Cvoice24.com

দর্জিপাড়ায় নেই সেই ব্যস্ততা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৫৯, ৩ মে ২০২১
দর্জিপাড়ায় নেই সেই ব্যস্ততা

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরে বছর দুয়েক আগেও ব্যস্ত  সময় পার করতেন দর্জি ব্যবসায়ীরা। কাপড়ের অর্ডার নিতে হিমশিম খেতেন তারা। রাত-দিন সমানতালে বাজতো সেলাই মেশিনের শব্দ। তবে বর্তমান চিত্র একেবারেই  ভিন্ন। লকডাউন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গতবারের মত এবারো কর্মব্যস্ততা নেই সেলাইঘরে। ফলে দোকানে শুয়ে-বসে অলস সময় পার করছেন দর্জি মাস্টাররা। 

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরে বছর দুয়েক আগেও ব্যস্ত সময় পার করতেন দর্জি ব্যবসায়ীরা। তখন কাপড়ের অর্ডার নিতেও হিমশিম খেতেন তারা। রাত-দিন সমান তালে বাজতো সেলাই মেশিনের শব্দ। তবে বর্তমান চিত্র একেবারেই ভিন্ন। লকডাউন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা ও বিদেশি কাপড়ের দাপটে গতবারের মত এবারও কর্মব্যস্ততা নেই সেলাইঘরে। ফলে দোকানে শুয়ে-বসে অলস সময় পার করছেন দর্জি মাস্টাররা।

নগরেরর বিভিন্ন এলাকার দর্জি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পছন্দের পোশাকে বৈচিত্র্য দেওয়ার ক্ষেত্রে লেইসের জুড়ি মেলা ভার। বৈচিত্র্যময় এসব লেইস পোশাকের ফ্যাশনে অন্যতম অনুষঙ্গ। এক টুকরা লেইস ব্যবহারে পোশাক হয়ে উঠে আরও বেশি আকর্ষণীয়। ফলে বিভিন্ন বয়সের নারীরা দোকানে ছুটে আসতেন। পাশাপাশি ঈদের সময় অনেকে শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবীর থান কাপড় কিনে সেলাইঘরে ভিড় জমাতেন। কিন্তু এখন আর ঈদের সেই আমেজ নেই। লকডাউন সব নষ্ট করে দিয়েছে। পাশাপাশি দামে কম পাওয়ায় বিভিন্ন দেশের পোশাক আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। করোনা আতঙ্কে মানুষ এখন এসব পোশাকের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। এদিকে দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ। সব মিলিয়ে দর্জিঘরে ব্যবসা নেই বললেই চলে।
 
দর্জি ব্যবসায়ীরা আরও জানান, প্রতি বছর রমজান মাস এলেই তাদের একটি টার্গেট থাকে। গত বছর থেকে করোনার কারণে সব ভেস্তে গেছে। বউ-বাচ্চা নিয়ে বেঁচে থাকাটাই এখন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান তারা।

চট্টগ্রামে সেলাই করা পোশাকের অন্যতম জনপ্রিয় পাইকারি বাজারে পরিণত হয়েছে খলিফাপট্টি। বর্তমানে এখানে প্রায় চার’শ দোকান রয়েছে। প্রধানত শিশু ও মেয়েদের পোশাক তৈরি করা হয় এখানে। কিছু কিছু কারখানায় পুরুষের প্যান্টও তৈরি হয়। হকার্স মার্কেট থেকে শুরু করে অনেক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মার্কেটেও শোভা পায় এখানকার পোশাক। তবে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বদলে গেছে সব চিত্র। তেমন একটা অর্ডার না থাকায় শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে এসব এলাকাজুড়ে।

খলিফাপট্টির দর্জি ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দু’বছর আগেও ঈদকে কেন্দ্র করে পোশাক তৈরির ধুম পড়তো এখানে। নগরের শপিং মলে যেতো খলিফাপট্টির তৈরি পোশাক। তবে এখন সেই জৌলুস নেই। দোকানিদের অনেকেই বিদেশমুখী হয়েছেন। বিদেশ থেকে আমদানি করা কাপড় বিক্রি করছেন তারা। কারণ কমদামে এসব পোশাক কিনে বেশি দামে বিক্রি করা যায়। লাভও বেশি থাকে।

