Cvoice24.com

করোনাকালেও বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয়  

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৫৮, ৫ মার্চ ২০২১
করোনাকালেও বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয়  

করোনারকালেও বাড়ছে বন্দরের রাজস্ব আয়  

মহামারী করোনাভাইরাসের ধাক্কায় প্রায় ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে সংকটময় সময় পার করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক গতি ফিরে আসায় সে ধাক্কা সামলে উঠতে শুরু করেছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে জাহাজের সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি বন্দরের সক্ষমতাও বেড়েছে। এ বন্দর দিয়ে পোশাক, ওষুধ, জুতা, ইস্পাত, বাণিজ্যিক পণ্য ও ভোগ্যপণ্যের আমদানি বেড়েছে। পাশাপাশি গার্মেন্টস পণ্য, সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতেও পিছিয়ে নেই বন্দর। ফলে করোনার প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও আমদানি-রপ্তানির মেলবন্ধন ঘটিয়ে রাজস্ব আয়ে চমক দেখিয়ে চলছে দেশের প্রধান সমুদ্র চট্টগ্রাম বন্দর।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর রাজস্ব আদায় করে ২ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। তাছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ হাজার ৪০৮ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে সংস্থাটি। অপরদিকে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয় ১ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। 

চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানিকৃত পণ্যের ২৫ শতাংশ কন্টেইনারে করে পরিবহণ করা হয়। বাকি পণ্যগুলো বাল্ক আকারে (জাহাজের খোলে) আনা-নেওয়া হয়। প্রায় সব শিল্পকারখানার কাঁচামাল কনটেইনারে করে আমদানি করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্য তালিকার মধ্যে রয়েছে পোশাক, ওষুধ, জুতা, ইস্পাত, বাণিজ্যিক পণ্য, ভোগ্যপণ্য ইত্যাদি। এদিকে আসন্ন রমজানকে ঘিরে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্যের আমদানি বেড়েছে। তবে এবার নিট পোশাকের পাশাপাশি আলুর রপ্তানিও বেড়েছে। রপ্তানি করা হচ্ছে ব্রুনাই, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আলু রপ্তানি হয়েছে ৭ হাজার ৪৮১ মেট্রিক টন। 

চলতি ২০২০–২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই–ফেব্রুয়ারি) ২ হাজার ৫৮৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের তুলনায় কম। গত বছর মোট পণ্য রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। রপ্তানিতে নিট পোশাক ভালো করলেও দুর্দশা কাটছে না ওভেনের। ফলে সামগ্রিকভাবে পৌনে ৪ শতাংশ পোশাক রপ্তানি কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের আট মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ১০২ কোটি ডলার। তার মধ্যে ১ হাজার ১৩৩ কোটি ডলারের নিট ও ৯৬৮ কোটি ডলারের ওভেন পোশাক রয়েছে। 

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যবাহী ১ লাখ ২৩ হাজার এবং রপ্তানি পণ্যবাহী ও খালি ১ লাখ ২০ হাজার কনটেইনার পরিবহন হয়েছে। গত বছর চট্টগ্রাম বন্দরে ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৭ টিইইউ কনটেইনার ওঠানামা করে। ২০১৯ সালে এর সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ টিইইউ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কনটেইনার ওঠানামা কমেছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ২১০ টিইইউ। 

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ভর্তি এফেসিএল কন্টেইনার জট কমাতে এবার স্বাভাবিক ভাড়ার ওপর দ্বিগুন হারে স্টোররেন্ট আরোপ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ল্যান্ডিং ডেট’র পর ১১তম দিন থেকে এই স্টোররেন্ট কার্যকর হবে। গত ১ মার্চ সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে সময় ৮ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, ‘করোনার ধাক্কা অনেকটা কাটিয়ে ওঠার পর দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েও কনটেইনার পরিবহন বাড়তে শুরু করেছে। এ বছর বন্দরের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হবে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। তাতে বন্দরের কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সক্ষমতা আরও বাড়বে।’ 

চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান সিভয়েসকে বলেন, ‘গেল বছর করোনার কারণে পণ্য খালাসে সমস্যা হলেও বন্দরের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম সচল থাকায় রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। জাতীয় সেবা খাত হয়েও বন্দরের এমন আয় জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।’

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম এশিয়ার সপ্তম এবং বিশ্বের দশম দ্রুততম ক্রমবর্ধমান শহর। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯৩ শতাংশ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। সমুদ্রপথে কনটেইনারে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ৯৮ শতাংশ হয় এ বন্দর দিয়ে। দেশের ৬৫ শতাংশ রাজস্ব আহরিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমসের মাধ্যমে।

-সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়