Cvoice24.com

পোশাক খাতে দুর্দিন; চট্টগ্রামে বন্ধ হলো ৮ কারখানা

সিভেয়স ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮:১৮, ১৮ জুন ২০২১
পোশাক খাতে দুর্দিন; চট্টগ্রামে বন্ধ হলো ৮ কারখানা

ছবি : সংগৃহীত।

মহামারি করোনাভাইরাসের এসময়ে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের পোশাক খাতেও থাবা পড়েছে। বিদেশি বায়ারদের ক্রয়াদেশ বাতিল, আর্থিক সংকট, শ্রমিকদের মজুরি ও ব্যাংক লোন পরিশোধে অপারগতাসহ বিভিন্ন কারণে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। ফলে বেকার হয়ে পড়ছে হাজার হাজার পোশাক শ্রমিক।

গত বছরের প্রথম চার মাসে বন্ধ হয়েছে অন্তত ২৫টি পোশাক কারখানা। ফলে ওই সময় বেকার হয়েছিলেন প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক। বছর ঘুরতে আবারও একই সময়ে চট্টগ্রামে ৮টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে হাজার হাজার শ্রমিক নতুন করে বেকার হয়ে গেছেন। এমনকি সামনে আরও কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে— এমনটাই আভাস দিচ্ছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)।

বেপজার তথ্যমতে, চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডে বর্তমানে ১৮৮টি কারখানা সচল রয়েছে। তবে আর্থিক সংকট ও ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ায় ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে ৮টি প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে দেশিয় মালিকানাধীন ৪টি, দুটি ডেনমার্কের, একটি ভারতের এবং একটি যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ দুই ইপিজেডে আরো কয়েকটি পোশাক কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে বলে জানায় সংস্থাটি।

বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলো হলো চট্টগ্রাম ইপিজেডের এএন্ডবি আউটওয়্যার লি., নর্মস আউটফিট লি:, কোল্ড প্লে লি., উইন্ক কোম্পানি লি., পেনিনসুলা গার্মেন্টমস লি., মিঠুন নিটিং এন্ড ডাইং এবং কর্ণফুলী ইপিজেডের পিআরএম ফ্যাশন লি এবং যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারী কারখানা ভেলটেক্স লি.।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) চট্টগ্রামের তথ্য মতে, বন্দর নগরে ৬৮৯টি বিজিএমইএ'র সদস্যভুক্ত কারখানা রয়েছে। গত বছরের শুরুর দিকে প্রথম চার মাসে করোনার প্রভাবে লোকসানে পড়ে ২৫টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যায়। বর্তমানে প্রায় চারশ'র মত কারখানা অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। পুরোদমে সচল রয়েছে মাত্র ১৭৮টি কারখানা। এসব কারখানায় কাজ করছে প্রায় চার লাখেরও বেশি শ্রমিক।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন পোশাক কারখানার মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজারের উপর টিকে থাকে আমাদের দেশের পোশাক কারখানাগুলো। সারাবিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। তবে করোনার কারণে দফায় দফায় যেভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল হচ্ছে, এতে করে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পোশাক কারখানাগুলো টিকে থাকা এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে নিরুপায় হয়ে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, লাখো শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ছে।

চট্টগ্রামের ইপিজেডের নিটওয়্যার প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি কারখানায় কাজ করেন আকলিমা বেগম। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের অনেক পরিচিতজন বিভিন্ন কারখানায় কাজ করতো। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে কেউ কেউ গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে, কৃষিকাজ করছে। আবার কেউ ভিন্ন পেশায় চলে গেছে। তাই আমরাও সব সময় চিন্তায় থাকি। করোনার কারণে আগের মত কাজের অর্ডার নেই। যদি কাজটা চলে যায়, বেকার হয়ে পড়ি তাহলে সন্তানদের নিয়ে যাবো কোথায়?’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, গত বছর পোশাক খাতে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৫৬০ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। চলতি বছরের শুরুতেই পোশাক খাতে ১ হাজার ৬২১ কোটি কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এখনও পর্যন্ত তা অর্জন করা সম্ভব হয় নি।

মদিনা গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মুসা সিভয়েসকে বলেন, ‘মহামারি করোনা প্রভাবে বৈশ্বিক মন্দাভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই পোশাক খাতেও মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। তা এখনও কাটেনি। যেসব পোশাক কারখানা চালু আছে, সেগুলো এখনও ঠিকমত কাজের অর্ডার পাচ্ছে না। ইউরোপের বাজার, আমেরিকার বাজার সব জায়গায় মন্দাভাব বিরাজ করছে। তারা ক্রয়াদেশ বাতিল করছে। কাজ না পেলে প্রতিষ্ঠানে আয় আসবে না। ফলে কারখানাগুলো বেতন, ভাতা পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। ভিন্ন পথ না দেখে অনেকে কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।’

বেপজার জেনারেল ম্যানেজার (পাবলিক রিলেশন) নাজমা বিনতে আলমগীর সিভয়েসকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ক্রয়াদেশ না পাওয়ায় লোকসানে পড়ে অনেক কারখানা ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। তবে এর পরিমাণ খুবই কম। শুধুমাত্র ক্রয়াদেশ বাতিলেই কারখানা বন্ধ হচ্ছে এমন নয়। অংশীদারি ব্যবসায়ে একাধিক মালিকানা থাকায় পরিচালনাগত সমস্যা এবং অদক্ষতাও এসব কারখানা বন্ধের জন্য অনেকটাই দায়ী বলে মনে করি।’

বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে আমাদের পোশাক কারখানাগুলোর ক্রয়াদেশ বাতিল হচ্ছে। ফলে আর্থিক সংকটে পড়ে ব্যয়ভার বহন করতে না পারায় অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। কারখানা বন্ধ হোক এটা কেউ চায় না। কারণ এর ফলে অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। আবার শ্রমিক ছাড়া কিন্তু কারখানার কাজও চলে না। ইউরোপ, আমেরিকাসহ আন্তর্জাতিক বাজারগুলো থেকে কার্যাদেশ কম পাওয়া যাচ্ছে। ফলে আমাদের পোশাক কারখানাগুলো অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়