ভাঙা ঘর আঁকড়ে রাখতে গিয়ে নিভল সাইদীর জীবন প্রদীপ
কক্সবাজার প্রতিনিধি

এক মাস আগে নববধু ঘরে এসেছে। মুছে যায়নি হাতের মেহেদী। কাটে নি আনন্দের রেশ। এরই মাঝে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন বর মুহাম্মদ সাইদী। মুহুর্তেই বাড়ির আনন্দগণ পরিবেশ পরিণত হয়ে গেল বিষাদে। কান্নার রোল পড়েছে পরিবারের সদস্যদের মাঝে। বাবা, মায়ের পাশাপাশি বাকরুদ্ধ নববধূও।
রবিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে নিহত মুহাম্মদ সোহেলের বাড়িতে গিয়ে দেখা মিলেছে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। ১৭ নভেম্বর বিকালে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে যখন বাড়ির চাল উড়ে যাচ্ছিল, সেটি ঠিক করতে ঘরের চালে উঠে সাইদী। ওইসময় বাড়ির পাশের একটি গাছ ভেঙ্গে পড়ে তার উপর। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকলে কলেজ হাসপাতালে (চমেক) ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার তার মৃত্যু হয়।
নিহত মুহাম্মদ সোহেলের বাড়ি কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের ঝাপুয়া সাতঘরপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মিয়া হোসেন। তিনি পেশায় দিনমজুর।
সোহলের বাবা মিয়া হোসেন বলেন, এক ছেলে রিকশা চালায়, অন্যজন প্রতিবন্ধী। সাইদীই ছিল তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনাক্ষম ব্যক্তি। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে আহত হওয়া সেই ছেলে আর রইল না।
তিনি আরও বলেন, ‘পুরো ঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। যে কোন সময় দেয়াল ধসে পড়তে পারে। বসবাস করবার অবস্থা নাই। ঘর যে ঠিক করবো সেই সামর্থ্যও নাই আমার। একদিকে ছেলেকে হারিয়েছি, ভাঙা ঘর নিয়ে বাকিদের জীবনও ঝুঁকিতে। কিভাবে কি হবে বুঝতে পারছি না।”
নিহত সাইদীর মা হালিমা বলেন, ‘দুর্ঘটনার পরে কেউ খোঁজ রাখে নি। ছেলেটি মরে গেল এখনও মেম্বার ছাড়া কেউ খবর নিতে আসে নি। আমরা গরীব মানুষ বলে কেউ পাশে দাঁড়াচ্ছে না।’ আক্ষেপ নিয়ে ছেলে হারা হালিমা বলেন, সহযোগিতা বড় কথা নয়, আমার ছেলেটি যে মারা গেলে সেই খবর নিতে আসে নি কেউ।
কালারমারছড়া ইউপি সদস্য আব্দুচ্ছালাম বলেন,সাইদীর পরিবার খুবই অসহায়। ঘর মেরামতের সামর্থ্য নাই তাদের। তাদের সহযোগিতার জন্য তিনি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিকি মার্মা বলেন, নিহত ব্যক্তি নিয়ম অনুযায়ী সরকারি অনুদান ২৫ হাজার টাকা পাবেন। সেটার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
সিভয়েস/এএস