Cvoice24.com

কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাট ‘দখলে’ নিতে চায় জেলা পরিষদ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১
কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাট ‘দখলে’ নিতে চায় জেলা পরিষদ

চট্টগ্রাম ও সন্দ্বীপ নৌ রুটে থাকা কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাট

চট্টগ্রাম ও সন্দ্বীপ নৌ রুটে থাকা কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটটি ছয় বছর ধরে পরিচালনা করে আসছে জেলা পরিষদ। ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর ফেরীঘাটটি পরিচালনা নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিউটিএ) ও জেলা পরিষদের সাথে ৬ বছরের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 

তবে গত বছর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ফেনী থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত পুরো এলাকাকে নৌ-বন্দর ঘোষণা করে সরকার। পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ-কে নৌ-ঘাটগুলো পরিচালনার দায়িত্বও দেওয়া হয়। তাই আইন অনুযায়ী নৌ ঘাটটি পরিচালনা করতে চায় বিআইডব্লিউটিএ। অপরদিকে জেলা পরিষদও তাদের পরিচালনা কার্যক্রম বন্ধ রাখেনি। উল্টো এ নৌ ঘাটের মালিকানা ধরে রাখতে মন্ত্রণালয়ে তদবির করছে তারা। বিষয়টি সমাধানে আগামীকাল (সোমবার) ফের বৈঠকে বসবে আন্তঃমন্ত্রণালয়। 

জানা গেছে, ২০১৩ সালে কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটটির ইজারা নিয়ে বিআইডবিউটিএ ও জেলা পরিষদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। জটিলতা নিরসনে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের উদ্যোগে স্থানীয় দুই সাংসদ (চট্টগ্রাম ৩ ও চট্টগ্রাম ৪), বিআইডবিউটিএ ও জেলা পরিষদ-চট্টগ্রাম এর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও  সন্দ্বীপ উপজেলার কুমিরা-গুপ্তছড়া ফেরীঘাট পরিচালনা নিয়ে বিআইডবিউটিএ ও জেলা পরিষদের সাথে ৬ বছরের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 

এদিকে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সকল ঘাট রক্ষণাবেক্ষণ ও ইজারা প্রদানে ক্ষমতা দেয়ায় সমঝোতা স্মারক নবায়ন করতে অনাগ্রহী বিআইডবিউটিএ। এজন্য ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদের সাথে সমঝোতা স্মারক নবায়ন না করতে অনুরোধ জানায় বিআইডবিউটিএ’র চট্টগ্রাম কার্যালয়। 

বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, সন্দ্বীপের প্রধানতম নৌ রুট হওয়ায় এই ঘাটের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব বাবদ আয় ছাড়াও বিভিন্ন ভাবে আয়ের সুযোগ থাকায় এই ঘাটটি থেকে নিজেদের কর্তৃত্ব ছাড়তে রাজী নয় জেলা পরিষদ। এ কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ইজারা মূল্য প্রদানের কারণে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে অস্বাভাবিক ভাড়া আদায় করছে। 

এদিকে মালিকানা পাওয়ার আশায় বিআইডব্লিউটিএ ইতোমধ্যে নৌ পথে ৪টি বয়া স্থাপন করা হয়েছে। উভয় পাশের জেটিতে লাইটিং ছাড়াও, যাত্রীদের বসার সু-ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে তারা। উঠা-নামার কষ্ট দূর করতে নিয়মিত ড্রেজিংও করতে চায় তারা। আবার যাত্রী ভাড়া জনপ্রতি ২৫০ টাকা (স্পিডবোট) থেকে কমিয়ে ২০০ টাকা করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।

দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ঘাটের ইজারা, উন্নয়ন ও পরিচালনার বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ ও বিআইডব্লিউটিএ’র সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি মন্ত্রী পর্যায়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে। ওই সভায় নৌপথের সকল ঘাট উন্নয়ন রক্ষণাবেক্ষন ও পরিচালনা বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়ন্ত্রণে রেখে বিরোধপূর্ণ ঘাটের ক্ষেত্রে রাজস্ব আয়ের একটি অংশ সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত  দেশের বেশ কয়েকটি স্থানীয় সরকার বিভাগের সংস্থা প্রতিপালন না করায় ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ওই সভায় নৌপথের সকল ঘাট উন্নয়ন রক্ষণাবেক্ষন ও পরিচালনা বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়ন্ত্রণে থাকার সিদ্ধান্ত হয়। 

বেসরকারি একটি কলেজের প্রভাষক ফছিউল আলম বলেন, জেলা পরিষদ প্রতিদিন লাখ টাকা ইজারা নেওয়া ছাড়া কিছুই করেনি। নিরাপদ কোনো নৌযান দিতে পারেনি তারা। উঠা-নামার দুর্ভোগও দূর করতে পারেনি তারা। অথচ প্রতিদিন যাতায়াত করা চার-পাঁচ হাজার  মানুষের পকেট থেকে রাজস্বের নামে লাখ টাকা নিয়ে গেছে তারা।’

বিআইডবিওটিএ’র চেয়ারম্যান গোলাম সাদেক বলেন, ‘বিআইডবিওটিএ’র সাথে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ছয় বছর ধরে কুমিরা-গুপ্তছড়া ঘাটটি পরিচালনা করছে জেলা পরিষদ। কিন্তু ২০২০ সালের ১ মার্চ ফেনী জেলার সোনাগাজী মৌজায় মুহুরী প্রজেক্ট সংলগ্ন নদী তীরবর্তী অংশ থেকে চট্টগ্রামের ডাবল মুরিং থানাধীন দক্ষিণ কাট্টলী মৌজায় রাসমনি ঘাট পর্যন্ত আড়াআড়ি ভাবে মীরসরাই-রাসমনি নদী বন্দর ঘোষণা করে সরকার। একই দিন সরকার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডবিওটিএ) এই নদী বন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে। তাই আমরা জেলা পরিষদের সাথে ডিসেম্বরে আর চুক্তি নবায়ন করিনি। এখন আইন অনুযায়ী এটি আমরা পরিচালনা করবো।’

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির ইকবাল বলেন, ‘এই ঘাটে আমাদের প্রচুর বিনিয়োগ আছে। আমাদের একাধিক প্রকল্প চলমান আছে এখনো। ঘাটের মালিকানা নিয়ে বিআইডবিওটিএ’র সাথে আমাদের সমঝোতা চুক্তি আছে। এখন এটি কিভাবে পরিচালিত হবে তা মন্ত্রণালয়ই ঠিক করবে।’

-সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়