চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩১ প্রজাতির পাখি
রেফায়েত উল্যাহ রুপক, চবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা নিপুণ এক কারুকাজ। পাহাড়, আঁকাবাঁকা ঝর্ণা, সবুজ অরণ্যের মিতালী ক্যাম্পাসটিকে দিয়েছে বৈচিত্র্যময় আবহ।
ছোট শরালি, ডুবুরি, ছোট হরিয়াল, কানাকুকা, মালকোহা, পাপিয়া, পানকৌড়ি, সোনালি বাটান, নীলকান্ত, ফটিকজল, বড় হালতিসহ অসংখ্য পাখির কলকাকলিতে এখানে ভোর আসে। আবার দিনের শেষে সূর্য ডোবার পূর্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, ফরেস্ট্রি, বোটানিক্যাল গার্ডেন, দক্ষিণ ক্যাম্পাসসহ এই ২১শ একরে সন্ধ্যা নামে পাখিদের মুখরিত কলতানে।
সবুজ-শ্যামল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে যে কেউ পড়তে বাধ্য। সেই সঙ্গে বন্যপ্রাণী ও পাখিদের আবাসস্থল হওয়ায় এ ক্যাম্পাস সৃষ্টি করেছে বাড়তি আকর্ষণ।
চবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস-২০২১ উদযাপন অনুষ্ঠানে এক পরিসংখ্যান তুলে ধরেছিলেন প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক অধ্যাপক ড. মো. ফরিদ আহসান। সেখানে ২১৫ প্রজাতির পাখির কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। যার মাঝে আছে ১০৮টি গায়ক ও ১০৭টি অগায়ক পাখি। পাখিগুলোর মধ্যে ১৬০ প্রজাতির পাখির স্থায়ী নিবাস চবি ক্যাম্পাস। ৫১ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি হিসেবে বিভিন্ন মৌসুমে ক্যাম্পাসে আসে। বাকি চার প্রজাতির পাখি মাঝে মধ্যে পাওয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
তবে সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চবিতে ২২৫ প্রজাতির পাখির উল্লেখ আছে। ওই তথ্য অনুযায়ী সবশেষ বড় হালতি, মালয়ী নিশি-বক, দাগী পাখা চুটকি-লাটোরা পাখির খোঁজ মিলে চবি ক্যাম্পাসে। তবে সর্বশেষ আরও ৬ প্রজাতির পাখি দেখতে পান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখি নিয়ে কাজ করা চিটাগং ইউনিভার্সিটি বার্ড ক্লাব (সিইউবিএস) নামক একটি সংগঠনের সদস্য ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিদওয়ান মুহিব।
তিনি জানান, আমরা যারা বার্ড ক্লাবের সঙ্গে জড়িত তারা পাখির সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় বদ্ধপরিকর। পাখি শিকার রোধ, আবাস স্থলের সুরক্ষা, পাখি অসুস্থ হয়ে পড়লে সেটিকে সেবা দান এবং মানুষকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সচেতন করে তোলা। কিছু দিন আগে আমি তিনটি নতুন পাখি দেখতে পেয়েছি। সেগুলো হলো— আমুর শিলাফিদ্দা, পাহাড়ি নীল চুটকি এবং নীলগলা ফিদ্দা। এছাড়া গতবছর আরও তিনটি নতুন প্রজাতির পাখি আমার চোখে ধরা পড়ে। সেগুলো হলো—ধুপনি বক, বড় গুটি ঈগল, খয়রা কাস্তেচরা।
চিটাগং ইউনিভার্সিটি বার্ড ক্লাবের (সিইউবিএস) আহবায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাহমিদা ফাইজা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীর প্রতি আগ্রহ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করাই আমাদের কাজ। এছাড়া পাখিদের অভয়ারণ্য সংরক্ষণ ও তাদের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সংগঠনের সদস্যরা প্রায় সূর্য উঠার আগেই বেড়িয়ে পড়ে নিত্য নতুন পাখির খোঁজে। এছাড়া সামনে আমরা একটি বন্যপ্রাণী উৎসব আয়োজন করতে যাচ্ছি।’
বরেণ্য বন্যপ্রাণী গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফরিদ আহসান বলেন, ‘বন্যপ্রাণী ও পাখি সুরক্ষায় সচেতন হতে হবে। গাছপালার অবাধ নিধন থেকে বিরত থাকতে হবে। পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া একটি ইতিবাচক সংকেত। আমরা প্রতিবছর ৩ মার্চ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস পালন করি যা ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে।’
ক্যাম্পাস সব খবর