Cvoice24.com

নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ব্রিজ নির্মাণের অভিযোগ, ‘দায়’ নিচ্ছেনা কেউ

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:৪১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২
নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ব্রিজ নির্মাণের অভিযোগ, ‘দায়’ নিচ্ছেনা কেউ

অপর্যাপ্ত সিমেন্ট ও ঢালাই না দেয়া, নিম্নমানের বালি ব্যবহার ও রড ছাড়াই নির্মাণ করা হচ্ছে কক্সবাজারের মহেশখালীর একটি ব্রিজ। বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে এলেও এর দায় এড়াতে মরিয়া উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিস ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আসাদ এন্টারপ্রাইজ।

জানা যায়, উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের সিপাহীর পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রধান সড়কের উপর নির্মাণাধীন ব্রিজের কাজ চলছে। কিন্তু শ্রমিকরা ব্রিজটিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার বিষয়টি পরপর দুইবার এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়ে। অথচ এর দায় নিতে নারাজ উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার সবুজ কুমার ও আসাদ এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মো. আসাদ। দুইজনই দায়সারা বক্তব্য দিচ্ছেন। এদিকে এলাকাবাসীর প্রশ্ন নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মিত ব্রিজের দুর্নীতির দায় নিবে কে?

এর আগেও, গত মাসের ১৩ আগস্ট একই ব্রিজের নির্মাণ কাজ চলার সময় লোহা ও সিমেন্ট কম দেয়ার বিষয়টি এলাকাবাসী কর্তৃপক্ষকে জানায়। একইসঙ্গে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের সামনে ব্রিজে লাগানো র‍্যালিংগুলো ভাঙ্গা হলে সেখানেও লোহা ও সিমেন্ট কম দেয়ার বিষয়টির সত্যতা মিলে। সেসময় উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার সবুজ কুমার জানিয়েছিলেন, এর জন্য দায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তাদেরকে এই বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।

এদিকে এলাকাবাসীরা জানান, চুরি ধরা পড়ার পর কাজ কয়েকদিন বন্ধ রাখা হয়। এরপর আবারও একই শ্রমিক দিয়ে ব্রিজের অবশিষ্ট কাজ শুরু করে। তবে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিসের কেউ ব্রিজের কাজ তদারকি করতে আসেননি। এই ফাঁকে দ্বিতীয় বারেও চারটি লোহার স্থলে দু’টি কিংবা তিনটি লোহা দিয়ে কাজ চালানো হয়েছে। নিম্নমানের বালি ও পর্যাপ্ত সিমেন্ট না দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে স্থাপনা। এই ব্রিজে রীতিমত পুকুর চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন এলাকাবাসী।

এসময় তারা আরও জানান, বাজারে যাওয়ার সময় পথচারীদের চোখে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার বিষয়টি ধরা পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার উত্তেজিত লোকজন একসঙ্গে জমায়েত হন। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার অফিস ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। 
 
আজ শুক্রবার সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রিজের পাশের রেলিংয়ের জন্য নির্মিত বেশ কয়েকটি ভাঙ্গা খুঁটি পড়ে রয়েছে। ওই সব খুঁটির কয়েকটিতে ২টি এবং কয়েকটিতে ৩টি রডের দেখা মিলে। পাশে আধা ইঞ্চির ঢালায়ের কাজে পরিমাণ মতো সিমেন্ট দেওয়া হয়নি। এছাড়া ইটের গাঁথুনিতেও ছিল না পর্যাপ্ত সিমেন্টের ব্যবহার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ১ কোটি ৩১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করে ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর কক্সবাজারের আসাদ এন্টারপ্রাইজকে ঠিকাদার নিয়োগ দেয় এলজিইডি। যার টেন্ডার আইডি নম্বর— ৪৮৫৮২৪। চুক্তি মতে, গত বছরের ২০ নভেম্বর কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও ব্রিজটির কাজ এখনও শেষ হয়নি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নতুন নির্মাণের কথা বলে প্রায় ৭-৮ বছর আগেই জরাজীর্ণ সিপাহীর পাড়া ব্রিজটি ভাঙা হয়। বহু বছর কাজ না হলেও কিছুদিন আগে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ব্রিজ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ব্রিজে নিম্নমানের কাজ হচ্ছে বলে স্থানীয় মানুষদের অহরহ অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তখন আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষের লোকজন ঠিকাদারের সঙ্গে আতাত করে ব্রিজ নির্মাণের সময় তদারকি করেননি এমন অভিযোগ তুলে স্থানীয়রা আরও জানান, ব্রিজের ঢালাই থেকে শুরু করে সবখানে পর্যাপ্ত লোহা, সিমেন্ট, কংকর, বালু ব্যবহার করা হয়নি। ব্রিজের কাজের জন্য আনা লোহা, সিমেন্ট বাইরে বিক্রিও করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছেন, ব্রিজের ঢালাই কাজের সময় লোহার বদলে বাঁশও ব্যবহার করে থাকতে পারে।

এদিকে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আসাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আসাদ বলেন,  ‘এই বিষয়ে আমি অবগত নই। মিস্ত্রির সঙ্গে কথা বলে জেনে নিতে হবে। তবে ব্রিজের কাজ শতভাগ স্বচ্ছ হচ্ছে।’

অপরদিকে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার সবুজ কুমার। তিনি জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ধরা পড়েছে; সমস্যা নাই। তারা ভেঙে এসব কাজ আবার করে দিবে। এটা কোন বড় বিষয় না। ব্রিজের বাকি কাজগুলোতে দুর্নীতি হয়েছে কিনা; সেই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ওই গুলোতে দুর্নীতি বা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়নি। শেষের দিকের ছোটখাট কাজে এসে এমনটি করেছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়