Cvoice24.com

মশা তাড়ানোর সরঞ্জাম বাজার জমজমাট

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:১২, ২০ মার্চ ২০২১
মশা তাড়ানোর সরঞ্জাম বাজার জমজমাট

মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। কয়েল জ্বালিয়েও মশা দমন করা যাচ্ছে না। তাই ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার ভয়ে সন্ধ্যা নামলে কয়েল জ্বালানোর পাশাপাশি মশারি টাঙিয়েই মশার কামড় থেকে বাঁচার চেষ্টা মানুষের। এসবের পাশাপাশি অনেকেই কিনছেন মশানিরোধক সরঞ্জামাদি। মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশা মারার পণ্য কয়েল, ইলেকট্রিক ব্যাট, লোশন ও স্প্রে ব্যবহার করছেন প্রায় সবাই। আগের তুলনায় এসব সরঞ্জামাদির বিক্রিও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে চাহিদা বেশি থাকায় বাড়তি দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা, এমনটাই অভিযোগ ক্রেতাদের।  

শনিবার (২০ মার্চ) সকালে নগরের রিয়াজউদ্দীন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্প্রে, মশারি, কয়েল, ওডোমস ক্রিম ও অ্যারোসলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। সরবরাহও ছিল বেশ ভালো। প্রায় প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। 

ব্যবসায়ীরা জানান, নগরে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। তাদের কষ্ট দূর করতে বিভিন্ন কোম্পানির মশা মারার সরঞ্জাম আমদানি বাড়িয়েছেন তারা। ইলেকট্রিক ব্যাট, এ্যরোসল ও জেলের মত ইন্সট্যান্ট মশা মারার পণ্যের বিক্রি বেড়েছে। তবে সব মিলিয়ে ইলেকট্রিক ব্যাটের চাহিদা বেশি। ইলেকট্রিক ব্যাটগুলো আমদানি করা হচ্ছে চায়না থেকে। 

মায়া ইলেকট্রনিক্সের স্বত্তাধিকারী মোহাম্মদ ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে মশার উপদ্রব বেড়েই চলেছে। তাই নগরবাসী মশা মারার সরঞ্জাম কিনতে ভীড় জমাচ্ছেন। গতকাল একদিনে ৪৫টা ইলেকট্রিক ব্যাট বিক্রি হয়েছে। আগে সারা মাসেও এতটা বিক্রি হতো না। শারীরিক ক্ষতি ও ঘরের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অনেকে কয়েল ব্যবহার করতে চান না। ইলেকট্রিক ব্যাট ব্যবহারেই আগ্রহ বেশি ক্রেতাদের।’ 

আলিফ অ্যান্ড ব্রাদার্স-এর মালিক এনায়েত কবীর বলেন, ‘যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো তারাই মশা মারার জন্য ইলেকট্রিক ব্যাট কিনছেন। তবে নিম্নবিত্তরা এখনো কয়েলের উপর ভরসা করেন। তাই মশার কয়েলের বিক্রিতেও মন্দাভাব আসেনি। আমরা সাত থেকে আট প্রকারের কয়েল বিক্রি করে থাকি। ৩০ প্যাকেট মশার কয়েল থাকে একটি কার্টনে। প্রতি প্যাকেট কয়েল মানভেদে ২৭ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

খুচরা মশারি বিক্রেতা মো. আনোয়ার সিভয়েসকে বলেন, ‘আধুনিক নানা যন্ত্র ও সরঞ্জামের আগমন ঘটলেও এখনো আমাদের দেশের মানুষ মশারির উপরে ভরসা রাখেন। কারণ মশারি ব্যবহার করাটা যথেষ্ট নিরাপদ। প্রতি বছর এ সময়টাতে মশারির বিক্রি বেড়ে যায়। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ পিস মশারি বিক্রি করছি।’

নগরের আগ্রাবাদের বাসিন্দা হাসান মুরাদ সিভয়েসকে বলেন, ‘মশার উপদ্রবে মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় দেশ ছেড়ে চলে যাই। বাসায় মশার কয়েল জ্বালিয়ে কোন লাভ হয় না। জ্বালানো কয়েলের উপরে দলবেঁধে মশা ঘুরতে থাকে। এ যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচতে আমার জন্য একটা স্প্রে ও মায়ের জন্য একটা ইলেকট্রিক ব্যাট কিনেছি। তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পণ্যগুলোর বাড়তি দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা।’ 

নগরের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাটে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। আগে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া ইলেকট্রিক ব্যাট এখন মানভেদে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে মশা মারার ছোট সাইজের স্প্রে ১৮০ টাকায়, মাঝারি সাইজের স্প্রে ৩০০ টাকায় ও বড় সাইজের স্প্রে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া আগে ৯০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হওয়া মর্টিনের লিকু্ইড রিফিল সাইজভেদে ১০০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে ১৩০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হওয়া ইলেকট্রনিক স্প্রে মর্টিন সাইজভেদে ১৫০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে ওডোমসের দাম। ওডোমস সাইজভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।  

এদিকে মশার উপদ্রবের সুযোগ নিয়ে ভেজাল কয়েল বানাতে তৎপর হয়ে উঠেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাজে ধীরগতি থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন নগরবাসী। অন্যদিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব মশার কয়েলের মান ও বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব যাদের কাঁধে সেই বিএসটিআই—ও অপেক্ষায় আছে ক্ষতিগ্রস্থ কোনও নাগরিক কখন অভিযোগ করেন সেই আশায়। যদিও গতবছর ভেজাল মশার কয়েল কারাখানায় অভিযান চালিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  

নগরের দোকানগুলোতে বিভিন্ন নামের বুস্টার শ্রেণিভুক্ত কয়েল প্রতি পিচ ১০ টাকায় ও প্রতিটি প্যাকেট কয়েল এখন মানভেদে ২৭ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

মশক নিয়ন্ত্রণের জন্য নানা আধুনিক নানা ব্যবস্থা থাকলেও এখনো সবার ভরসা মশারিতে। তাই মশারির দোকানগুলোতেও মানুষের ভীড়ের কমতি ছিল না। রিয়াজউদ্দীন বাজারে বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সুতা ও নকশার ওপর ভিত্তি করে ১৮ থেকে ২০ ধরনের মশারি পাওয়া যায়। এসব মশারি মানভেদে ২০০ থেকে শুরু করে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়।

জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদাউস সিভয়েসকে জানান,  কীটনাশক ও প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে প্রত্যেক প্রজাতির মশা তাদের জিনগত পরিবর্তন করে থাকে। যে কীটনাশক এখন দেয়া হচ্ছে বা বিগত দুই থেকে তিন বছর ধরে দেয়া হয় সেটার বিরুদ্ধে মশা সহনশীলতা তৈরি করে ফেলে। এটাকে ইনসেক্টিসাইড রেজিস্ট্যান্স বা কীটনাশক সহনশীলতা বলা হয়। একটা সময়ে এটা এদের জিনগত সহনশীলতায় পরিবর্তন নিয়ে আসে, যা পরবর্তী প্রজন্মেও ট্রান্সফার হয়। এ কারণে মশার ওষুধ আর কাজ করছে না।

নগরবাসীকে সতর্ক করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক ও সার্জারী বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান সিভয়েসকে জানান, মশার উপদ্রব কমাতে চট্টগ্রামবাসী এ্যরোসাল স্প্রে ব্যবহার করে থাকে। তবে মনে রাখতে হবে এটি একটি বিষ। ঘরে এ্যরোসাল ব্যবহারের সময় অন্তত ১০ মিনিট শিশুদের বাইরে রাখার পরামর্শ দেনে তিনি।

-সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়