Cvoice24.com

একাত্তর বয়সেও থামেনি হকার কালামের দুই চাকার জীবন

মহেশখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩:২৭, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
একাত্তর বয়সেও থামেনি হকার কালামের দুই চাকার জীবন

৭১ বছর বয়সী আবুল কালাম।

মাথায় পাকনা চুল, মুখে সাদা দাঁড়ি, পরনে লুঙ্গি আর সাদা শার্ট। সাথে সাইকেলের পিছনে বাঁধা এক গুচ্ছ পত্রিকা। দু’পায়ে সাইকেলের প্যাডেল ঘুরিয়ে সাই সাই করে ছুটে চলে গ্রাম থেকে অন্য গ্রামের দোকান গুলোতে। প্রতিদিন সকাল হলে এমন চিত্র চোখে পড়ে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার উত্তর প্রান্তে।

‘বুড়ো মানে দাদা নয়, বয়স কোন বাঁধা নয়’ এই কথাটির সত্যতা প্রমাণ করলেন আবুল কালাম। বয়স তার ৭১ বছর ছুঁইছুঁই। তারপরেও থেমে নেই পত্রিকার সাথে তার সখ্যতার জীবনযাত্রা। প্রতিদিন সকাল হলে পত্রিকার খবর পৌঁছে দেন মানুষের দ্বারে। অথচ এই খবরের ফেরিওয়ালার খোঁজ রাখেনি কেউ। 

মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহ ঘোনায় আবুল কালামের বাড়ি। তিনি ওই গ্রামের মৃত লাল মোহাম্মদের ছেলে। পত্রিকা বিক্রি করেই মানুষ করেছেন ৭ সন্তানকে। তারমধ্যে ৪ ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকেন। আর ২ কন্যার বিয়ে দিয়েছেন। এখন অবিবাহিত এক ছেলের সাথে ছনের ছাউনীযুক্ত বেড়ার ঘরে বসবাস করছেন তিনি। 

জীবনের সাথে কিভাবে পত্রিকা জড়িয়ে পড়লো সেই গল্পটি শুনা হয় তার মুখে। তিনি জানিয়েছেন- ১৬ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করছেন। মাত্র ছয় হাজার টাকা বেতনে ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম শহরে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করতেন। কিন্তু বেতনের অল্প টাকায় সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে। তখন ছুটে আসেন গ্রামে। পুঁজি না থাকায় শুরু করেন পত্রিকা বিক্রির কাজ। পত্রিকা বিক্রি করে যা পেতেন তা দিয়ে সংসার চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করোনা ভাইরাস চলে আসায় বন্ধ হয়ে পড়ে কিছু কিছু পত্রিকা ছাপানোর কাজ। বিরূপ প্রভাব পড়ে আয় রোজগারে। হিমশিম খেতে হয় সংসার চালাতে। আগে পত্রিকা বিক্রি করে ৫/৬'শ টাকা আয় হলেও এখন আয় হয় ৩/৪'শ টাকা। ব্যয় বাড়লেও কমেছে আয়ের পরিমাণ। 

বিষন্ন মনে তিনি বলেন- ‘আগে পত্রিকার প্রতি পাঠকদের আগ্রহ ছিল। কিন্তু এখন মোবাইলে নাকি পত্রিকা পড়া যায়। তাই পাঠকের সংখ্যাও কমেছে। তবে পুরনো কিছু পাঠক রয়েছে। যারা নিয়মিত পত্রিকা পড়েন। আগে ১৫০টি জাতীয় পত্রিকা ও ১৫০টি স্থানীয় পত্রিকা বিক্রি করতেন। এখন বিক্রি করতে পারেন ১০০টির মতন পত্রিকা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন- চকরিয়া উপজেলার বদরখালী বাজারে সহকর্মী হকার থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করেন। তারপর চালিয়াতলী থেকে হোয়ানক ইউনিয়নের টাইমবাজার পর্যন্ত মাঝখানের বাজার গুলোতে পত্রিকা পৌঁছে দেন তিনি। এই পত্রিকা বিক্রির সূত্র ধরে সকল বয়সীদের প্রিয় হয়ে উঠেন মিষ্টি ভাষী আবুল কালাম।

সরকারী সুবিধা পান কিনা জানতে চাইলে আবুল কালাম জানান- করোনাকালীন আর্থিক সংকটে পড়লে একজনের পরামর্শে বয়স্ক ভাতার আবেদন করেন। আবেদনখানা কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিলেও পরে আর কোন খোঁজ পাননি। বয়স্ক ভাতা পেতে পরবর্তীতে কি করণীয় সেটা সম্পর্কেও অবগত নন বলে জানান তিনি। যার কারণে ৬৩ বছর বয়সে বয়স্ক ভাতা পাওয়ার কথা থাকলেও পাচ্ছেন না ৭১ বছর বয়সেও৷ 

হকার আবুল কালামকে বয়স্ক ভাতা প্রদানের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে মহেশখালী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনজুর মোরশেদ জানান— নির্ধারিত বিধির আওতায় থাকা সকলে বয়স্ক ভাতা পাবেন। অনেকে ভাতার প্রক্রিয়া সম্পর্কে না জানার কারণে ভাতা থেকে বঞ্চিত হন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাতার প্রাপ্তির বিষয় সম্পর্কে প্রচারণাও বাড়ানো হয়েছে।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়