আরসার শীর্ষ তিন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার র্যাবের হাতে
কক্সবাজার প্রতিনিধি

র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার আরসার তিন সন্ত্রাসী।
আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসার) তিন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। রবিবার মধ্যরাতে উখিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পের ১৭ নম্বর এবং ৪ নম্বর এক্সটেনশন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন— আরসা’র স্লীপার সেল ও ওলামা বডির অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার মৌলভী হামিদ হোসেন প্রকাশ ডাক্তার হামিদ, অর্থ সমন্বয়ক আবু তৈয়ব প্রকাশ সোনা মিয়া প্রকাশ সোনালী এবং আরসা’র ইন্টেলিজেন্স সেলের কমান্ডার ওসমান গনি।
এসময় তাদের কাছ থেকে ১টি ওয়ানশুটার গান, ১টি একনলা বন্দুক, ১টি দেশীয় তৈরি এলজি, ৩ রাউন্ড কার্তুজ, ২ রাউন্ড রাইফেলের গুলি এবং ২ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়।
র্যাব বলছে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসার) টর্চার সেল প্রধান ওসমান ওরফে সালমান মুরব্বি গ্রেপ্তারের পর তা স্থলাভিষিক্ত হয়ে ওলামা বডির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন মৌলভী হামিদ হোসেন। তিনি ক্যাম্পে অবস্থানরত যুবক বয়সী ও শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের টার্গেট করতেন। আরসায় যোগদানের জন্য কর্মী সংগ্রহ, নির্বাচিত কর্মীদের বিভিন্ন তথ্যাদি যাচাই বাছাই শেষে যোগ্য ব্যক্তিদেরকে আরসা’য় অন্তর্ভুক্ত করে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য তাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পাঠানো ছিল তার কাজ। হামিদের ভাষ্যমতে র্যাব জানিয়েছে, এ পর্যন্ত তিনি ৬০ জন নতুন সদস্যকে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠিয়েছেন।
এছাড়া আবু তৈয়ব আরসা প্রধান আতাউল্লাহ’র একান্ত সহকারী এবং অর্থ সমন্বয়ক মোহাম্মদ এরশাদকে গ্রেপ্তারের পর আরসা’র অর্থ সমন্বয়ক/সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। বিভিন্ন দেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের/কমিউনিটির কাছ থেকে তারা মোটা অংকের অনুদান সংগ্রহ করেন আবু তৈয়ব। তার মধ্যে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত একজন মালয়েশিয়া প্রবাসী রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে আরসার জন্য প্রতিমাসে ৮-১০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠায়।
বৈদেশিক অনুদানসহ আরসা’র নিজস্ব অর্থের উৎস হিসেবে ৬ এবং ৭নং ক্যাম্পের মাঝামাঝি স্থানে ৩৮টি দোকান স্থাপন করে ভাড়া দেন এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন বাজারে অবস্থিত আড়াইশ থেকে তিনশোটির মত দোকান থেকে প্রতিমাসে চাঁদা বাবদ লাখ লাখ টাকা তুলেন গ্রেপ্তার আবু তৈয়ব।
আরসার সক্রিয় সদস্য ওসমান গনি। তথ্য-প্রযুক্তি এবং ইংরেজী ভাষায় তার বেশ দক্ষতা থাকায় সে আরসার তথ্য-প্রযুক্তির বিষয় দেখভাল করতো। এই সুযোগে তিনি ক্যাম্পে পরিচালিত এনজিও ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তথ্য আরসার শীর্ষ নেতাদের সরবরাহ করতেন। পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতির খবরাখবর পৌঁছাতেন। তাছাড়া বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধি লক্ষ্য রাখতেন। কোন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করলে গ্রুপের সদস্যরা গ্রুপে মেসেজ দিয়ে সকলকে সতর্ক করে দিতো বলেও জানিয়েছে র্যাব।
এদিকে তাদের গ্রেপ্তারের দিনে কুতুপালং ৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি ও সি ব্লক এবং বালুখালী ৯ নম্বর ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আরসা ও আরএসওরমধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে আবু সৈয়দ নামে এক রোহিঙ্গার মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।