Cvoice24.com

ওয়ান স্টপ শপিং মলের ধাক্কায় ক্রেতা হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মলগুলো

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৫৫, ২ মে ২০২১
ওয়ান স্টপ শপিং মলের ধাক্কায় ক্রেতা হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মলগুলো

ক্রেতাশূন্য নগরের ঐতিহ্যবাহী মলগুলো

ঈদের কেনাকাটা মানেই বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমলের এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করে নিজের পছন্দসই জামাকাপড় কেনাকাটা। তবে কালের বিবর্তনে সে জৌলুস এখন আর চোখে পড়ে না। করোনা, লকডাউন, রোজা, তীব্র দাবদাহের কারণে ঈদের কেনাকাটায় এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ওয়ান স্টপ শপিংমল। যেখানে এক ছাদের নিচে ক্রেতারা তাদের পছন্দমত নিজের সব ধরনের পোশাক কেনাকাটা করতে পারবেন। এদিকে ওয়ান স্টপ শপিংমলের প্রভাবে নগরের শপিং কমপ্লেক্স, ভিআইপি টাওয়ার, মিমি সুপার মার্কেট ও অ্যাপলো শপিং সেন্টারের মত বড় বড় শপিংমলগুলোতে তুলনামূলক কমে গেছে ক্রেতার সংখ্যা।

এক সময় নগরের বড় বড় শপিংমলগুলো থেকে ঈদের কেনাকাটা সেরে সগৌরবে সেই মলগুলোর নাম বলতেন ক্রেতারা। কিন্তু বর্তমানে এসব মার্কেটে ক্রেতার হার অনেকাংশেই কমে গেছে।

চট্টগ্রামে থান কাপড়ের সবচেয়ে বড় পাইকারি বিপণি এলাকা টেরিবাজার। চীন, ভারত, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজের থান কাপড় পাইকারি দামে বিক্রি হয় এখানে। সেখানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে ঈদের কেনাকাটায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে ওয়ান স্টপ শপিংমল। টেরিবাজারে গড়ে ওঠা ওয়ান স্টপ শপিং মলগুলোতে দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়।

টেরিবাজারে গত কয়েক বছরে প্রায় অর্ধ শতাধিকেরও বেশি ওয়ান স্টপ শপিং মল গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে মাসুম ক্লথ স্টোর, সানা ফ্যাশন, রাজপরী, জারা শপ, জাবেদ ক্লথ স্টোর, বৈঠক বাজার, ভাছাভি, মনে রেখ, শাহ আমানত, পরশমনি, শিরমনি, রাঙ্গুলি, ফেমাস, আলিশা, হারুন এন্ড ব্রাদার্স, রাজস্থান, মল টোয়েন্টি ফোর, মুহম্মদীয়া, হ্যালো ফ্যাশন, গোল আহমদ, নিউ রাজস্থান, মৌচাক, মেগামার্ট, আলমগীর, বাগদাদ এ্যাম্পোরিয়াম, নিউ আজমির অন্যতম।

বন্দর থেকে ট্রাকে করে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা থান কাপড় আসে টেরিবাজারে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে নগরের বিভিন্ন বাজারে। শুধু থান কাপড় নয়, শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট, পাজামা, পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজসহ বিভিন্ন পোশাক বিক্রি হচ্ছে এখানে।

রবিবার (২ মে) দুপুরে টেরিবাজারের পরশমনি শপিং মলে দেখা গেছে, ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। কেউ শাড়ি দেখছেন, কেউবা থ্রি-পিস। নির্ধারিত বাজেটের মধ্যেই পছন্দের নতুন পোশাক কিনছেন ক্রেতারা।

পরশমনির মালিক মো. ইসমাইল হোসেন সিভয়েসকে বলেন, ‘লকডাউনের কারণে আমাদের ব্যবসার অলরেডি অর্ধেক লোকসান হয়ে গেছে। তবে ঈদকে সামনে রেখে এখন ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় মানুষের আসতে কষ্ট হচ্ছে। আমরা এতটা সমাগম আশা করিনি। পাশাপাশি লকডাউন, রোজা, তীব্র গরমের কারণে মানুষ এখন দোকানে দোকানে ঘুরতে চায় না। ফলে ওয়ানস্টপ শপিংমলগুলো এখন বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ক্রেতারা এখন একই দোকান থেকে পছন্দের কাপড় কিনতে পারছেন।’

পরশমনিতে নগরের বেপারি পাড়া এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঈদের পোশাক কিনতে এসেছেন নজরুল ভূঁইয়া। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘বিভিন্ন দোকানে গিয়ে পছন্দ করে বাজার করা খুবই কষ্টের। পরশমনিতে পছন্দের কাপড় পাওয়া যায়। তাই এখানে চলে এসেছি।’

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান সিভয়েসকে বলেন, ‘আগে ঈদের আমেজে মানুষ নগরের বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে কেনাকাটা করতো। এখন সেই ধারার পরির্বতন হয়েছে। ক্রেতারা এখন এদিক-সেদিক না ঘুরে এক জায়গা থেকে স্বস্তিতে কেনাকাটা করতে চান। ক্রেতাদের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে এসব ওয়ান স্টপ শপিং মল গড়ে উঠেছে। ফলে ভালো ব্যবসা করেছে চট্টগ্রামের নতুন ধারার শপিংমলগুলো।

এই ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, ‘এবার ঈদকে ঘিরে অধিকাংশ মানুষ রেডিমেড শার্ট, প্যান্ট ও পাঞ্জাবি কিনছেন। আগে মানুষ কাপড় কিনে সেলাই করতেন। লকডাউনের কারণে মানুষ এখন আর সে বাড়তি বোঝা কাঁধে নিতে চাচ্ছেন না। ফলে টেইলার্সের ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়ে গেছেন। লকডাউনের কারণে আমাদের মূল ব্যবসার সময় নষ্ট হয়েছে। তাই আমরা সরকারের কাছে প্রণোদনা দাবি করছি।’

এদিকে টেরিবাজার কেন্দ্রিক ওয়ান স্টপ শপিং মলের কারণে নগরের বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় অনেকটাই কমে গেছে।

মিমি সুপার মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘একেকটি ওয়ান স্টপ শপিং মলে মার্কেটের প্রায় ৫০ থেকে ১শ দোকানের সমান পণ্য রয়েছে। ফলে ক্রেতারা ওয়ান স্টপ শপিং মলে বসেই প্রয়োজনীয় সব কেনাকাটা সারছেন। ফলে আমাদের এখানে ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে।’

নগরের কাজীর দেউড়ি ভিআইপি টাওয়ারে আলভি ফ্যাশনের মালিক রফিকুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘আগে যা লোকসান হয়েছে তা কমানোর আশায় এবার বেশকিছু নতুন চালান এনেছিলাম। লকডাউনের কারণে ও টেরিবাজারের ওয়ান স্টপ শপিংমলগুলোর কারণে আমরা ক্রেতা হারাচ্ছি। শুধু ভিআইপি টাওয়ার নয়, অন্যান্য পুরনো শপিংমলগুলোতেও ক্রেতার আনাগোনা কমে গেছে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়