Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড

নিলামেও কাটছে না সংকট, বন্দরে পড়ে আছে ৭০৮৭ নিলামযোগ্য কনটেইনার 

তারেক মাহমুদ

প্রকাশিত: ১৯:০২, ২৯ জুলাই ২০২১
নিলামেও কাটছে না সংকট, বন্দরে পড়ে আছে ৭০৮৭ নিলামযোগ্য কনটেইনার 

বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্য নির্দিষ্ট সময়ে খালাস না করলে তা নিলামে তোলার বিধান রয়েছে। বন্দরে কনটেইনার জট কমাতে সময়ে সময়ে বিভিন্ন লটে কনটেইনারগুলো নিলামেও তুলছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। তবুও কমছে না বন্দরে পড়ে থাকা নিলামযোগ্য কনটেইনারের সংখ্যা। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে নিলামযোগ্য কনটেইনার ছিল মাত্র ১২টি। সেখানে ২০২১ সালে এসে ৩০ বছরের ব্যবধানে সে কনটেইনারের সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮৭ এককে। দীর্ঘদিন বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে রাখা এসব কনটেইনারের পণ্যগুলো পচে একদিকে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।  

চট্টগ্রাম বন্দর দীর্ঘ একমাসেরও বেশি সময় ধরে জাহাজ সংকটের কারণে রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ করতে হিমশিম খাচ্ছিল। সে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে না উঠতে চলতি লকডাউনে শিল্প কারখানা বন্ধ থাকায় আমদানিকৃত কনটেইনার নিয়ে বিপাকে পড়েছে বন্দর। পাশাপাশি বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য খালাসের গতিও কমে গেছে। ইতোমধ্যে দ্রুত পণ্য খালাস করতে আমদানিকারকদের চিঠিও পাঠিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এভাবে বারবার চিঠি পাঠিয়েও সাড়া না মিললে একটা নির্দিষ্ট সময় পর তা নিলামযোগ্য হয়ে পড়ে। 

বন্দরে নিলামযোগ্য কনটেইনার ভর্তি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে— গার্মেন্টসের কাচামাল, গার্মেন্টস সিকিউরিটি ট্যাগ, ফিনিশিং এজেন্ট, হাইড্রোলিক এসিড, ব্যাটারি, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, ওয়াশিং কেমিক্যাল, ডায়েসিড (এসিড পণ্য), মাল্টিভিটামিন পাউডার, প্লাস্টিক বোতল, টেক্সটাইল পণ্য, সালফিউরিক এসিড, ম্যাগাজিন, চামড়াজাত পণ্য, ওলিভ ওয়েল, সিরামিক পণ্য, বেবি ডায়াপার, ফুড স্টাফ, পলেস্তার, ওয়েস্ট পেপার, ড্রাগন ফল, লোহার পাইপ, সুইচ সকেট, জ্যাকেটসহ বিভিন্ন পণ্য। 

নিলামযোগ্য কনটেইনারের ব্যাপারে বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত পণ্য আমদানি, মিথ্যা ঘোষণায় কম শুল্কে পণ্য আমদানি, নথি জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পেলে ওইসব পণ্য আটক করে কাস্টম হাউস। এসব অপরাধের মাশুল হিসেবে জরিমানা গুণতে গিয়ে বাজারমূল্য থেকে পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়। ফলে আমদানিকারকরা এসব পণ্য খালাসে নিরুৎসাহিত হওয়ায় বন্দরে তৈরি হয় কনটেইনার জট। পাশাপাশি চট্টগ্রাম কাস্টমসকে আইন অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট সময় ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় বলে নিলাম কার্যক্রমে সময় লাগে বলে জানান কাস্টমস কর্মকর্তারা। 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে নিলামযোগ্য কনটেইনার ছিল মাত্র ১২টি। ২০০৪ সাল পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত ছিল। তারপর ২০০৫ সাল থেকে পরবর্তী ৪ বছর অর্থাৎ ২০০৯ সাল পর্যন্ত নিলামযোগ্য কনটেইনার ছিল প্রায় ৪শ’ টি। ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৯৫০ টিরও বেশি নিলামযোগ্য কনটেইনার ছিল। এরপর আস্তে আস্তে বেড়ে কনটেইনারের সংখ্যা হাজারের উপর চলে যায়। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২ হাজার ৯শ’ টি নিলামযোগ্য কনটেইনারে ছিল প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি পণ্য। গতবছর অর্থাৎ ২০২০ সালে সব মিলিয়ে বন্দরে নিলামের অপেক্ষায় ছিল ৫ হাজার ৬৪২ টিইইউএস কনটেইনার। বর্তমানে ২০২১ সালে এসে সে সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৭হাজার ৮৭ টিইইউএস কনটেইনারে।  

