Cvoice24.com

করোনার প্রভাব কাটিয়ে বিদায়ী বছরে চট্টগ্রামে বিদেশযাত্রা বেড়েছে তিনগুণ

তারেক মাহমুদ

প্রকাশিত: ২০:০৬, ৩ জানুয়ারি ২০২২
করোনার প্রভাব কাটিয়ে বিদায়ী বছরে চট্টগ্রামে বিদেশযাত্রা বেড়েছে তিনগুণ

বছরজুড়ে সৌদিআরবেই পাড়ি দিলেন সাড়ে চার লাখ প্রবাসী।

করোনা মহামারির পর প্রবাসীদের বিদেশযাত্রায় ফিরেছে সুদিন। বছরের ব্যবধানে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রেকর্ড ভেঙ্গে দেশ ছেড়েছেন প্রায় তিনগুণেরও বেশি রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তবে গেল বছর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোক পাড়ি দিয়েছেন সৌদি আরবে। আর তার পরের তালিকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের জায়গা দখল করে নিয়েছে ওমান। তবে গত দুমাসেরও বেশি সময় ধরে চারগুণ বাড়তি বিমান ভাড়াও জর্জরিত করছে বিদেশগামীদের। ধারদেনায় জড়িয়ে জীবিকার তাগিদে দেশ ছেড়েছেন অনেকেই। 

চট্টগ্রাম থেকে সৌদি আরব, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেশি লোক পাড়ি জমায়। তবে করোনার কারণে ২০২০ সালে প্রায় ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন লোক বিদেশে পাড়ি জমায়। তবে সদ্য বিদায়ী ২০২১ সালে ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন লোক দেশ ছাড়েন। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে প্রবাসযাত্রা বেড়েছে তিনগুণ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি সৌদি আরবে ৪ লাখ ৫৭ হাজার জন, ওমানে ৫৫ হাজার ৯জন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৯ হাজার ২০২ জন লোক যাত্রা করেন। 

গতবছরের সার্বিক চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১ সালের প্রথম দিনে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। ওই দিন মারা যান ১৭ জন। এরপর ক্রমান্বয়ে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকে। এরপর বছরের মাঝামাঝি এসে জুন-জুলাই মাসে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠে প্রাণঘাতি ভাইরাসটি। বাড়তে থাকে শনাক্ত ও প্রাণহানির ঘটনা। ফলে ওই বছরের জুলাই মাসের এক তারিখ থেকে দুই দফায় ১৪ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন দেয়া হয়। কোরবানির ঈদ উদযাপনের জন্য ২৩ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন শিথিল করা হয়। এর আটদিন বিরতির পর আবারও ১৪ দিনের লকডাউন দেয়া হয় এবং তা আরও পাঁচ দিন অর্থাৎ ১০ আগস্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফলে এ সময়ে প্রবাসীদের বিদেশযাত্রার পরিমাণ তুলনামূলক কমে যায়। গতবছরের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর এই ছয় মাস সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রবাসী জীবিকার তাগিদে চট্টগ্রাম ছাড়েন।

জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, গত বছরজুড়ে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান ছাড়াও সিঙ্গাপুর ২৭ হাজার ৮৭৫, জর্দানে ১৩ হাজার ৮১৬, কাতারে ১১ হাজার ১৫৮, কুয়েতে ১৮শ’ ৪৮, ইতালি ৬৫৩, লেবাননে ২৩৫, মরিশাসে ২১৫, দক্ষিণ কোরিয়া ১০৮ যুক্তরাজ্যে ১২৩, সুদানে ৩৯, মালয়েশিয়া ২৮, বাহরাইনে ১১, লিবিয়ায় ৩, জাপানে ৩, ব্রুণাইয়ে ১২, ইরাকে ৫ ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে ৭ হাজার ৭১১ জন লোক বিদেশে পাড়ি জমান। তবে গত বছর জুড়ে চট্টগ্রাম থেকে মিশর যায়নি কেউই।  

সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক ইয়াছিন চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘করোনার পর স্বাবাবিক পরিস্থিতি তৈরি হলে চট্টগ্রামে আটকে পড়া সকল প্রবাসী যার যার কর্মস্থলে ফিরে যেতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিদিনই চট্টগ্রাম থেকে প্রচুর সংখ্যক লোক জীবিকার তাগিদে সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। তবে বাংলাদেশ থেকে বিমান ভাড়া চারগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। ফলে দেশ থেকে অনেকে প্রবাসে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন। পাশের দেশ ভারত থেকে যেখানে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় আমিরাত ও ৪০ হাজার টাকায় সৌদি যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশ থেকে ৯০ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে। এর ফলে গুণতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা লোকসান। আমরা প্রবাসীরা হলাম রেমিট্যান্স যোদ্ধা। দেশের কল্যাণে আমাদেরও অবদান আছে। অথচ আমরাই সব জায়গায় নির্যাতিত। তাই প্রধানমন্ত্রীর আমাদের প্রবাসী ভাইদের দিকে একটু নজর দেয়া দরকার।’ 

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সচিব ড. মুহাম্মদ আবদুল জলিল সিভয়েসকে বলেন, ‘করোনার পর প্রবাসীদের বিদেশযাত্রার পরিমাণ বেড়েছে। প্রবাসীরা আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তারা আমাদের দেশের সম্পদ। তারা যেন বৈধভাবে বৈধ এজেন্সির মাধ্যমে কোন প্রকার প্রতারণার শিকার না হয়ে প্রবাসে যেতে পারে, এজন্য বায়রা বদ্ধপরিকর। তবে প্রবাসীদের মধ্যে বিশেষ করে নারীদের উদ্দেশ্যে বলব, বায়রার নিবন্ধিত এজেন্সির মাধ্যমে প্রবাসে গেলে প্রতারণার শিকার হবার কোন সম্ভাবনাই নেই। যেসব নারী বায়রার মাধ্যমে গিয়েছেন তারা ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারছেন। যারা দালালের খপ্পড়ে পড়ছেন মূলত তারাই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ১৮ ডিসেম্বর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। পরদিন সেখানে আমাদের সরকারের সঙ্গে মালয়েশিয়ার জি টু জি চুক্তি হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের দক্ষ শ্রমিকদের সহজেই মালয়েশিয়া যাবার সুযোগ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের প্রবাসীদের প্রশিক্ষণ দেয়া অব্যাহত আছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের আরও বেশি উন্নয়ন ঘটবে।’

-সিভয়েস/এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়