Cvoice24.com

১৩৪ বছরেও বড় জাহাজ ভেড়ানোর সক্ষমতা হয়নি চট্টগ্রাম বন্দরের

তারেক মাহমুদ

প্রকাশিত: ১৫:৪০, ৯ আগস্ট ২০২২
১৩৪ বছরেও বড় জাহাজ ভেড়ানোর সক্ষমতা হয়নি চট্টগ্রাম বন্দরের

চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: সিভয়েস

এক এক করে চট্টগ্রাম বন্দরের কেটেছে ১৩৪ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি জাহাজের আগমন যেমন বেড়েছে, ঠিক তেমনি বেড়েছে রাজস্ব আদায়ের হারও। তবুও এখন পর্যন্ত জেটিতে বড় জাহাজ ভেড়ানোর সক্ষমতা হয়নি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের। যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষের ‘টার্গেট’ পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল ঘিরে। সেখানেই বড় বড় জাহাজ ভেড়ানোর ‘স্বপ্ন’ তাদের। আর এ মাসেই সেই ‘স্বপ্ন’ বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছেন তারা।

তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে ১৯টি জেটি রয়েছে। এরমধ্যে কেবলমাত্র সাতটি জেটিতে ৮ মিটার, পাঁচটি জেটিতে সাড়ে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারে। বাকি ছয়টি জেটিতে কনটেইনারবাহী (২০ বা ৪০ ফুট) জাহাজ ভিড়তে পারে। বড় জাহাজগুলো (মাদারভেসেল) বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করে। বড় জাহাজ থেকে ছোট ছোট লাইটার জাহাজে করে পণ্যগুলো আনা হয় জেটিতে। এ কারণে একদিকে আমদানিকারকের খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়ে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি পণ্য খালাসে বহির্নোঙরে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অপেক্ষারত জাহাজগুলোকেও গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। বন্দর জেটিতে বড় জাহাজ ভেড়ার সুযোগ থাকলে এসব সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি পণ্য খালাস কার্যক্রম আরও দ্রুত হতো বলে মনে করেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ মার্চ ক্লিংকার বোঝাই ১৮৫ দশমিক ৮৪ মিটার লম্বা এবং ৮ দশমিক ২০ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশ) জাহাজ সর্বপ্রথম চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছিল। এরপর চলতি বছরের শুরুতে সাড়ে নয় মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়া শুরু হয়েছিল। এখন ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানোর জন্য সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গতবছর ইংল্যান্ডের গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইচআর ওয়েলিং ফোর্ড কর্ণফুলী নদীর সার্বিক অবস্থার ওপর জরিপ চালায়। একবছর পর গতমাসে এই জরিপের প্রতিবেদনও জমা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব বলে মতামত দেয়া হয়েছে। এদিকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ড্রাফট বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তারা। 

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ৮ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ার অনুমতি পেতে কয়েক দশক সময় লেগেছিল। এক বছর আগে সাড়ে ৮ ও ৯ মিটার জাহাজ ভেড়ার অনুমতি মেলে। অপরদিকে ১০ মিটার জাহাজ ভেড়ার অনুমতির অপেক্ষায় আছে। তবে কখন সে অনুমতি আসবে তার কোন সুস্পষ্ট ঘোষণা এখনও আসেনি বন্দরের কাছ থেকে। ৮ মিটার গভীরতার জাহাজে ১১শ এবং নয় মিটার গভীরতার জাহাজ ২ হাজার কনটেইনার পণ্য বহন করতে পারে। তবে বন্দরের জেটিগুলোতে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ার অনুমতি পেলে বড় জাহাজগুলো ৩ হাজারের বেশি কনটেইনার নিয়ে সরাসরি বন্দর জেটিতে প্রবেশ করতে পারবে। এতে করে বন্দরের কনটেইানার হ্যান্ডলিংয়ের মাত্রাও বেড়ে যাবে। 

বর্তমানে বন্দরের ২ থেকে ৮ নম্বর জেটিতে ৮  মিটার গভীরতার জাহাজ এবং ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটিতে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়ছে। বাকি জেটিগুলোতে কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়ছে। এছাড়া বড় বড় মাদারভেসেলগুলো কুতুবদিয়ার দিকে অপেক্ষা করে। সেখান থেকে ছোট ছোট লাইটার জাহাজযোগে পণ্যগুলো নিয়ে আসা হয় বন্দরসীমানায়।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি'র সভাপতি মাহবুবুল আলম সিভয়েসকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর এখন অনেক সাবলম্বী হয়েছে। নতুন নতুন যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করার পাশাপাশি বন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ যদি বড় জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ তৈরি করতে পারে তাহলে একদিকে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে, অন্যদিকে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাত্রাও বেড়ে যাবে। বন্দরের অবস্থান অনুসারে জেটিতে বড় জাহাজ ভেড়ানো এখন সময়ের দাবি। বন্দর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আমরা এর বাস্তবায়ন দেখতে পাবো।

এদিকে গত বছরের তুলনায় এবছর ১৬৯টি বেশি বিদেশি জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। পাশাপাশি এ খাতে রাজস্ব আদায়ের হারও বেড়েছে। মূলত রাজস্ব আয় বৃদ্ধিটা নির্ভর করে কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের ওপর। বিভিন্ন কৌশল ও যুগোপযুগী সিদ্ধান্ত ও বৈদেশিক জাহাজের আগমনের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ার কারণে রাজস্ব আয় বাড়ছে বলে দাবি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে ৪ হাজার ২৩১টি জাহাজ এসেছিল বন্দরের জেটিতে। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪ হাজার ৬২, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৭৬৪টি জাহাজ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৯৯টি জাহাজ এসেছিল। তাছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৬৪, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ হাজার ৯২ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ হাজার ৮৭৫টি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল। 

সূত্র আরও জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে জাহাজের মোট পরিচালনা আয়ের মধ্যে শুধু বৈদেশিক জাহাজ থেকে রাজস্ব এসেছিল ৫২০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সে আয় ৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা কমে হয়েছিল ৪৮৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। অপরদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সে আয় আরও ৪৮ কোটি ২০ লাখ টাকা কমে ৪৩৬ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৯৪ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি রাজস্ব এসেছে বিদেশি জাহাজ পরিচালনার মাধ্যমে। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, প্রযুক্তিগত দিক থেকে চট্টগ্রাম বন্দর এখন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। তবে এটা ঠিক যে পণ্য নিয়ে আসা বড় জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে অবস্থান করতে হয়। কিন্তু বহির্নোঙরে জাহাজগুলোকে বেশি সময় অপেক্ষা করে থাকতে হয়না। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা জাহাজগুলোর দ্রুত বার্থিং দেয়ার চেষ্টা করি। এখন কোন জাহাজ জটও নেই। যথাসময়ে জাহাজ হ্যান্ডলিং করার কারণে জাহাজের আগমনের সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ও বাড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরাসরি জাহাজ পরিষেবা চালু হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও সরাসরি জাহাজ চালুর আগ্রহ দেখাচ্ছে। আশা করছি সামনে জাহাজ আগমনের সংখ্যা আরও বাড়বে। 

তিনি বলেন, মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প ও বে টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ চলমান। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) এ মাসেই চালু হচ্ছে। আশা করছি এখানে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। এরমধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়