Cvoice24.com

কক্সবাজারে হুমকির পথে পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল

মহেশখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
কক্সবাজারে হুমকির পথে পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল

পরিযায়ী পাখি।

প্রকৃতিতে শীতের আমেজ শুরু হতে না হতেই শুরু হয় পরিযায়ী পাখির বিচরণ। উত্তরের হিমেল বাতাসে ভর করে ওরা ভিড় জমায় আমাদের দেশে। এসব পরিযায়ী পাখি হাজার হাজার মাইল দূরের পথ উড়ে আমাদের দেশে আসে তীব্র শীত ও খাদ্যাভাব থেকে বাঁচার জন্য। কেউ আসে উত্তরের দেশ হিমালয়, নেপাল, সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীনের জিনজিয়ান থেকে তো কেউ আসে ইউরোপ, রাশিয়া, সাইবেরিয়া ইত্যাদি অঞ্চল থেকে। 

মূলত সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে আসতে শুরু করে পরিযায়ী পাখির দল। কিন্তু দিন দিন এসব পাখির আবাসস্থলে মানুষের হানা পড়েছে। বন উজাড়, নদী, খাল ও জলাশয় ভরাট, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, পাখি শিকার ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাখির আবাসস্থল গুলো বিনষ্ট হচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- কক্সবাজারের টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়ায় সমুদ্রতীরবর্তী ছোট ছোট দ্বীপ গুলো পরিযায়ী পাখিদের বিচরণের উত্তম স্থান। সেখানে তারা নানান ছোট ছোট পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু এসব দ্বীপাঞ্চলে জলাশয়, খাল ও নদী ভরাট, বন উজাড়, পাখি শিকারীদের কবলে পড়ে জীবন শঙ্কায় পড়ে যায় পাখিগুলো। বর্তমানে অপরিকল্পিত উন্নয়নের কবলে পড়েছে পাখিদের বিচরণ স্থানগুলো। এমনকি শিকারীদের কবলে পড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অনেক পরিযায়ী পাখি। 

এদিকে সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়নের অর্থনৈতিক জোন এলাকা থেকে গায়ে ট্রান্সমিটার লাগানো একটি পরিযায়ী পাখি ধরা হয়। পাখির গায়ে ট্রান্সমিটারের খবরটি শুনে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। উৎসুক জনতা পাখিটি দেখতে ভীড় জমায়। 

ধলঘাটার ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান, ‘গ্রামের এক কিশোর ধলঘাটার সুইস গেইটের পাশে পাখিটিকে বসে থাকতে দেখে ধরে ফেলে। পরে পাখির গায়ে ডিজিটাল ডিভাইস লাগানো দেখে ওই কিশোর ভয়ে পাখিটি ইউনিয়ন পরিষদে হস্তান্তর করে।’

এদিকে পাখির ছবি দেখে ন্যাচার কনজারভেশন ম্যানেজম্যান্ট নামক প্রতিষ্ঠানের ন্যাচারাল রিসোর্স ম্যানেজম্যান্ট ম্যানেজার আবদুল কাইয়ুম জানিয়েছেন, ‘পাখিটির নাম ‘‘কালামাথা জৌরালি (Black-tailed Godwit)’’। এটি বিলুপ্ত প্রজাতির একটি পাখি। এ ধরণের পাখি মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ-হাঁসের চরসহ বিভিন্ন নির্জন সমুদ্র পাড়ের চরাঞ্চলে বসবাস করে। বিভিন্ন গবেষক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পাখির গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য এ ধরনের ট্রান্সমিটার লাগিয়ে থাকেন। 

ট্রান্সমিটার লাগানোর বিষয়ে তিনি আরো জানান- এই ধরণের ট্রান্সমিটার আমরা একটি কচ্ছপের গায়েও লাগিয়েছিলাম। প্রাথমিকভাবে দেখে পাখিটির গায়ে থাকা ট্রান্সমিটারটি ক্ষতিকর মনে হচ্ছেনা।’

পরবর্তীতে একইদিন রাত ১১ টায় পরিযায়ী পাখিটি বনবিভাগকে হস্তান্তর করে ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান। পাখিটি অফিসে নিয়ে আসার সময় পথেই মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুর রহমান। তিনি জানান- পরিযায়ী পাখিটি ধরা পড়ার পরপরই যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের দরকার ছিল। কিন্তু উৎসুক জনতার ভীড়ে পাখিটি ভয় পেয়ে যায়। আর গুজব ছড়ানোর কারণে পাখিটি বনবিভাগের অধীনে নিতে কালক্ষেপণ হয়। যার কারণে পাখিটি মারা যেতে পারে।

এদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রকল্প সহকারী মোহাম্মদ ফয়সাল জানিয়েছেন- পরিযায়ী পাখির গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য গবেষক দল পাখিদের গায়ে ট্রান্সমিটার ও পায়ে ট্যাগ লাগান। এই ধরণের পাখি না ধরা উচিত। এরা হাজার হাজার মাইল উড়ার পর ক্লান্ত হলে বিশ্রাম নেন। ওই সময় পাখি গুলো শিকারীরা ধরে। যে পাখিটি মারা গেছে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে সে পাখির গায়ে গবেষণার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শ্রীমান দিলীপ কুমার কর্তৃক ট্রান্সমিটার লাগানো হয়েছে। তারা এরকম ২০ টি পাখিতে ট্রান্সমিটার লাগিয়েছিল। 

এসময় তিনি আরো জানান- পরিযায়ী পাখির গায়ে বিভিন্ন ধরণের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থাকতে পারে। যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। পরিযায়ী পাখি স্পর্শ করলে ভাইরাসগুলো সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। 

চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন- ‘‘উদ্ধার হওয়া পাখিটি গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ছবি দেখে পাখিটি চিনতে পেরেছি। একটি প্রতিষ্ঠান আমাদের অনুমতি নিয়ে তাদের গবেষণার কাজে পাখিটির গায়ে ট্রান্সমিটার লাগিয়েছে। পাশাপাশি পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল রক্ষার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়