Cvoice24.com

পোশাক রপ্তানিতে জাহাজ ভাড়া ভোগাচ্ছে ব্যবসায়ীদের

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৫০, ১৯ অক্টোবর ২০২১
পোশাক রপ্তানিতে জাহাজ ভাড়া ভোগাচ্ছে ব্যবসায়ীদের

বিশ্ববাজারে চট্টগ্রামের তৈরি পোশাক পণ্যের চাহিদা বেশি। করোনার খারাপ সময় কাটিয়ে সামনের শীত ও বড়দিনকে ঘিরে বেড়েছে কার্যাদেশ। তবে দীর্ঘদিন ধরে ছয়গুণেরও বেশি জাহাজ ভাড়ার কারণে আমদানি ও রপ্তানিতে খরচ বেড়েছে। পাশাপাশি বিদেশি ব্যবসায়ীদের পণ্যমূল্যে ছাড় দেয়ার আবদার তো রয়েছেই। সেই সাথে রপ্তানিতে ট্রেড কস্ট বেশি বিধায় বিদেশি ক্রেতারা একটা খরচের অংশ রপ্তানিকারকের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। সবমিলিয়ে ভরা মৌসেুমেও বাড়তি জাহাজ ভাড়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বিদেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে স্বাভাবিক সময়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার ডলার খরচ পড়তো। সেখানে বড় মাদার ভেসেলগুলোতে পণ্য পরিবহণে ষোলো থেকে আঠারো হাজার ডলার খরচ পড়ছে। তবে কোন কোন জাহাজ পণ্য পরিবহণে বিশ হাজার ডলারও নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। দীর্ঘ পাঁচ থেকে ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে এ বাড়তি খরচের বোঝা বহন করে আসছেন পোশাক ব্যবসায়ীরা। 

পোশাকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রীলংকার কলম্বোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বন্দরগুলো এখনো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আসেনি। কনটেইনার জটের কারণে অনেক জাহাজ পণ্য নিয়ে বন্দরে আটকা পড়ে আছে। ফলে বড় বড় জাহাজগুলো সাগরে নামতে পারছে না। এদিকে সাগরে জাহাজ সংকটের অজুহাতে বিদেশী শিপিং কোম্পানিগুলো পাঁচ থেকে ছয়গুণ পর্যন্ত জাহাজ ভাড়া বাড়িয়েছেন। এদিকে জাহাজ ভাড়া বাড়ার কারণে তৈরি পোশাক প্রস্তুতে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে খরচ বেড়েছে। ফলে পোশাক উৎপাদন খরচও বাড়ছে। অথচ বিদেশি ক্রেতারা একটা নির্দিষ্ট রেটের (দাম) বাইরে পণ্যের দাম দিতে চায় না। পাশাপাশি পণ্য আমদানি-রপ্তানিতেও এখন ট্রেড কস্ট বেড়ে গেছে। ফলে দেশিয় পোশাক রপ্তানিকারকদের উপর খরচের একটি অংশ চাপিয়ে দিয়ে এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন বায়াররা।

শিপিং এজন্ট বলছে, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশের বন্দরে কনটেইনার ও জাহাজ জট তৈরি হয়েছে। সে সংকট এখনো তারা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারে নি। ওইসব দেশের বন্দরগুলোতে পণ্য নিয়ে অলসভাবে জাহাজগুলো পড়ে আছে। ফলে বিদেশি শিপিং লাইনগুলো ফ্রেইট চার্জ বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। এত করে আমদানি-রপ্তানিকারক দুজনই ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, জাহাজ ভাড়া বাড়ার বিষয়টি আসলে একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এখানে আমাদের কারো কোন হাত নেই। দীর্ঘদিন ধরে ছয়গুণ বাড়তি ভাড়া দিয়ে আমাদের ব্যবসায়ীরা পোশাক রপ্তানি করছেন। পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতেও এখন খরচ বেড়েছে। মোট কথা, আমদানি-রপ্তানিতে এখন ট্রেড কস্ট বেড়েছে। ফলে একদিকে বিদেশি ক্রেতারা পণ্যের দামের ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে ডিসকাউন্ট দাবি করছে। অন্যদিকে বায়াররাও তাদের খরচের একটা অংশ আমাদের ব্যবসায়ীদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভবনা তো থাকছেই। 

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন পরিচালক খায়রুল আলম সুজন সিভয়েসকে বলেন, দীর্ঘ ছয়মাসেরও বেশি সময় ধরে জাহাজ সংকটের অজুহাতে ভাড়া বাড়তির দিকে রয়েছে। তা এখনো স্বাভাবিক কোন পর্যায়ে আসেনি। বরং এই জাহাজ ভাড়া বাড়ার কারণেই বিশেষ করে পণ্য রপ্তানিতে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমরা শুনতে পাচ্ছি বায়ার তার ট্রেড খরচ ইনভয়েস ভ্যালু থেকে কেটে রাখছে। তবে আমাদের দেশে মাদার ভেসেলের যে সংকটটা ছিল তা অনেকটা কেটে আসতে শুরু করেছে। ২০ থেকে ২২ হাজার কনটেইনার নিয়ে সিঙ্গাপুর-কলম্বো হয়ে যে জাহাজগুলো ইউরোপ-আমেরিকায় যেতো, সে জাহাজগুলো মাঝখান দিয়ে শিপমেন্ট তুলে নিয়েছিল। তবে বর্তমানে কার্গোর চাপ বাড়াতে এসব জাহাজগুলো চলাচল করতে শুরু করেছে। এ সংখ্যা বাড়তে থাকলে ট্রেড কস্ট টা কমে আশবে বলে আমরা ধারণা করছি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়