ভেঙ্গে পড়েছে অনলাইন নিলাম ব্যবস্থা

গত বছরের ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম কাস্টমসে ই-অকশন কার্যক্রম চালু হলেও উদ্বোধনের নয় মাসেও এর কোন সুফল মেলেনি। ২০২০ সালে ২৮ অক্টোবর, চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ও ১০ ফেব্রুয়ারি এ তিনটি নিলাম কার্যক্রম অনলাইনে হয়েছিল। ওয়েবসাইটসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে অনলাইন নিলাম কার্যক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা আদৌ সম্ভব হয়নি। বর্তমানে প্রথাগত পদ্ধতিতেই নিলাম কাজ শেষ হচ্ছে। অনলাইন নিলাম কার্যক্রম চালু থাকলে দরদাতারা নিজ কর্মস্থলে বসে পণ্যের দর, তালিকা ও ছবি দেখার সুযোগ পেতেন। বর্তমানে নিলামে অংশ নিতে প্রায়সব কাজই প্রথাগত নিয়মেই করতে হচ্ছে। এটি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ বলে মনে করছেন দরদাতারা। 

চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম চিত্র

২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর ফেব্রিক্স, রসুন, সোডা, আয়রন পাইপসহ বিভিন্ন ধরনের ১৬ লট পণ্য, ৩০ ডিসেম্বর ৭১ লট পণ্য নিলামে তোলা হয়েছিল। পাশপাশি চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ১৯ লটে প্রায় ১১শ’ টন পেঁয়াজ, ২৮ ফেব্রুয়ারি ৫০ লট, ২১ মার্চ ১৪৫ লট, ২৫ মে ৭৪ লট পণ্য নিলামে ওঠে। তাছাড়া ২১ জুন ৪৪ লট, ৮ জুলাই ৫৬ লট ও সবশেষ আজ ২৯ জুলাই ৬১ লট পণ্য নিলামে তোলা হয়। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, ‘আমদানিকারকদের বার বার নোটিশ দেয়ার পরও সাড়া না দিলে একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর ওসব কটেইনার নিলামযোগ্য হয়ে পড়ে। আমরা প্রতি মাসে নিলামযোগ্য কনটেইনারের তালিকা কাস্টম হাউসে পাঠিয়ে দিচ্ছি। এসব কনটেইনার বন্দরের অনেকটা জায়গা দখল করে আছে। পাশাপাশি এসব কনটেইনারের ভাড়াসহ অন্যান্য চার্জ থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। দ্রুত নিলাম কাজ শেষ করার জন্য আমরা সব সময় কাস্টমকে আহ্বান জানাই। নিলাম প্রক্রিয়াটা দ্রুত শেষ হলে বন্দরে যেমন কন্টেইনার রাখার পরিধি যেমন বাড়বে, তেমনি রাজস্বও আদায় হবে।’

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার (নিলাম শাখা) মো. আল আমিন সিভয়েসকে বলেন, ‘বন্দরের জট কমানোর পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার লক্ষ্যে আমরা আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছি। প্রতি মাসে দুই থেকে তিনটি করে নিলাম ডাকা হচ্ছে। আজও ৬১ লট পণ্যের নিলাম কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি নিলামঅযোগ্য পণ্যগুলো ধ্বংস করার কার্যক্রমও অব্যাহত আছে। তবে একটা নির্দিষ্ট সময় ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কাস্টম হাউসকে নিলাম কার্যক্রম চালাতে হয়।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়