Cvoice24.com

আতপ চালে ‘আগুন’

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:০৬, ৭ মার্চ ২০২১
আতপ চালে ‘আগুন’

আতপ চালে বস্তা প্রতি ২শ’ টাকা করে দাম বেড়েছে।

মিল মালিকদের সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দীর্ঘ তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে চালের বাজারে। আতপ চাল নিয়েও নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে। আমদানির অনুমোদন না থাকায় বাজারে আতপ চালের সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে যোগানের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় অন্যান্য চালের তুলনায় আরো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বাঙ্গালির প্রধান খাদ্য দ্রব্যটি। বস্তাপ্রতি পাইকারিতে দাম বেড়েছে ২শ’টাকা। এই দর খুচরা বাজারে গিয়ে কেজি প্রতি ৫ টাকা করে বাড়ছে। 
 
ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামে আতপ চালের চাহিদা বেশি। সামনে রমজান মাস আসছে। আতপ চালের চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। কিন্তু যে হারে চাহিদা তার তুলনায় যোগান নেই। আমদানি থাকলে বাজারদর আরেকটু স্বাভাবিক থাকতো। কিন্তু এ চাল আমদানিতে অনুমতি না মেলায় বাজারে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে। আগামী এপ্রিল পর্যন্ত আতপ চালের ঘাটতি থাকবে। আমদানি না হলে বা নতুন ফলন বাজারে না আসা পর্যন্ত এ চালের দাম বাড়তে থাকবে।

শনিবার (৬ মার্চ) নগরের পাহাড়তলী চাল বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়তি দাম থাকলেও অন্যান্য চালের সরবরাহ ভালোই রয়েছে। কিন্তু আতপ চালে বাড়তি দামের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে সংকট। আমদানি না থাকায় নতুন করে এ চাল কিনতে না পেরে আগের সংগ্রহ করা চালই বিক্রি করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। পাহাড়তলীর পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ২০০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি করছেন আতপ চাল। বাজারে মিনিকেট আতপ ৩ হাজার টাকায় এবং কাটারি আতপ ৩ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাহাড়তলীর চাল ব্যবসায়ীরা মূলত গাইবান্ধা, দিনাজপুর, আশুগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে আতপ চাল সংগ্রহ করে থাকেন। চট্টগ্রামে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ টন আতপ চাল আসছে। যা চাহিদার তুলনায় খুবই নগণ্য।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুয়ায়ী, বন্দরের সাত নম্বর জেটিতে ২০ হাজার টন আতপ চাল বোঝাই একটি জাহাজ খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এসব চাল খোলা বাজারের জন্য নয় ; পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার জন্য সরকারিভাবে এসব চাল আমদানি করা হচ্ছে।

জানা গেছে, দেশের অভ্যন্তরে গত তিন মাসে আতপ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে ১৪ মেট্রিক টন। আতপ চাল আমদানির জন্য মায়ানমার, ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের সাথে যোগাযোগ করছে সরকার।

পাহাড়তলীর ব্যবসায়ী সিফাত স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী লিয়াকত আলী সিভয়েসকে বলেন, ‌‘চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় আতপ চালের দাম বেশি। তাই এই মুহূর্তে সরকারের উচিত বেসরকারি পর্যায়ে আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেয়া। এতে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে চালের দাম কমিয়ে দেবে। ফলে চালের বাজারও আসবে নিয়ন্ত্রণে।’

পাহাড়তলী বাজারে চাল কিনতে আসা গৃহিণী সুলতানা ইয়াসমিন সিভয়েসকে বলেন, ‘চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা চেষ্টা করলেও সেদিকে কর্ণপাত করছেন না মিল মালিকরা। তিন মাস পার হয়ে গেল অথচ পাইকারি আর খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েই চলেছে। আমার বাচ্চারা আতপ চালের ভাত খেতে পছন্দ করে। কিন্তু আতপ চালের দাম অন্য চালের তুলনায় আরো বেশি। সব মিলিয়ে আমরা সাধারণ মানুষ খুবই বিপাকে পড়েছি।’

পাহাড়তলী বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন সিভয়েসকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে চালের বাজার অস্থির। বাজারে ক্রেতাও তুলনামূলকভাবে কমে গেছে। মূলত মিল মালিকরাই চালের সিন্ডিকেট করেছে। ফলে চালের দাম আবার বেড়ে গেছে। চট্টগ্রামের মানুষ আতপ চালের প্রতি বেশিই আকৃষ্ট। কিন্তু আমদানি অনুমোদন না পাওয়ায় বাজারে আতপ চালের সংকট দেখা দিয়েছে। মোটা চালের দামও বেড়ে গেছে। এতে সমস্যায় পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ।’

একই কথা জানিয়ে চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম সিভয়েসকে বলেন, ‘সরকার আতপ চালের আমদানির অনুমতি না দেয়ার চালের দাম বেড়েছে।এখন কেজি প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা করে বেড়েছে। বস্তা প্রতি বেড়েছে ২০০ টাকা। আমদানি অনুমতি না দিলে দাম আরো বাড়তে পারে।’

জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সিভয়েসকে বলেন, ‘মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তাই চিহ্নিত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এখন সময়ের দাবি। এদিকে রমজানের আর বেশি দেরি নেই। এখন থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। তাই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে এনে এখন থেকে আমদানি, বিতরণ ও ভোক্তা পর্যায়ে বিপনণে সুষ্ঠু তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।’

-সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়