Cvoice24.com

শিশু মাহিয়ার খুনি ৪ বছর আগে হত্যা করেছিল নিজ প্রেমিকাকে

মহেশখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:১৫, ৪ ডিসেম্বর ২০২২
শিশু মাহিয়ার খুনি ৪ বছর আগে হত্যা করেছিল নিজ প্রেমিকাকে

বামে নিহত শিশু মাহিয়া ও ডানে খুনি মোহাম্মদ সোলেমান।

মহেশখালীতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া প্রথম শ্রেণীতে পড়ুয়া মাহিয়াকে অপহরণ করে হত্যা করা খুনী সোলেমান ৪ বছর আগেও গলা কেটে হত্যা করেছিল নিজ প্রেমিকাকে। এরপর থেকেই সে গাঁ ঢাকা দিয়ে ছিলো চট্টগ্রামে। অবশেষে নৃশংস এই খুনিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় পেকুয়ার উজানটিয়া নদীর পাশে করিয়ার দিঘীর প্রজেক্ট থেকে শিশু মাহিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিনই কক্সবাজারের মাতারবাড়ির সাইরার ডেইল থেকে সোলেমান ও তার স্ত্রীকে আটক করা হয়।।

খুনি মোহাম্মদ সোলেমান (২৫) টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডস্থ চাকমারকুল গ্রামের মৃত সৈয়দ করিমের ছেলে। 

যেভাবে নিখোঁজ হয় মাহিয়া
৩০ নভেম্বর স্কুল ছুটি শেষে বেলা ১২ টার দিকে বাড়ি ফিরে শিশু মাহিয়া। খাওয়া দাওয়া শেষে মাহিয়া বাড়ির আঙ্গিনায় খেলতে যায়। দুপুর ২ টা পর্যন্ত বাড়িতে না আসায় খুঁজাখুঁজি শুরু করে তার মা। কিন্তু মেয়ের খোঁজ কোথাও না পেয়ে এলাকায় মাইকিং করে। এরপরেও মেয়ের সন্ধান না পেয়ে মাহিয়ার বাবা আয়াত উল্লাহ মহেশখালী থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। 

যেভাবে বুঝতে পারেন মাহিয়া অপহরণের শিকার হয়েছে
থানায় জিডি দায়েরের পরের দিন ১লা নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মাহিয়ার বাবা আয়াত উল্লাহর মোবাইল ফোনে অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে কল আসে। ফোন রিসিভ করতেই অপরপ্রান্ত থেকে পুরুষ কণ্ঠে একজন মাহিয়ার বাবার নিকট মাহিয়াকে ফিরে পেতে হলে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। টাকা না দিলে মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ওই ব্যক্তি। আয়াত উল্লাহ মেয়ে মাহিয়ার সাথে কথা বলতে চাইলে ওই ব্যক্তি ফোনটি কেটে দেয়। এরপর থেকে ওই ফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। এই ঘটনার পর আয়াত উল্লাহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ৩ ডিসেম্বর অপহরণ মামলা দায়ের করেন। 

অজ্ঞাত পরিচয়ে উদ্ধার হওয়া লাশের পরিচয় শনাক্ত
শনিবার (৩ নভেম্বর) পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া নদীর পাশে করিয়ার দিঘী জাহিদ চৌধুরীর চিংড়ির ঘেরে সকালে একটি মরদেহ দেখতে পায় স্থানীয়রা। সাথে সাথে পেকুয়া থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহটি উদ্ধার করে। অজ্ঞাত মরদেহটি উদ্ধারের ঘটনাটি বিভিন্ন মাধ্যমে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তখন মাহিয়ার বাবা আয়াত উল্লাহ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি তারই কন্যা মাহিয়ার বলে শনাক্ত করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওমর হায়দার। 

যেভাবে খুনি ধরা পড়ে
অপহরণ মামলা দায়েরের পর মহেশখালী থানার পুলিশের একটি টীম মুক্তিপণ চাওয়া মোবাইল নাম্বারের সূত্র ধরে তদন্তে মাঠে নামে। প্রযুক্তির মাধ্যমে অপহরণকারীদের অবস্থান চিহ্নিত করে পুলিশ গোপনে কক্সবাজারের মাতারবাড়ির সাইরার ডেইল থেকে সোলেমান (২৫) নামের এক যুবক ও তার স্ত্রীকে আটক করে। 

খুনের রহস্য যেভাবে উদঘাটন হয়
আটককৃত যুবক সোলেমান জিজ্ঞাসাবাদে খুনের সাথে তার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এই যুবক ও তার স্ত্রী গত ১৩ দিন আগে মাহিয়াদের বাড়িতে বাসা ভাড়া নেয়। সেই সুবাদে মাহিয়াদের সাথে তাদের সখ্যতা গড়ে উঠে। ঘাতক সোলেমান জানায়, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে শিশু মাহিয়া যখন খেলতে বের হয় তখন তাকে চিপস, বিস্কিট ও জুস খেতে দেয় সোলেমান। তারপর কৌশলে মাহিয়াকে বাড়ির কক্ষে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে সেখানে মাহিয়াকে সে ধর্ষণ করে, যখন মাহিয়া চিৎকার দেয়ার চেষ্টা করে তখন দুই হাত দিয়ে মুখ ও গলা চেপে ধরে খুনি সোলেমান। এরই মধ্যে শিশু মাহিয়ার দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়ে, তখন খুনি মাহিয়াকে তার বাড়িতে থাকা একটি লাগেজে ভরে লাশ গোপনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেইমতে লাগেজটি টমটমে তুলে নদীর পাড়ে নিয়ে আসে। সেখান থেকে নৌকায় করে নদীর পাশের প্রজেক্টে যেখানে পরে লাশ পাওয়া যায় সেখানে ফেলে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। 

আগেও খুন করেছে এই সোলেমান
খুনী সোলেমান স্বীকারোক্তিতে জানান, শিশু মাহিয়াকে ছাড়াও চার বছর আগে তার কথিত প্রেমিক আসমা আকতার নামের এক রোহিঙ্গা তরুনীকে গলা কেটে হত্যা করেছিল। ওই হত্যার পর সে চট্টগ্রামে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে সেখানে বিয়ে করে মাতারবাড়ি এলাকার শাহিদা আকতার নামের এক মেয়েকে। গত চার মাস আগে চট্টগ্রাম থেকে মাতারবাড়িস্থ তার শ্বশুরবাড়িতে চলে আসে। সেখানে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সাথে বনিবনা না হওয়ায় মাহিয়ার বাবা আয়াত উল্লাহর বাড়িতে ভাড়া বাসা নেয়।

পুলিশ কি বলছে
তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় খুনের সাথে জড়িত সোলেমানকে আটকের পর পুলিশের কাছে সে খুনের বিষয়টি স্বীকার করে৷ মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রনব চৌধুরী জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোলেমান স্বীকার করে সে একাই শিশু মাহিয়াকে ধর্ষণ করে। তারপর খুনের পর লাশ গুমের চেষ্টা করেছে। এই ঘটনায় তার স্ত্রী জড়িত নয়। সোলেমানকে আটক করার পর তাকে নিয়ে পুলিশের একটি টীম রাতভর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। ঘটনার বিষয়ে তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়