Cvoice24.com

এ বছর চালু হচ্ছে না পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল

তারেক মাহমুদ

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ৮ জুন ২০২১
এ বছর চালু হচ্ছে না পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল

চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চালু হওয়ার কথা ছিল চলতি মাসেই। তবে করোনার কারণে প্রকল্পের কাজে ব্যাঘাত ঘটায় তা আর হয়ে উঠছে না। তাই এক বছর পিছিয়ে টার্মিনালটি ২০২২ সালের জুনে চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ।

৩২ একর জায়গায় নির্মিতব্য টার্মিনালটি চালু হলে চার লাখেরও বেশি টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি থাকবে তেলবাহী জাহাজ ভিড়ানোর সুবিধা। নির্মাণাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল বাস্তবায়ন হলে বন্দরের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে, বাড়বে লজিস্টিক সক্ষমতা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের ১৩ জুন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের শেষ সময় ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে ব্যয় আরও ১ হাজার ৩৯৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাবের সঙ্গে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে আরডিপি বরাবর আবেদন করে প্রকল্প সংস্থা। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পে নিয়োজিত বেশ কয়েকজন শ্রমিকও করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। করোনা মহামারীতে কাজে ব্যাঘাত ঘটায় নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না সেই কাজ। আরও এক বছর সময় প্রয়োজন। 

টার্মিনালটি যাতে টেকসই হয় সে কারণে নির্মাণকাজে মরিচাপ্রতিরোধী ও লবণাক্ততা-সহনীয় লোহা ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২২ সালের জুনে পুরোদমে টার্মিনাল চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, ‘মুজিববর্ষে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের কাজ শেষ করে অপারেশনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সব ধরনের কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। এর প্রভাবে এই টার্মিনালের নির্মাণকাজও বাধাগ্রস্ত হয়। এ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।’

এদিকে গেল মার্চে টার্মিনাল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় বাস্তবায়নের জন্য ‘ইকুইপ, অপারেট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অব পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল’ প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দেয় সরকার। টার্মিনাল অপারেশন পরিচালনা ও বিনিয়োগ প্রস্তাবে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ভারতের আদানি পোর্ট আ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড ও সিঙ্গাপুরের পিসিএর মত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রাক-সমীক্ষা অনুযায়ী প্রকল্পটির সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বার্ষিক পরিচালনা ব্যয় ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশের বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। বর্তমানে এ বন্দরে জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি), চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নামক তিনটি টার্মিনালে মোট ১৯টি জেটি রয়েছে। তবে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চালু হলে বন্দরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ও বন্দরের লজিস্টিক সক্ষমতা বাড়বে।

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পে যা থাকছে

বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পে রয়েছে ৩২ একর জায়গায় ৬০০ মিটার দীর্ঘ জেটি। যেখানে তিনটি জাহাজ বার্থিং করতে পারবে। এছাড়া থাকবে ২২০ মিটার দীর্ঘ একটি ডলফিন জেটি। থাকছে ১ লাখ ১২ হাজার বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ড এবং রাস্তা। পাশাপাশি ২ হাজার ১২৮ বর্গমিটার কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন শেড (সিএফএস), ছয় মিটার উচ্চতার ১ হাজার ৭৫০ মিটার কাস্টমস বন্ডেড ওয়াল, ৫ হাজার ৫৮০ বর্গমিটার পোর্ট অফিস বিল্ডিং, ১ হাজার ২০০ বর্গমিটার যান্ত্রিক ও মেরামত কারখানা, ২ হাজার ৫০০ মিটার রেলওয়ে ট্রেক নির্মাণ, ৪২০ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ, চার লেনবিশিষ্ট শূন্য দশমিক ৭৫ কিলোমিটার এবং ছয় লেনবিশিষ্ট ১ কিলোমিটার আগের রাস্তা স্থানান্তর করে পুননির্মাণ, সিকিউরিটি পোস্ট, গেস্ট হাউস, ফুয়েল স্টেশন এবং লেবার শেড করা হচ্ছে। 

টার্মিনাল পরিচালনা কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মধ্যে থাকবে দুটি ফায়ার ট্রাক, একটি ফায়ার কার, তিনটি নিরাপত্তা পেট্রোল কার, একটি আম্বুলেন্স, চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন, চারটি স্ট্রাডেল কেরিয়ার, চারটি রিচ স্ট্যাকার, আটটি রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি), চারটি লো-মাস্ট ফর্ক লিফট, চারটি ফর্ক লিফট, একটি রেইল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরএমজি), দুটি টাগ বোট, দুটি পাইলট বোট এবং দুটি ফাস্ট স্পিডবোট। আর রেললাইন সংযুক্ত থাকবে সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ডের সঙ্গে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়