Cvoice24.com

নতুন বিনিয়োগে সাহস পাচ্ছেন না খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৫২, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
নতুন বিনিয়োগে সাহস পাচ্ছেন না খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

করোনা আর লকডাউনের প্রভাবে ক্রেতা সংকট ছিল খাতুনগঞ্জে। লকডাউন উঠে গিয়ে ক্রেতার আগমনে এখন কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে সেই ঘা। তবে আগের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে ব্যবসায়ীরা কেউ আগ্রহী নয় নতুন করে বিনিয়োগে। আরও কিছুদিন করোনা পরিস্থিতি আর সরকারি সিদ্ধান্তের গতিবিধি বুঝেই বিনিয়োগে নামতে চান তারা। যাতে করে পুরনো তিক্ততায় ভুগতে না হয় তাদের।

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের বৃহত্তম ভোগপণ্যের পাইকারি এই বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানের ঈদের পর থেকে করোনায় লকডাউন, প্রতিকূল আবহাওয়া, ক্রেতা সংকট সব মিলিয়ে মারাত্মক লোকসান গুনতে হয়েছে। সেই সময়ে বিনিয়োগ করা অর্থের লাভের সিকিভাগও এখনো জুটেনি। পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো পচনশীল নানা পণ্য পঁচে লোকসানের মাত্রাটা বাড়িয়ে দেয়। তাই আগের মজুদ করা পণ্য দিয়েই তারা বাজার ধরতে চান। আরও কিছুদিন করোনা পরিস্থিতি আর সরকারের গতিবিধি না বুঝে নতুন বিনিয়োগ করে আবারো ঝুঁকিতে পড়তে চান না তারা। নতুন বিনিয়োগের পর পণ্যের সয়লাব হবে খাতুনগঞ্জে। তখন দামও ক্রেতাদের নাগালে আসবে বলে আশা তাদের।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সগীর আহমেদ সিভয়েসকে বলেন, লকডাউনের পর থেকে ধীরে ধীরে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। তবে ব্যবসায়িক গতিধারা স্বাভাবিক হয়নি মোটেও। কারণ লকডাউনে লোকসান গুনতে গুনতে সবারই একটা তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও হঠাৎ করোনার চিত্র পাল্টে দিতে পারে সবকিছু। তাই এখন নতুন করে কোন বিনিয়োগ না করে পরিস্থিতি বুঝে উঠতে চেষ্টা করছে ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি যদি ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক মনে হয় তখন তারা আস্তে আস্তে নতুন করে বিনিয়োগে পা বাড়াতে পারে।

এদিকে লোকসান, সংকট পিছু ছাড়ছে না খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ীদের। গত দুমাসের বেশি সময় ধরে স্বাভাবিক সময়ের মতো ক্রেতা না থাকায় কেনা দামে বা অর্ধেক দামেই পণ্য বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তবে এখন পঁচে যাওয়া কোন পণ্য নেই সেখানে। নতুন করে পণ্যের পঁচন এড়াতে নিম্নমানের পেঁয়াজ, আদা, রসুন ট্রলি বা ভ্যানওয়ালাদের কাছে পণ্য বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা। লোকসান লেগে থাকায় খাতুনগঞ্জের মশলা ব্যবসায়ীরাও নামছেন না নতুন বিনিয়োগে। 

ব্যবসায়ীরা জানান, ক্রেতা সংকট ও আড়তে পড়ে থাকায় পণ্যের মান কিছুটা কমে গেছে। ফলে দামটাও কমেছে অনেক গুণে। পেঁয়াজের কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমে ৩২ থেকে ৩৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো। ১২০ টাকায় কেনা চায়না আদা ৬০ টাকায় ও ৭০ টাকায় কেনা মিয়ানমারের আদা ২০ থেকে ২৫ টাকা ও ১শ টাকায় কেনা চায়না রসুন ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস সিভয়েসকে বলেন, সেই কোরবানের পর থেকে লোকসান লেগেই আছে। শেষবারের লকডাউনে অনেক আদা পঁচে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। আর এখন স্বাভাবিক সময়েও ক্রেতা নেই। আর্থিক সংকটে খুচরা ব্যবসায়ী ও হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিকরা বেশি পরিমাণে পণ্য কিনতে পারছেন না। সবমিলিয়ে আমাদের ব্যবসা এখন ২০ থেকে ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। আমাদের পণ্যগুলো পচনশীল বিধায় দ্রুত বিক্রি করতে হয়। তাই আগে কেনা দামে পেঁয়াজ, আদা, রসুন বিক্রি করলেও এখন অর্ধেক দামেই বিক্রি করছি। এ সুযোগে বিভিন্ন ভ্যানওয়ালারা আমাদের কাছ থেকে পণ্য কিনে শহরের অলিগলিতে বিক্রি করছেন। 

তিনি আরো বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণে পণ্য আসছে, দামও কমে গেছে। কিন্তু বেচাবিক্রি কম থাকায় আমরা আমদানি করতে পারছি না। লোকসান গুণতে গুণতে আমাদের নতুন বিনিয়োগ করার ইচ্ছাও নেই। পরিস্থিতি আরো কিছুদিন যাক, দেখা যাক কি হয়।

বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে পাঁচ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী রয়েছে। এসব আড়তে কাজ করছেন অন্তত ১৫ হাজার শ্রমিক। তার সাথে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন খরচ, শ্রমিকের মজুরি, দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিলসহ আনুষঙ্গিক খরচ জড়িয়ে রয়েছে। সেই সাথে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য আনতে জাহাজ ভাড়ার পরিমাণও বেড়েছে ছয়গুণ। তাই ইতিবাচক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই নতুন বিনিয়োগ করতে চান ব্যবসায়ীরা।

সিভয়েস/টিএম/এএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়