Cvoice24.com

চট্টগ্রামে ক্রমেই কমছে পোশাক কারখানা, রপ্তানিতেও ভাটা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:১১, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
চট্টগ্রামে ক্রমেই কমছে পোশাক কারখানা, রপ্তানিতেও ভাটা

করোনার ও লকডাউনে অচলাবস্থা, ব্যাংকিং সমস্যা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, গ্যাস-বিদ্যুৎ অবকাঠামোগত সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে বন্দর নগর চট্টগ্রামে ক্রমশই কমেছে পোশাক কারখানা। ফলে উৎপাদন কমার পাশাপাশি পোশাক পণ্যের রপ্তানিতেও পড়েছে ভাটা।

১৯৮০ সালে চট্টগ্রাম থেকেই চট্টগ্রাম থেকেই পোশাক খাতের যাত্রা শুরু। আশি ও নব্বইয়ের দশকে বেশ প্রসারিত হয় চট্টগ্রামের পোশাক খাত। তবে করোনার দেড় বছরের নির্দয় আঘাত ৪১ বছরের গতিতে ভাটা ফেলে দিয়েছে। পোশাক খাতে নেমে এসেছে বিপর্যয়। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক পোশাক কারখানা, বাতিল হয়েছে বিদেশি কার্যাদেশ। করোনার সময়ে সারাদেশ থেকে ৩১ হাজার ৫শ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে। অপরদিকে শুধু চট্টগ্রাম থেকেই বাতিল হয়েছে ৮ হাজার ৪শ কোটি টাকার কার্যাদেশ। তবে সরকার স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করায় বর্তমানে পোশাক কারখানাগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। 

বর্তমানে সারাদেশে বিজিএমইএর সদস্যভূক্ত ৪ হাজার ৭শ কারখানার মধ্যে ২ হাজার ৭৩৪টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ১ হাজার ৯৬৬টির মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কাজে নিয়োজিত আছে মাত্র ১ হাজার ৬শ প্রতিষ্ঠান।

চট্টগ্রাম বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে বিজিএমইএ’র নিবন্ধিত ৬৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৮৯টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বাকি ৩০৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯০টি প্রতিষ্ঠান আমদানি-রপ্তানির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে গতবছর বিজিএমইএর নিবন্ধিত ৬৯৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪শ কারখানা বন্ধ হয়েছিল, উৎপাদনে ছিল মাত্র ২৯৩টি কারখানা। 

অপরদিকে ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রামে নিবন্ধিত ১৩৩টি পোশাক কারখানার মধ্যে ৭টি কারখানার মালিক ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। দশ বছরের ব্যবধানে ১৯৯৫ সালে ৩৫৯টি কারখানার মধ্যে ১৪টি, ২০০৫ সালে ৬৯৯টি কারখানার মধ্যে ৮৯টি ও ২০১৫ সালে ৭৫৬টি কারখানার মধ্যে ৩০১টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বিগত ৩৫ বছরের তুলনায় গত দুই বছরের মধ্যে চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীরা নানামুখী সমস্যায় পড়ে পোশাক খাতে অবনতি নেমে আসে। সেই সাথে গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকটসহ চট্টগ্রামে অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যার কারণে পোশাক কারখানায় সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীদের।

পাঁচ বছর আগেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পোশাক বিদেশে রপ্তানি করতে পেরেছিল চট্টগ্রামের পোশাক কারখানার মালিকরা। তবে করোনা শুরু হওয়ার পর পোশাক কারখানা বন্ধ হওয়া, বিদেশি কার্যাদেশ বাতিলসহ বিভিন্ন কারণে চট্টগ্রামে পোশাকখাতে রপ্তানির হারও কমে গেছে। অর্জিত হয়নি লক্ষ্যমাত্রাও। 

২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ২ লাখ ৬০ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকার বিপরীতে ২ লাখ ৯০ হাজার ১০৫ কোটি টাকা রপ্তানি আয় করেছিল চট্টগ্রামের পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা।

তবে বিগত দুই অর্থবছরে করোনাসহ নানা সমস্যার কারণে পোশাক রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রার তীর ভেদ করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২ লাখ ৮৭ হাজার ১৩০ কোটি রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জন হয়েছিল ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭শ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি হয়েছিল ২ লাখ ৩১ হাজার ১১৫ কোটি টাকার পণ্য।

বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে পোশাক খাতে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। অর্ডার বাতিল হওয়ায় লোকসানে পড়ে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ১৯৮৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছরের তুলনায় গত দুই বছরের মধ্যে কারখানা সংখ্যা কমার পাশাপাশি কমেছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানির হার। তবে এর জন্য অনেকটা করোনা পরিস্থিতিই দায়ী। বর্তমানে আমাদের কারখানাগুলো প্রচুর বিদেশি কার্যাদেশ পাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন এ খাতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করা জরুরি হয়ে পড়েছে। 

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয় না থাকায় পোশাক খাতে ঋণ গ্রহণ ও আমদানি ঋণপত্র খুলতে চট্টগ্রাম থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না। কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের ভ্যাট আদায়ে কার্যক্রম সহজ করা প্রয়োজন। আমদানি করা পণ্য দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি এলসিএল পণ্য রাখতে শেড বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি চট্টগ্রামে জমির দাম বেশি থাকায় বিনিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। সেই সাথে চট্টগ্রামে গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকটসহ অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যার কারণেও পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাই এ সমস্যাগুলো সমাধান করা হলে পোশাক খাত আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। পাশাপাশি তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিতেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

-সিভয়েস/টিএম/এএ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়