রাকিব ফ্যাশনের স্বত্ত্বাধিকারী মো. আবদুল গফুর সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা খলিফাপট্টির ব্যবসায়ীরা সারা বছর রমজানের ঈদের দিকে তাকিয়ে থাকি। এখানে সারা বছর যত কাজ হয়, তার ৮০ শতাংশ কাজ হয় ঈদ কেন্দ্রিক। গত বছরের মতো এবারও ঈদের মৌসুমে করোনাভাইরাসের বিস্তার হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ীর একেবারে পথে বসার অবস্থা হয়েছে।’

‘আগে আমার দোকানে এই সময় ১০ থেকে ১২টা মেশিন চালু থাকতো। সেখানে এখন কাজের অর্ডার কমে যাওয়ায় দিনে ৩টা মেশিনও ঠিকমত চলছে না। আগে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকার জামাও তৈরি হতো। এখন তার কিছুই নেই।’— বলেন আবদুল গফুর।
  
খলিফাপট্টি বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সামশুল আলম সিভয়েসকে বলেন, ‘খলিফাপট্টিতে প্রায় চার’শ এর মত দোকান রয়েছে। ছয় থেকে সাত হাজারের মত শ্রমিক কাজ করেন এখানে। তারা সারাবছর ঈদ মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। তবে এবার লকডাউনের প্রভাবে কাজের অর্ডার পাননি অনেকেই। ফলে কোন কোন কারখানা মালিক মাস্ক বানিয়ে কোনভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। তবে এভাবে বেশিদিন টিকে থাকা সম্ভব নয়। করোনা পরিস্থিতির মুখে ভয়াবহ খারাপ সময় পার করছি আমরা।’

এদিকে একই অবস্থা বিরাজ করছে নগরের টেরিবাজারে দর্জি ব্যবসায়ীদের। প্রতিবছর এ সময় তারা শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করলেও এবার একেবারেই অলস সময় পার করছেন তারা।

জান্নাত টেইলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী নাসির হোসেন সিভয়েসকে বলেন, ‘প্রতিবছর শবে বরাতের পর থেকে দোকানে কাস্টমারের ভিড়ে হিমশিম খেতে হয়। কর্মচারীদের নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করি পুরো রমজান মাসজুড়ে। অথচ এবার কাজ নেই দুইজন কর্মচারী, দোকান ভাড়া, বাসা ভাড়া ও সংসার খরচ কিভাবে দেবো বুঝতে পারছি না। সবমিলিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে বেঁচে থাকাটাই দায় হয়ে যাবে।’

মুনস্টার টেইলার্সের মালিক মো. সিয়াম বলেন, ‘চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে আমাদের দিন কাটছে। জমানো কিছু টাকা ছিল সেটিও শেষ হয়ে গেছে। দোকানভাড়া, কারখানাভাড়া ও বাসাভাড়া জমে যাচ্ছে। এগুলো কিভাবে পরিশোধ করব?’ 

তিনি আরও বলেন ‘প্রতিবছর রমজান মাসে যে ইনকাম হয় সেটা দিয়ে সারাবছর চলে যায়। অথচ গতবছর থেকে কষ্টে দিন কাটছে। অর্ডার আগের মতো নেই মানুষ রেডিমেট আইটেমের দিকে বেশি ঝুঁকছে। কাস্টমার ঝুঁকি নিচ্ছে না। এছাড়া আমার দূরের কাস্টমাররা লকডাউনের কারণে আসতে পারেনি। সব মিলিয়ে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।’

টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান সিভয়েসকে বলেন, ‘আজ থেকে বছর দুয়েক আগেও মানুষ থান কাপড় সেলাই করতে এখানে এসে ভিড় জমাতো। লকডাউনের কারণে এতদিন আমাদের ব্যবসা বন্ধ ছিল। ভেবেছিলাম দোকান খুলে দিলে সব ব্যবসায়ীরা কিছুদিন ব্যবসা করতে পারবেন। অন্যান্য পোশাকের দোকানগুলোতে ব্যবসা মোটামুটি চললেও দর্জি ব্যবসায়ীদের অবস্থা একেবারেই শোচনীয়।’ 

তিনি বলেন, ‘করোনা, লকডাউন, রোজা সবমিলিয়ে মানুষ অল্প সময় ব্যয়ে কেনাকাটা করে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। রেডিমেড পোশাকেই এখন আগ্রহ বেশি ক্রেতা-বিক্রেতাদের। তাই দর্জি ব্যবসায়ীদের লোকসানে পড়তে হচ্ছে। তাদের জন্য সরকারের কাছে প্রণোদনা দাবি করছি।’

-সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়