Cvoice24.com

শ্রমিকদের পরিবহণ ব্যবস্থা ছাড়াই খুলছে গার্মেন্টস

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৪০, ৩১ জুলাই ২০২১
শ্রমিকদের পরিবহণ ব্যবস্থা ছাড়াই খুলছে গার্মেন্টস

শাহিন মিয়ার পরিবারের চার সদস্য চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেডে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। লকডাউনের বন্ধে তারা গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সুবর্ণচর চলে যান। লকডাউনের মধ্যেই ১ আগস্ট থেকে গার্মেন্টস খোলার খবরে কারখানা থেকে ম্যাসেজ পেয়ে চট্টগ্রামের পথ ধরেন তারা চার ভাই। স্বাভাবিক সময়ে তাদের তিনশ টাকা দিয়ে কর্মস্থলে পৌঁছানোর সুযোগ থাকলেও এবার জনপ্রতি খরচ হয়েছে সাড়ে ১১শ’ টাকা করে। এছাড়া সকালে রওনা দিয়ে বিকেলে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে পেরেছেন তারা। কেননা, এই পথ পেরুতে তাদের অনেক গাড়ি পাল্টাতে হয়েছে, পুরো পথই ভেঙে ভেঙে এসেছেন শাহিন মিয়ারা। 

শুধু তিনি নন। এভাবে বানের পানির মত মানুষ নগরে প্রবশে করছে। আগে নগরের চেক পোস্টে পুলিশের কড়াকড়ি থাকলেও আজকে অনেকটা ঢিলেডালাভাব দেখা গেছে। এটাতো গেল, গ্রাম থেকে যুদ্ধ জয় করে নগরে প্রবেশের চিত্র। আগামীকাল থেকে বাসা থেকে কর্মস্থলে কীভাবে যাবেন সেই চিন্তাও কম নয়। কেননা সরকারি আদেশে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে ১ আগস্ট থেকে চট্টগ্রামে রপ্তানিমূখী অন্তত সাড়ে ৩শ’ কারখানা চালু হবে। লাখ লাখ শ্রমিক কীভাবে কারখানায় যাবে সেটার বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেনি বিজিএমইএ। 

বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, কোরবানির ঈদের পর লকডাউনে পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের পর অনেক শ্রমিক গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিল। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বারবার অনুরোধের পর কারখানা চালু করার সিদ্ধান্ত দেয় সরকার। এ খবরে চাকরি টিকিয়ে রাখতে অনেক শ্রমিক লকডাউনের মধ্যেও বিভিন্নভাবে শহরে ফিরতে শুরু করেছে। যদিও আগে থেকে শহরে থাকা শ্রমিকদের নিয়ে আপাতত উৎপাদনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল বৃহৎ ব্যবসায়িক এ সংগঠনটির। 

বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালু করার পাশাপাশি কোন শ্রমিক না আসতে পারলে তার চাকরি না যাওয়ারও নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। তবে লকডাউনে সব ধরনের গণপরিবহণ বন্ধ থাকলেও শ্রমিকদের জন্য পরিবহণ ব্যবস্থা চালু করার ব্যাপারে কারখানা মালিকদের কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি বিজিএমইএ।

এদিকে সরকারি সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর বর্তমানে কারখানা চালু করার দিকেই পূর্ণ মনোযোগ দিচ্ছেন পোশাক কারখানার মালিকরা। পাশাপাশি সংগঠনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত না আসায় তারাও আপাতত শ্রমিকদের জন্য পরিবহণের কথা ভাবছেন না। করোনা ও লকডাউনের কারণে পোশাক কারখানা মালিকরাও অগোছালো পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। তাই শ্রমিকরা আপাতত নিজেদের মত করে কষ্ট করে কাজ চালিয়ে নেবেন— এমনটাই ভাষ্য কারখানা মালিকদের।

বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, পোশাক কারখানাগুলোকে লকডাউনের আওতামুক্ত করায় সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সরকারি নির্দেশ পাওয়ার পর আমরা সব কারখানা মালিকদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামীকাল থেকে কারখানা চালু করার সিদ্ধান্ত দিয়েছি। কোন শ্রমিক গ্রাম থেকে না আসতে পারলে তাদের যেন চাকরিটা থাকে সে বিষয়টিও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে যেসব শ্রমিক কারখানায় কাজ করবেন তাদের জন্য পরিবহণ ব্যবস্থা চালু করার ব্যাপারে আমরা এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেইনি। আপাতত কাল কারখানা চালু হোক। এরপর বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হবে।   

মদিনা গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মুসা সিভয়েসকে বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই পোশাক খাতে মন্দা ভাব দেখা দিয়েছে। এ সংকট কোনভাবেই কাটছে না। ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে করোনার কারণে দীর্ঘদিন মন্দাভাব বিরাজ করলেও কয়েক মাস আগে কিছু অর্ডার আসতে শুরু করেছিল। কিন্তু পোশাক কারখানাকে লকডাউনের আওতায় আনায় আমরা সকল পোশাক কারখানা মালিকরা বেকাদায় পড়ে গেছি। এটা কেটে উঠতেও কিছুদিন সময় লাগবে। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের শ্রমিকরা যাতে নিরাপদে থাকে, সেটাই আমরা চাই। সরকারি নিয়ম মেনে কাল থেকে কারখানা চালু করবো। আপাতত শ্রমিকরা নিজেদের মত করে কাজ চালিয়ে যাক। যারা আসতে পারবে না, তারা লকডাউন শিথিল হলে আসবে। এতে তাদের চাকরি যাবে না। পাশাপাশি কারখানার শ্রমিকদের করোনার টিকা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।       

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) চট্টগ্রামের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে বিজিএমইএ'র সদস্যভুক্ত প্রায় ৭০০টি কারখানা রয়েছে। গত বছরের শুরুর দিকে করোনার প্রভাবে লোকসানে পড়ে ২৫টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। চলতি বছরও শুরুর দিকে ৮টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি বর্তমানে আরো প্রায় চারশ’র মত কারখানা অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। বর্তমানে পুরোদমে সচল রয়েছে মাত্র ৩৫০টি কারখানা।  

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সব মিলিয়ে রপ্তানি কমেছে ৪৮ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা। এর মধ্যে পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় ৪৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এক হাজার ৫৫৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে তৈরি পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৬২১ কোটি ডলার।

উল্লেখ্য, গত ২৩ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধ জারি হওয়ার পর থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিল্প-কারখানা। তবে ঈদের পর থেকেই কারখানা খোলার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিল্প-কারখানার মালিকরা। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামীকাল ১ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে রপ্তানিমুখী সব শিল্প ও কলকারখানা বিধিনিষেধের আওমুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়