Cvoice24.com

কাজের জন্য সৌদি আরব যেতেই বেশি আগ্রহী চট্টগ্রামের নারীরা

তারেক মাহমুদ

প্রকাশিত: ১১:২১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১
কাজের জন্য সৌদি আরব যেতেই বেশি আগ্রহী চট্টগ্রামের নারীরা

এক তো করোনাকাল, দ্বিতীয়ত সৌদি আরবে প্রবাসী নারীকর্মীদের ওপর অমানসিক নির্যাতনের তথ্য-চিত্র ভেসে বেড়াচ্ছে মিডিয়া ও নেট দুনিয়ায়। এরপরও সারা দেশ থেকে গেল এক বছরে ২১ হাজার ৯৩৪ নারী বিদেশে গেছেন। আর চট্টগ্রাম জেলা থেকেই গেছেন কেবল ১১ হাজার ৪৬০ নারী। তুলনা করলে যা মোট বিদেশগামী নারীর শতকরা ৫২ দশমিক ২৪ ভাগ।

সারা দেশে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বর্তমানে তৃতীয় অবস্থানে চট্টগ্রাম। তবে নারী জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সারা দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩ জেলাকে একাই পেছনে ফেলেছে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রবাসীবান্ধব পদক্ষেপের কারণেই অর্থ উপার্যনে চট্টগ্রাম থেকে নারী জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি। আর তাদের কাছে সৌদি আরবই বেশি পছন্দ। 

মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন শুরু হলে গত বছরের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দুই মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল। এরপর মে ও জুনে নতুন করে বিদেশে যাননি কেউই। সবমিলিয়ে গত বছর চট্টগ্রাম থেকে জনশক্তি রপ্তানি তুলনামূলক কমলেও বন্দর নগর থেকে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন ১১ হাজার ৪৬০ নারী। পাশাপাশি ২০১৯ সালের তুলনায় গেল বছর বেড়েছে রেমিট্যান্সেরও হার। 

চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে সারা দেশ থেকে চাকরির জন্য নতুন ভিসা নিয়ে বিদেশ গেছেন মোট ২১ হাজার ৯৩৪ নারী। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম থেকেই গেছেন ১১ হাজার ৪৬০ জন।  

এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৩ হাজার ৫৬৩, ফেব্রুয়ারিতে ৩ হাজার ১৫০ এবং মার্চে ৩ হাজার ৯৩ চট্টগ্রামের নারী চাকরির জন্য মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে গেছেন। 

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয় মার্চে। এরপর লকডাউন শুরু হলে ওই মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দুই মাসের বেশি সময় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে এপ্রিলে চট্টগ্রাম থেকে কর্মসূত্রে বিদেশগামীর সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ছয়জনে। মে ও জুনেও নতুন কেউ বিদেশে যাননি। 

জুলাই মাসে একজন, অগাস্টে তিন এবং সেপ্টেম্বরে একজন বিদেশ গেছেন। আর অক্টোবরে ৩৫, নভেম্বরে ৩১০ এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৭৫৩ নারী পাড়ি জমান বিদেশে। 

সব মিলিয়ে গেল বছর সৌদি আরবে ১২ হাজার ৭৩৫, আরব আমিরাতে ৬৬৪, কুয়েতে ৭০, ওমানে ৩ হাজার ৩৫৮, কাতারে ৮০৯ জন, লেবাননে ১৯১ জন, জর্দানে ৩ হাজার ৬৬১ নারী বিদেশে গেছেন। এছাড়াও মালয়েশিয়ায় নয়জন, সিঙ্গাপুরে ২১ জন, যুক্তরাজ্যে সাতজন, হংকংয়ে ৬৬ জন, সাইপ্রাসে ১০ জন, ব্রুণাইয়ে দুজন, মরিসাসে পাড়ি জমান ২৮০ নারী। তবে বাহরাইন, লিবিয়া, ইতালি ও পাকিস্তানে যাননি কেউই। 

দেশের রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন নারী শ্রমিকরা। ২০২০ সালে ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ধরে), ২০১৯ সালে ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ১৩ লাখ ১৭ হাজার ৭২২ কোটি টাকা রেমিট্যান্স পাঠান নারীরা। 
এক সময় নারীদের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা খুব কম থাকলেও ২০০৪ সাল থেকে তা বাড়ছে। আর ২০১৫ সালে সৌদি আরবের শূন্য অভিবাসন ব্যয়ে যাওয়ার সুযোগের পর থেকে সেই আগ্রহে নতুনমাত্রা যোগ করেছে। 

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সারাদেশ থেকে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৮৬ জন, ২০১৮ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৬৯৫ জন, ২০১৭ সালে ১ লাখ ২১ হাজার ৯৯৫ জন, ২০১৬ সালে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৮ জন নারী বিদেশে পাড়ি জমান। 

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির সচিব ড. মুহাম্মদ আবদুল জলিল সিভয়েসকে বলেন, ‘করোনার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশে লোক পাঠানোর কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে ভাইরাসটির ভ্যাকসিন চলে এসেছে, প্রয়োগও করা হচ্ছে। তাই বিমানপথে, নৌপথে অথবা বৈধ যেকোনো প্রক্রিয়ায় আরও বেশি সংখ্যক লোক বিদেশে পাঠানো সম্ভব হবে। কাজের জন্য নারীদেরও বর্তমানে প্রবাসে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে জর্দানে পোশাককর্মী ও হংকংয়ে গৃহকর্মী নেওয়া হচ্ছে। এই দেশগুলো বাংলাদেশি ৫১ হাজার টাকায় নারী শ্রমিক নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই শত শত নারী প্রবাসে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ভিড় জমাচ্ছেন। নারীদের বিদেশযাত্রার যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে সামনে তা আরও বাড়বে বলে আমি মনে করি।’

প্রবাসে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে আবদুল জলিল বলেন, ‘সৌদি আরবে বাংলাদেশি গৃহকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন- এমন দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বাকি সব নারী শ্রমিকরা প্রবাসে ভালোই আছেন। তবে নির্যাতিত নারী শ্রমিকদের আত্মীয়-স্বজন বা অন্যকোনো মাধ্যমে খবর পেলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের উপ-পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি অনলাইন গণমাধ্যম বলে সিভয়েসকে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

-সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়