Cvoice24.com

কোরবানি পশুর এখনো চড়া দাম, হাটে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:১৩, ১৮ জুলাই ২০২১
কোরবানি পশুর এখনো চড়া দাম, হাটে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

আর মাত্র দু’দিন বাকি কোরবানি ঈদের। শেষ মুহূর্তে নগরের পশুর হাটগুলোতে মানুষের আনাগোনা বাড়লেও দাম কমেনি কোরবানি পশুর। হাতে আরো দু’দিন সময় থাকায় দাম ধরে রেখেছেন গরু নিয়ে আসা বেপারিরা। পাশাপাশি নগরের অলিগলিতে ভ্রাম্যমাণ পশুর হাটগুলোতেও হাকা হচ্ছে বাড়তি দাম। এদিকে পশুর হাটে জীবাণুনাশক স্প্রের ব্যবস্থা থাকলেও ভেতরে প্রবেশ করে অনেক ক্রেতাই মাস্ক খুলে রাখছেন, বেপারিদেরও মুখে নেই করোনা মাস্ক। গাদাগাদি করে হাটে প্রবেশ করতে দেখা গেছে অনেককে।

রোববার (১৮ জুলাই) নগরের সাগরিকা গরুর বাজার, পোস্তারপাড় পশুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, শেষ মুহূর্তে কোরবানের পশুর বাজারগুলোতে মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। তবে এবার ক্রেতারা ঘুরে বা দরদাম করে ঘরে ফিরে যাচ্ছেন— এমনটা নয়। যারা আসছেন তারা পশু কিনেই বাড়ি ফিরছেন। অনেক ক্রেতা দাম কমবে আশা করলেও বাড়তি দামে পশু কিনছেন। গতকাল রাত থেকে আজ বিকালে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাড়তি দরেই কোরবানি পশুর বেচাবিক্রি হচ্ছে। 

তবে দু’বছর আগেও কোরবানি পশুর হাটে ছোট সাইজের গরুর ব্যাপক চাহিদা ছিল। তবে করোনার ধাক্কায় অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই আগে যারা একা কোরবানি দিতেন তারাও যৌথভাবে কোরবানি দিচ্ছেন। তাই এবার মাঝারি ও ছোট সাইজের পাশাপাশি বড় গরুই বেশি বিক্রি হচ্ছে। 

বেপারিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামে কোরবানি পশুর চাহিদা মেটাতে নাটোর, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশু নিয়ে চট্টগ্রামে এসেছেন বেপারিরা। তবে একটা গরু কিনে লালন-পালন করা, খাওয়ানো, পরিবহণ খরচ, ইজারার টাকা যোগ করলে গরুর দাম বেড়ে যায়। চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাভ পেলে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন— এমনটা জানালেন বিক্রেতারা। 

নগরের সাগরিকা পশুর বাজারে কোরবানির পশু কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী ইউনুস হোসেন। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘দু’দিন আগেও সাগরিকা পশুর হাটে গরু কেনার উদ্দেশে এসেছিলাম। আমি প্রতিবছরই ছোট সাইজের গরু কিনে একা কোরবানি দেয়ার চেষ্টা করি। ভেবেছি দু’দিন পর কিনলে পশুর দাম কমে যাবে। এখন দেখছি বেপারিরা দাম কমাতেই চাইছেন না। অন্যদিকে কোরবানের সময় ঘনিয়ে আসছে। তাই আর সময় নষ্ট করতে চাইছি না।’

একই বাজার থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনলেন ব্যবসায়ী হাজী শরিয়ত উল্ল্যাহ। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘সেই সকাল থেকে বাজারে ঘুরছি। পশু পছন্দ হলেও দরাদরি করতে গিয়েই হিমশিম খেতে হয়েছে। এক একজন বেপারির কাছে পাঁচ-ছয়বারও গিয়েছি। তবুও দাম কমাতে নারাজ তারা। বেপারি ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা দাম চেয়েছেন, দর-কষকষির পর ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় গরু কিনেছি।

আরেক ক্রেতা সোহরাব হোসাইন বলেন, গত দুদিন আগে মাঝারি সাইজের গরু কিনতে এসে ৬৫ হাজার টাকা দাম বলাতে আর কেনা হয়নি। অথচ আজ দরাদরি শেষে শেষ পর্যন্ত একই সাইজের গরু ৭১ হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। কোরবানি তো দিতেই হবে। তাই শেষদিকে দাম আরো বাড়ার আশঙ্কায় আজই কিনে ফেললাম। 

