Cvoice24.com

ডুবুরি নেই কক্সবাজারে, মরদেহ উদ্ধারে দুর্গতি

শাহেদ মিজান, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ১৯:৪৮, ২৪ জুন ২০২২
ডুবুরি নেই কক্সবাজারে, মরদেহ উদ্ধারে দুর্গতি

কক্সবাজারের উপর দিয়ে বয়ে গেছে দুটি বড় নদী মাতামুহুরী আর বাঁকখালী। এই দুই নদীর পাড়ে বাস করে বিশাল জনগোষ্ঠী। জীবিকাসহ নানা কারণে নদীর সাথেই তাদের বাস। একারণে নদীতে ডুবে নিখোঁজের মত দুর্ঘটনা ঘটে অহরহ। বিশেষ করে বাঁকখালী নদীতে ডুবে নিখোঁজের ঘটনা প্রতিনিয়ত।  

গভীর ও খরস্রোতা হওয়ায় নদীতে নেমে নিখোঁজদের সন্ধানে তল্লাশি করা সাধারণ মানুষের জন্য দূরহ। জীবনের চরম ঝুঁকি জেনেও নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধারে নামলেও শেষ পর্যন্ত সফল হওয়া যায়না। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রয়োজন পড়ে ডুবুরি দলের। কিন্তু কক্সবাজারে নেই ডুবুরি দল। উপজেলার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে তো দূরের কথা; জেলা স্টেশনেও একজন ডুবুরি নেই। ফলে দুই-তিন দিন পর মরদেহ ভেসে উঠা ছাড়া নিখোঁজের সন্ধান পাওয়া যায় না। সর্বশেষ ২৪ জুন কক্সবাজার শহরের বাজারঘাটার নাপিতা পুকুরে নিখোঁজ মারুফুল ইসলাম মাহী নামের কলেজছাত্রের সন্ধানেও ডুবুরি দলের চরম অভাব পোহাতে হয়েছে ভুক্তভোগীদের। এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগও বিস্তর।

তারা অভিযোগ করেছেন, মাহী ডুবে যাওয়ার ঘটনা ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হলে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারেনি। মূলত ডুবুরি না থাকাতেই এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

দেখা গেছে, নিখোঁজ মাহী মরদেহ উদ্ধারে পুকুরে নেমে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গভীরে যেতে পারছে না। তারা বলছে, তারা ডুবুরি নয়, তাই পানির গভীরে যেতে পারছে না। ফলে মরদেহটি খুঁজে পেতে সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা। তাও উদ্ধার করেছে একজন সাধারণ মানুষ।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলু করিম সাঈদী বলেন, ‘চকরিয়ার অধিকাংশ এলাকা মাহামুহুরী নদীর পাড়বেষ্টিত। নানা কারণে নদীতে নেমে নিখোঁজ মানুষ। এছাড়া বর্ষায় নদীর পানিতে বেড়ে প্লাবিত হয় লোকালয়। এসব কারণে বছরে মাতামুহুরী নদীতে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় নিখোঁজ লোকজনকে উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা থাকে না। জীবিত তো উদ্ধারই করা যায় না। মরদেহটিও উদ্ধার করা দুরহ হয়ে পড়ে। মরদেহটি খুঁজে না পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে ডুবুরি আনতে হয়েছে।’

একই কথা জানিয়ে রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল বলেন, ‘রামু ৮০ শতাংশ এলাকা বাঁকখালী নদীর পাড়ে। এখানে ছোট বাচ্চারা খেলতেও খেলতেও নদীতে পড়ে যায়, পারাপার হতে গিয়ে অনেক সময় নৌকা ডুবির ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় নিখোঁজ হলে নদীতে নেমে সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। তখন ডুবুরি ছাড়া নিখোঁজদের তল্লাশি করা যায় না।’

শুধু মাতামুহুরী বা বাঁকখালী নদী নয়। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এবং অন্যান্য এলাকায় পুকুরে ডুবে এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সবখানে একই দুর্ভোগ।

কক্সবাজারে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে ডুবুরি দল সংযুক্ত করার দাবি দীর্ঘদিনের; কিন্তু তা কখনো আলোর মুখ দেখেনি। একটি দুর্ঘটনা বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন আলোচনা হয়; তারপর ঝিমিয়ে পড়ে।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি ও কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’র সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ‘উন্নয়ন বা অগ্রগতির এই সময়ে কক্সবাজারের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় ডুবুরি না থাকা সেটি বিরাট শূন্যতা। এভাবে চলতে দেয়া যায় না। কর্তৃপক্ষকে গুরুত্ব দিয়ে এই জেলায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের সাথে ডুবুরি দল সংযুক্ত করা দরকার।’

এ ব্যাপারে  কক্সবাজার জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ বলেন, নদী বেষ্টিত আর গুরুত্বপূর্ণ জেলা অনেক আগেই কক্সবাজারের জন্য ডুবুরি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল। সম্প্রতি আবারো চিঠি দেয়া হয়েছে।   তাতে জানানো হয়েছে, শিগগিরই জেলার সদর, মহেশখালী, টেকনাফ ও চকরিয়া ফায়ার সার্ভিসে ডুবুরি দল সংযুক্ত করা হবে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়