Cvoice24.com

বে-টার্মিনাল প্রকল্প/
তিন কাজের দায়িত্ব পাবে কোরিয়ান দুই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ২৪ মে ২০২২
তিন কাজের দায়িত্ব পাবে কোরিয়ান দুই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান

বে-টার্মিনাল। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গত ৭ এপ্রিল নিয়োগ পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার দুই প্রতিষ্ঠান কুনওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড কনসালটিং কোম্পানি লিমিটেড এবং ডিয়েন ইয়াং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ নকশা প্রণয়ন, টার্মিনাল নির্মাণের দরপত্রের কাগজপত্র তৈরি এবং নির্মাণ কাজের তদারকি করতে এই দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগামী ৩১ মে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে চুক্তির কাজ সম্পন্ন করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। তবে প্রকল্প স্থানে মাটি ভরাটসহ প্রাথমিক কিছু কার্যক্রম আগে থেকেই এগিয়ে নেয়ার কাজ চলমান রেখেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে নগরের পতেঙ্গা এলাকায় সাগরপাড়ে আধুনিক বন্দর হিসেবে বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বন্দর। ২০২৪ সালে বড় আকারের জাহাজ ভেড়ানো ও ২০২৫ সালেই প্রকল্পটি চালু করতে চায় সংশ্লিষ্টরা। তবে প্রকল্পের কাজ নিয়ে বসে নেই বন্দর কর্তৃপক্ষ। ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের পাশপাশি আগামী ৩১ মে দুই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির পর তিন-চার মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ নকশার কাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে বন্দরের।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পণ্য হ্যান্ডলিং দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতেও বিরাট ভূমিকা রাখবে। এটি বাস্তবায়নে ১২৬ কোটি ৪৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮৬ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের ৫টি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের পরামর্শক হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। শেষ পর্যন্ত যাচাই-বাছাই করে দুই কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় মোট ৩টি টার্মিনাল নির্মিত হবে। এর মধ্যে একটি নির্মিত হবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে। বাকি দু’টি টার্মিনাল পিপিপি ভিত্তিতে বিদেশি বিনিয়োগে নির্মাণ করা হবে। বিদেশি কোন প্রতিষ্ঠান বাকি টার্মিনাল দু’টি নির্মাণ করবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অপারেশনাল এরিয়ার প্রায় ৬ গুণ বড়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ৬ হাজার কন্টেইনারবাহী বহনক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ বার্থিং করানো সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান ফ্যাসিলিটিতে একসঙ্গে ১৯টি জাহাজ ভিড়তে পারে। বে-টার্মিনালে ভিড়তে পারবে অন্তত ৩৫টি জাহাজ।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে আরো জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বে-টার্মিনাল প্রকল্পাধীন ৬৭ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির দখল চট্টগ্রাম বন্দরকে বুঝিয়ে দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। আরও প্রায় ৮০৩ একর জমি নামমাত্র বা প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বে-টার্মিনাল প্রকল্পের ফোকাল পার্সন চট্টগ্রাম বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল আলম সিভয়েসকে বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে যে টার্মিনালটি নির্মিত হবে মূলত সেটির ডিটেইল ড্রয়িং ডিজাইনিংয়ে দুই কোরীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের চুক্তি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই টার্মিনালে কয়টি জেটি নির্মিত হবে, কয়টি জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব, টার্মিনাল নির্মাণে কত টাকা ব্যয় হবে, টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরিসহ বিভিন্ন বিষয় চূড়ান্ত হবে। চুক্তির আওতায় কোরীয় প্রতিষ্ঠান দু’টি পূর্ণাঙ্গ নকশা প্রণয়ন, টার্মিনাল নির্মাণের দরপত্রের কাগজপত্র তৈরি এবং নির্মাণ কাজের তদারকি করবে। চুক্তি হওয়ার পর তিন-চার মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠান দু’টি পূর্ণাঙ্গ নকশা করবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, বে-টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ চোখে না পড়লেও তা চলমান আছে। চট্টগ্রাম বন্দর জোয়ার-ভাটার উপর পরিচালিত হলেও বে-টার্মিনালে এ ধরনের ঝামেলা থাকবে না। ফলে বন্দরে জট কমে যাবে। পাশাপাশি ২০২৫ সালের মধ্যে দেড় হাজার মিটার মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, ১ হাজার ২২৫ ও ৮শ’ মিটার দৈর্ঘ্যের দু’টি কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়বে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বেশি গভীরতা ও বেশি দৈর্ঘ্যের জাহাজ রাত-দিন ভেড়ানোর সুযোগ থাকবে। ২০২৫ সালের মধ্যে মাল্টিপারপাস কনটেইনার ও দু’টি কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হবে।

উল্লেখ্য, বে-টার্মিনাল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। ২০২৫ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে বর্তমানে সাড়ে ৯ মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যর বড় জাহাজ ভিড়তে পারে। কিন্তু বে-টার্মিনাল নির্মাণ হলে সেখানে ১২ থেকে ১৪ মিটার গভীরতা ও ২৮০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভিড়তে পারবে। বর্তমানে বন্দরে বছরে যে পরিমাণ আমদানি-রফতানি পণ্য হ্যান্ডলিং হচ্ছে, বে-টার্মিনাল নির্মাণ হলে সেখানে তার চেয়ে চার-পাঁচগুণ বেশি পণ্য হ্যান্ডলিং হবে। এতে করে চট্টগ্রাম বন্দরের চাপ কমে যাবে বলে মনে করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

-সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়