Cvoice24.com

দুই নেতার ভোটযুদ্ধে সরগরম কক্সবাজার

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:২৩, ৫ জুন ২০২৩
দুই নেতার ভোটযুদ্ধে সরগরম কক্সবাজার

আগামী ১২ জুন বহুল আলোচিত কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে পর্যটন নগরটি। সবখানে চলছে নির্বাচনী ডামাঢোল। প্রার্থীদের প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে পাড়া-মহল্লা। মাইকিং ও নির্বাচনী গানে সরগরম পুরো শহর। ভোটাররাও এখন ভোট নিয়ে জম্পেশ আড্ডায় সময় পার করছেন। 

তবে নির্বাচনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মেয়র পদ। কারণ মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী থাকলেও প্রতিযোগিতা চলছে শুধু দুই জনের মধ্যে। আবার তারা দুজনই সরকারি দল আওয়ামী লীগের জেলার শীর্ষ পর্যায়ের নেতা, দুজনই আবার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। 

তারা হলেন— আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী এবং জেলার আওয়ামী লীগের আতুড়ঘর খ্যাত মোজাম্মেল পরিবারের সন্তান নাগরিক কমিটি মনোনীত নারিকেল গাছ প্রতীকের প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ। 

এছাড়া অন্য তিন প্রার্থী হলেন— মাসেদুল হক রাশেদের স্ত্রী জোসনা হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী জগদীশ বড়ুয়া পার্থ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. জাহেদুর রহমান। 

তবে এই তিন প্রার্থীকে মাঠে দেখা গেলেও তারা আলোচনায় নেই। তবে আরেক প্রার্থী সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল নির্বাচন থেকে সরে পড়েছেন। 

ভোটাররা বলছেন— বিএনপি ও জামায়াত কোনো প্রার্থী দেয়নি। এছাড়া আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী সরওয়ার কামালও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তাই আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সাংগঠনিক সম্পাদকের মাঝে লড়াইটা হবে হাড্ডাহাড্ডি।
তবে স্থানীয়ভাবে বেশি আলোচনা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদকে নিয়ে। বর্তমান মেয়র মুজিবুর রহমানের পারিবারিক সদস্য হওয়ায় এলাকায় তার একটা প্রভাব রয়েছে। এছাড়া তার প্রয়াত পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর একেএম মোজাম্মেল হককে জেলার আওয়ামী লীগের আতুড়ঘর বলা হয়। 

অপরদিকে ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনে মাহবুবুর রহমানের নিজস্ব একটি অবস্থান রয়েছে। এছাড়া তিনি গত তিনবারের কাউন্সিলর এবং টানা কয়েক বছর ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। সব মিলিয়ে পৌরসভার কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং পৌরবাসীর সঙ্গে তার সখ্যতাও উল্লেখ করার মতো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ও রাজনৈতিক বোদ্ধামহল জানিয়েছেন, কাজ করতে গেলে সমালোচনা হয়। নানা কারণে বিতর্কিত হলেও কক্সবাজারে জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান। তবে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকে মামলা চলায় তিনি মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েছেন। এছাড়া পৌরসভা কার্যালয়ে তার নিজস্ব লোকজনের বেশি ভিড় এবং মেয়রকে সহজে কাছে না পাওয়াও তার বাদ পড়ার কারণ হতে পারে। তার বাদ পড়াকে লজ্জাজনক দেখে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আমৃত্যু আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে থাকা একেএম মোজাম্মেল হকের বড় ছেলে রাশেদকে স্থানীয়রা ভোটের মাঠে নামান। পৌরসভার ১,২,৩ নম্বর ওয়ার্ডকে তারা ভোটব্যাংক হিসেবে গণ্য করে সহজ জয়ের আশা করছেন।

অপরদিকে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া মাহবুবুর রহমান সাতকানিয়া-লোহাগাড়া কেন্দ্রিক ব্যবসায়ী সংগঠন কক্সবাজার দোকান মালিক সমিতি ফেড়ারেশনের সভাপতি। বাবার ব্যবসায়িক পরিচিতির সূত্র ধরে সরকারি দলের নেতা ও স্থানীয় কাউন্সিলর হিসেবে সাংগঠনিক সুবিধার আশায় ব্যবসায়ীরা তাকে গতবার সমিতির সভাপতি করেন। এটিই তার জন্য এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে! এটাকে এখন হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ। এর ফলে অনেকটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মাহবুবুর রহমানের নির্বাচনী মাঠে। 

এদিকে এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীই হেভিওয়েট এবং আওয়ামী ঘরানার হওয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও কিছুটা দ্বিধাবিভক্ত অবস্থায় রয়েছে। এতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। শীর্ষ নেতারা নৌকার প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর জন্য কাজ করলেও তৃণমূলের বহু নেতাকর্মী প্রকাশ্যে মাসেদুল হক রাশেদের জন্য কাজ করছে। এই জন্য ওয়ার্ড কমিটি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক চিহ্নিত ১৩ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারও করেছে পৌর আওয়ামী লীগ। নৌকার জন্য কাজ করা অনেকে ভেতরে ভেতরে নারিকেল গাছ প্রতীককেই ভোট দেবে- এমনটি শোনা যাচ্ছে। 

সেই হিসেবে নৌকার প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন মাসেদুল হক রাশেদ। প্রথম তার একটি বিশাল নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। তার সাথে আওয়ামী লীগের একটি অংশ ভোট দেবে। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতের ভোটও তার বাক্সে পড়তে পারে বলে সচেতন মহলে ধারণা করছেন। তবে মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর পৈত্রিক বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় হওয়ায় আঞ্চলিকতার একটা প্রভাবও রাশেদের পক্ষে আসবে। 

এ বিষয়ে নৌকার প্রার্থী মাহবুবুর রহমান বলেন, আমার জন্ম কক্সবাজারে। আমার বাবা ব্যবসায়ী হিসেবে এ অঞ্চলের পরিচিত মুখ। পূর্ব পুরুষের বাড়ি লোহাগাড়া হওয়ায় কক্সবাজারে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সাতকানিয়া-লোহাগড়ার লোকজন আমাদের আপন। এছাড়া আমারও দৃষ্টি পৌরসভার উন্নয়ন। তাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সাধারণ মানুষ নৌকাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।

নাগরিক কমিটির প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ বলেন, জনগণই আমাকে ভোটে নামিয়েছে। জনগণ ভোট দিতে পারলে আমার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। বাবা মোজাম্মেল হকের দেখানো পথে পৌরবাসীর সেবায় থাকতে চাই।

কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এসএম শাহাদাত হোসেন বলেন, কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৯৪ হাজার ৮০২ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৯ হাজার ৮৭৯ ও নারী ভোটার ৪৪ হাজার ৯২৩ জন। ১২টি ওয়ার্ডের ৪৩টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আচরণ বিধি লঙ্ঘন না করতে  প্রার্থীদের কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। 

কক্সবাজার পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই। ওই নির্বাচনে মেয়র হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়