Cvoice24.com

ফের লকডাউনে কাপড় ব্যবসায়ীদের কপালে ভাঁজ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৩১, ২০ এপ্রিল ২০২১
ফের লকডাউনে কাপড় ব্যবসায়ীদের কপালে ভাঁজ

করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউন শেষ হওয়ার আগে ফের আরও সাতদিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে মুনাফার আশায় বিনিয়োগও করেছেন অনেক কাপড় ব্যবসায়ী। কিন্তু সরকার ঘোষিত আরও এক সপ্তাহের লকডাউনে ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। টানা লকডাউনে ব্যবসায় আবারও ধস নামার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

নগরের বিভিন্ন শপিংমল ও বিপণি বিতানে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগে এই সময়ে দোকান জমজমাট থাকতো। ব্যবসার মৌসুমেও করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারছেন না তারা। গত বছরও এই সময়ে মার্কেট বন্ধ ছিল। এবারের ঈদে ব্যবসা করে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন— এমন আশায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কাপড়ও কিনে রেখেছেন অনেকে। কিন্তু দফায় দফায় যে হারে লকডাউন বাড়ছে তাতে অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে— এমনটাই জানালেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামে থান কাপড়ের সবচেয়ে বড় পাইকারি বিপণি এলাকা টেরিবাজার। চীন, ভারত, পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজের থান কাপড় পাইকারি দামে বিক্রি হয় এখানে। দু’বছর আগেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাকডাকে মুখোরিত থাকতো পুরো এলাকা। এবার লকডাউনের প্রভাবে সে আমেজ আর চোখে পড়ে না। আগে প্রতি ঈদের মৌসুমে টেরিবাজারে ১২’শ থেকে ১৫’শ কোটি টাকার ব্যবসা হতো। অথচ এবার ব্যবসাটাই টিকে থাকবে কিনা তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে।

এছাড়া রিয়াজউদ্দীন বাজারেও আছে দেশি-বিদেশি থান কাপড়ের সম্ভার। সেখানকার ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে তারাও দুশ্চিন্তা আর অনিশ্চয়তার কথা জানান।

টেরিবাজারের থান কাপড় বিক্রেতা চমক ফ্যাশনের স্বত্ত্বাধিকারী পুলক বড়ুয়া সিভয়েসকে মুঠোফোনে বলেন, ‘আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে লকডাউনের আগে কিছু চালান এনে দোকানে মজুদ করেছিলাম। অধিকাংশ কাপড়ই অবিক্রিত অবস্থায় রয়ে গেছে। এই কাপড়গুলো দিয়ে আমরা কি করব? গত বছরও দোকান বন্ধ থাকায় কর্মচারীদের ঠিকমত বেতন-বোনাস দিতে পারিনি। এবারও দিতে পারব কিনা বুঝতে পারছি না।’

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান সিভয়েসকে বলেন, ‘লকডাউনের প্রভাবে ব্যবসায়িক মন্দায় ২০২০ সালে আমরা সব ব্যবসায়ীরা একবার মরেছি। এবারও আরেকবার মরার সম্ভাবনা দেখছি। দফায় দফায় লকডাউন বাড়ছে। কোনভাবেই আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না। আমরা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে মালামাল কিনেছি। ব্যবসা করতে না পারলে টাকা শোধ করব কিভাবে? সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ আমাদেরকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার। অথবা আমরা যাতে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ব্যবসা করতে পারি সে সুযোগ করে দেয়ার দাবি জানাই।’

এদিকে চট্টগ্রাম দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার তথ্যমতে, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা মিলিয়ে দোকান মালিক সমিতির অধীনে ১ হাজার ৮শ এর মত মার্কেট রয়েছে। তারমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে শ’খানেক মার্কেট চালু রয়েছে। 

চট্টগ্রাম মহানগরে উল্লেখযোগ্য বিপণি বিতানগুলোর মধ্যে রয়েছে- মিমি সুপার মার্কেট, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, ফিনলে স্কয়ার, সানমার ওশান সিটি, সেন্ট্রাল প্লাজা, আফমি প্লাজা, আমিন সেন্টার, আখতারুজ্জামান সেন্টার ও সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট।

আখতারুজ্জামান সেন্টারের মুক্তা ফ্যাশন হাউজের স্বত্ত্বাধিকারী আবু বকর সিভয়েসকে বলেন, ‘ভেবেছিলাম চলমান লকডাউন শেষ হওয়ার পর লকডাউন শিথিল করবে সরকার। আমরাও ব্যবসা করার সুযোগ পাবো। কিন্তু আরও এক দফা বাড়ানো হল লকডাউন। গত বছরের মত এবারও খারাপ পরিস্থিতি দেখছি। আমার দোকানে ৩ জন কর্মচারি রয়েছে। তার উপর ব্যাংক লোন নিয়ে মালামাল কিনেছি। এখন আমাদের ব্যবসা করার মৌসুম। আর এ সময়টাতে সরকারের নির্দেশ মেনে দোকান বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’

নগরের আগ্রাবাদে লাকী প্লাজার আলহেরা স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী আবু তৈয়ব সিভয়েসকে বলেন, ‘গতবছর ঈদের জন্য যে টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম, করোনার কারণে তা পুষিয়ে নিতে পারিনি। এবারও যদি ঈদে মার্কেট খুলতে না পারি তাহলে পথে বসা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় থাকবে না।’

নাসিরাবাদে সানমার ওশান সিটির কাপড় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন সিভয়েসকে বলেন, ‘দু’বছর আগেও এই সময়টাতে আমরা জমজমাট ব্যবসা করেছি। গত বছর ব্যবসা মন্দা গেছে। এবছরও ভাল ব্যবসা করতে পারব— এমন কোন সম্ভাবনা দেখছি না। যেহেতু আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য এখন বন্ধ, আমরা ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে প্রণোদনা দাবি করছি।’

মিমি সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘দিন দিন করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। সেই সাথে দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে লকডাউন। আমরা লকডাউনের বিরুদ্ধে নই। তবে সবদিক বিবেচনা করে আমাদেরকেও ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া উচিত। কারণ ব্যবসায়ে আমাদের পুঁজি আছে। দোকান বন্ধ থাকলেও দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারিদের বেতন কিন্তু বন্ধ নেই। তাই সরকারের উচিত আমাদের দিকটিও সদয় বিবেচনা করা। কারণ গতবছরও লোকসান গুণতে হয়েছে। এবারও যদি এমন হয় তাহলে দেয়ালে পিঠ থেকে যাবে।’

চট্টগ্রাম দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ছালেহ আহমেদ সোলেমান বলেন, ‘দফায় দফায় লকডাউন ঘোষণা করার কারণে ব্যবসায়ীদের মনে হতাশা নেমে এসেছে। লকডাউনের কারণে যদি ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে না পারে তাহলে একটা সময় অনেকে দেউলিয়া হয়ে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে নেবে, কর্মচারিরা কাজ হারাবে। তাই মার্কেটগুলোকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত সিভয়েসকে বলেন, ‘বিভিন্ন বিপণি বিতান ও মার্কেটগুলোতে যারা ব্যবসা করেন তারা কিন্তু অর্থনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পোশাকেই কিন্তু হাজার কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। মানুষকে ভাল রাখতে, সুস্থ রাখতে, করোনার সংক্রমণ কমাতে লকডাউনের যেমন প্রয়োজন রয়েছে, ঠিক তেমনি অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ব্যবসায়ীদেরকে শর্তসাপেক্ষে ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার সুযোগটা দেয়া প্রয়োজন।’

-সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়