Cvoice24.com

২৮ হাজার নারী শ্রমিকের বিদেশযাত্রা, পাঁচ মাসেই ভাঙলো গেল বছরের রেকর্ড

তারেক মাহমুদ, সিভয়েস

প্রকাশিত: ১২:৩৭, ২২ জুন ২০২১
২৮ হাজার নারী শ্রমিকের বিদেশযাত্রা, পাঁচ মাসেই ভাঙলো গেল বছরের রেকর্ড

শুধু মার্চ মাসেই সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৫ হাজার ৩২৯ নারী শ্রমিক সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছেন

করোনা মহামারির মধ্যেও চলতি বছরের প্রথম পাঁচমাসে (জানুয়ারি-মে) চট্টগ্রাম থেকে ১ লাখ ৯৫ হাজার ২৪০ নারী-পুরুষ ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তার মধ্যে নারী রয়েছেন ২৮ হাজার ৮২৪ জন। গত বছরজুড়ে কর্মসংস্থানের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যান মোট ২১ হাজার ৯৩৪ নারী। সে হিসাবে চলতি বছরের পাঁচ মাসেই নারী শ্রমিকদের বিদেশযাত্রা গত বছরকে ছাড়িয়ে গেছে। 

গত বছরের প্রথম তিনমাসে ১৮ হাজার ৮০৬ জন নারী কর্মসংস্থানের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যান। তবে এপ্রিল ও মে মাসে কোন নারী বিদেশে পাড়ি জমাননি। সবমিলিয়ে চলতি বছরের পাঁচমাসে নারী শ্রমিকের বিদেশযাত্রা গত বছরের একই সময়ের ব্যবধানে বেড়েছে দেড়গুণ।       

চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, চট্টগ্রাম থেকে জানুয়ারি মাসে ৪ হাজার ৬৬৯ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৬ হাজার ৩৮২ জন, মার্চ মাসে ৮ হাজার ২৯৭ জন, এপ্রিল মাসে ৫ হাজার ২৩৮ জন ও মে মাসে ৪ হাজার ২৩৮ জন নারী ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন।  

গত বছর করোনা মহামারীর মধ্যে মার্চ থেকে দুমাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। ফলে মার্চ থেকে মে মাসে নতুন করে বিদেশে পাড়ি জমাননি কেউই। তবে চলতি বছরের একই সময়ে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক নারী প্রবাসে গেছেন।  

এ সময়ে সৌদি আরবে যাওয়ার প্রবণতাই ছিল সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে শুধু মার্চ মাসেই সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৫ হাজার ৩২৯ নারী শ্রমিক দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছেন। আর পাঁচমাসে সৌদি আরবে যান ১৮ হাজার ৪৩৭ জন, জর্দানে ৫ হাজার ২১৯ জন, ওমানে ৩ হাজার ৬৬৭ জন, কাতারে ৮৮২ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৪৮১ জন, হংকংয়ে ২৪ জন, সাইপ্রাসে ১৪ জন, সিঙ্গাপুরে নয়জন, লেবাননে পাঁচজন, মালয়েশিয়ায় দুজন এবং কুয়েত, যুক্তরাজ্য ও ইতালিতে একজন করে। এছাড়া অন্যান্য দেশে আরও ৮১ নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। 

আর গত বছর ১২ হাজার ৭৩৫ জন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে, ৩ হাজার ৬৬১ জন জর্ডানে, ৩ হাজার ৩৫৮ জন ওমানে এবং কাতারে ৮০৯ জন, আরব আমিরাতে ৬৬৪ জন, লেবাননে ১৯১ জন ও কুয়েতে ৭০ জন চট্টগ্রামের নারী শ্রমিক বিদেশে গেছেন। তাছাড়া মরিসাসে ২৮০ জন, হংকংয়ে ৬৬ জন, সিঙ্গাপুরে ২১ জন, সাইপ্রাসে ১০ জন, মালয়েশিয়ায় নয়জন, যুক্তরাজ্যে সাতজন, ব্রুনাইয়ে দুজন নারী পাড়ি জমান।

জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে সারাদেশে চট্টগ্রামের অবস্থান তৃতীয়। তবে নারী শক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশের সব জেলাকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান দখল করে নিয়েছে চট্টগ্রাম। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রবাসীবান্ধব পদক্ষেপ নেওয়ার ফলেই নারী জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ অ্যাসোশিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা)। 

দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন নারীরা। গত বছর ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা দরে), ২০১৯ সালে ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ১৩ লাখ ১৭ হাজার ৭২২ কোটি টাকা রেমিট্যান্স পাঠান নারী শ্রমিকরা। 

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সারাদেশ থেকে ১ লাখ ৮ হাজার ৭৮৬ জন, ২০১৮ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৬৯৫ জন, ২০১৭ সালে ১ লাখ ২১ হাজার ৯৯৫ জন, ২০১৬ সালে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৮ নারী বিদেশে পাড়ি জমান। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত সিভয়েসকে বলেন, ‘দিন দিন নারীদের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে এটা অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। পর্যাপ্ত পরিচর্যা, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করলেই নারীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা আরও বাড়বে। এতে তাদের আর্থিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশেরও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাবে।’  

বায়রার সচিব ড. মুহাম্মদ আবদুল জলিল সিভয়েসকে বলেন, ‘গত বছর করোনা মহামারীর কারণে সবকিছু থমকে গিয়েছিল। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোও বন্ধ ছিল। সে কারণে বিদেশযাত্রায়েও ভাটা পড়েছিল। তবে করোনার প্রভাব এখনো কাটেনি। এরপরও আমরা সাধ্যমত বিদেশে লোক পাঠানোর চেষ্টা করছি। বায়রার পক্ষ থেকে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ফলে আমাদের দেশ থেকে দক্ষ লোক বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে।’ 

তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের দিকেই নারী শ্রমিকদের আগ্রহ বেশি। পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা বিদেশে নির্যাতিত হচ্ছেন- এমন অভিযোগ আমরা এখন আর পাচ্ছি না তেমন।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়