ তাড়াহুড়ো করলে ঝুঁকি থেকে যেতে পারে।’
চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘এটার জন্য ইতোমধ্যে ২০ লক্ষ টাকা এসেছে। সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিনকে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। উনারা কাজ করছেন এ বিষয়ে। তবে সমস্যাটা হচ্ছে এটার জন্য যত টাকা দরকার এরচেয়ে কম বাজেট এসেছে। তারপরও এই বাজেট দিয়েই কাজ শেষ করার জন্য আমরা উনাদেরকে বলেছি। এখন উনারা বিষয়টা দেখবেন।
ক্যাম্পাস সব খবর