এদিকে পশুর হাটে দালালদের আনাগোনা বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ক্রেতা। এতে ক্রেতারা রীতিমত হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানান অনেকেই। 

দালালদের ব্যাপারে অভিযোগ এনে আবুল মুন্সী নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘আমি গরু কিনতে দরদাম করছিলাম বেপারির সাথে। হঠাৎ এক লোক এসে আমার পক্ষে কথা বলতে শুরু করলেন। আমি প্রথমে লোকটাকে আমার মতোই ক্রেতা ভেবেছিলাম। আমি গরুটা কিনে যখন বাইরে আসলাম, তখন ওই লোকটাই আমার কাছে টাকা দাবি করছেন। ২শ’ টাকা দিলাম। তিনি আমার কাছে পাঁচশ টাকা দাবি করছেন।’ 

চাপাই নবাবগঞ্জ থেকে ২৫টি গরু নিয়ে এসেছেন বেপারি নেজাম উদ্দীন। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘দু’বছর আগে প্রতিটা গরু ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় কিনেছিলাম। এতটা বছর গরুর লালন-পালন খরচ, পরিবহণ খরচ, জায়গা ভাড়া সবমিলিয়ে গরুর দাম বেড়ে যায়। আমরা চার-পাঁচ হাজার টাকা লাভ পেলেই গরু বিক্রি করে দিচ্ছি।’

এদিকে নগরের পোস্তারপাড় ছাগলের বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়লেও ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। পাশাপাশি ছাগলের দামও নাগালের বাইরে— এমনটা প্রতিক্রিয়া জানালেন ক্রেতারা।

আবদুল ওয়াহাব নামের এক ক্রেতা বলেন, গত বছর সাড়ে ১৭ হাজার টাকা করে দুটো ছাগল ৩৫ হাজার টাকায় কিনেছিলাম। এবার সে সাইজের ছাগল ২০ হাজারের নিচে বিক্রি করতে চাইছেন না বিক্রেতারা।

জানা গেছে, চলতি বছরের কোরবানে চট্টগ্রামে আট লাখের উপরে পশুর চাহিদা রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় সাড়ে ৭ লাখ গরু উৎপাদন হয়েছে। বাকিগুলো দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আনা হয়। 

ক্রেতাদের হাতের নাগালে কোরবোনের পশু পৌঁছে দিতে নগরের বিভিন্ন অলিগলিতে ভ্রাম্যমাণ মাঠে বসানো হয়েছে পশুর বাজার। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন অবৈধ পশুর বাজারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে। তবুও অভিযানের পর আবারো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। 

নগরের ঈদগাঁ, হালিশহর, মুরাদপুর, সিডিএ, সিএন্ডবি কলোনীসহ বেশ কিছু এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ পশুর বাজার। এসব বাজারে পশুর সংখ্যাও হাতেগোনা। তবে এসব হাটেও বেশি দাম হাকানোর পাশাপাশি মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। 

ইজারাদাররা বলছেন, নগরে অনুমোদনের বাইরে কোনো ধরনের পশুর হাট বসানোর সুযোগ নেই। অথচ নগরের বিভিন্ন অলি-গলিতে, মাঠে কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই পশুর হাট বসানো হয়েছে। তাহলে লাখ লাখ টাকা খরচ করে ইজারা নেয়ার দরকার কি ছিল।

নগরের বাটারফ্লাই পশুর হাটের ইজারাদার ওয়াহিদুল আলম সিভয়েসকে বলেন, ‘অলি-গলিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা পশুর বাজারের কারণে ইজারাদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে আরো জোরালোভাবে অভিযান চালানো উচিত। 

চলতি বছর চট্টগ্রামে স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে তিনটি। এগুলো হলো— বিবির হাট, সাগরিকা গরু বাজার ও পোস্তারপাড় ছাগলের হাট। পাশাপাশি তিনটি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এগুলো হলো— নুর নগর হাউজিংয়ের কর্ণফুলী গরুর হাট, সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন মাঠ ও কাঠগড়ে বাটারফ্লাই পার্ক সংলগ্ন মাঠের হাট।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়