Cvoice24.com

গাড়ি আমদানিতে যে কারণে পিছিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:০৭, ২৯ জুন ২০২২
গাড়ি আমদানিতে যে কারণে পিছিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর

নিলামের অপেক্ষায় চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকা বিলাসবহুল গাড়ি। ফাইল ছবি।

বিদেশে থেকে গাড়ি আমদানির করে খালাসের পর বন্দরের ইয়ার্ডে রাখতে গেলে খুলনার মোংলার চেয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ছয়গুন বেশি ভাড়া গুণতে হয় আমদানিকারকদের। এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানির হার দিন-দিন কমছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে খোদ বন্দর কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে ভাড়ার হার কমিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে দিয়ে গাড়ি আমদানি ও খালাসের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে আমদানিকারকেরা।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে মোংলা বন্দর দিয়ে ২০ হাজার ৮০৮টি গাড়ি আমদানি হয়েছে। বিপরীতে চট্টগ্রাম বন্দরে দিয়ে আমদানি হয়েছে মাত্র ১৩ হাজার ৯১৩টি গাড়ি। যা মোংলা বন্দরের তুলনায় কম। বিদেশ থেকে গাড়ি আমদানির করে তা খালাসের পর বন্দরের ইয়ার্ডে চারদিন পর্যন্ত বিনামূল্যে রাখতে পারেন আমদানিকারকরা। পঞ্চম দিন থেকে গুণতে হয় ভাড়া। মূলত গাড়ির ওজন ও সিসি ভেদে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। তবে মোংলা বন্দরে গাড়ি রাখার ভাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় ছয়গুণ কম। তাই চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ এলেও অধিকাংশ গাড়ি খালাসের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় মোংলা বন্দরে।

 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয় ১৩ হাজার ৯১৩টি গাড়ি। এর আগে অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩ হাজার ৪৪৮টি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ হাজার ৮শ’টি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১২ হাজার ৫০১টি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৩ হাজার ৭৭টি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২০ হাজার ১৫০টি ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৯ হাজার ৪৬৯টি আমদানি গাড়ি খালাস হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। গত সাত বছরের চিত্রে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সার্বিকভাবে গাড়ি আমদানি ও খালাসের হার কমে গেছে। 

সূত্র আরও জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা জাহাজ খালাসের পর প্রথম চারদিন বিনামূল্যে বন্দরের ইয়ার্ডে গাড়ি রাখার সুযোগ দেয় বন্দর। বিনামূল্যে গাড়ি রাখার সুবিধার সময়সীমা পার হওয়ার পর প্রথম সাতদিন আমদানিকারককে ৭৯৩ টাকা ভাড়া ও ৫০৩ টাকা চার্জসহ মোট ১ হাজার ২৯৬ টাকা দিতে হয়। দ্বিতীয় সাতদিনের জন্য চার্জসহ ভাড়া গুণতে হয় ২ হাজার ৪৮৫ টাকা। ১৪ দিন পার হয়ে যাওয়ার পর আমদানিকারক গাড়ি না নিয়ে গেলে প্রতিদিনের জন্য ৭শ টাকা হারে ভাড়া আদায় করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

অন্যদিকে মোংলা বন্দরে আমদানি করা জাহাজ খালাস এবং ফ্রি টাইম পার হবার পর প্রথম সাতদিনের জন্য ভাড়া বাবদ ৪শ টাকা এবং দ্বিতীয় সপ্তাহের জন্য ৭৬৮ টাকা ভাড়া বাবদ অর্থ আদায় করা হয়। ১৪ দিন পার হয়ে যাওয়ার আমদানিকারক গাড়ি না নিলে প্রতিদিনের জন্য ফি বাবদ ১২৯ টাকা আদায় করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।  

নগরের চৌমুহনী এলাকার গাড়ি ব্যবসায়ী রমনা কারের মালিক মো. সাদেক সিভয়েসকে বলেন, ‘মোংলা বন্দরের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়ি রাখার ভাড়া অনেক বেশি। এটা আসলে কাম্য নয়। ফ্রি টাইমের পর চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন ৯শ টাকার বেশি খরচ পড়ে। অপরদিকে খুলনার মোংলা বন্দরে খরচ পড়ে তার অর্ধেকের চাইতেও কম। কাজেই যেখানে ভাড়া খরচ কম হবে আমদানিকারক সে বন্দরে গাড়ি খালাস করবে। এটাই স্বাভাবিক।’

গাড়ি আমদানিকারক মোসলেম উদ্দীন সিভয়েসকে বলেন, ‘বাড়তি ভাড়া এড়াতে অনেকটা বাধ্য হয়ে আমরা মোংলা বন্দরকে বেছে নিই গাড়ি খালাসের জন্য। চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়ি রাখার ভাড়া অনেক বেশি। এটা মোটেও ব্যবসাবান্ধব নয়। তাই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উচিত ভাড়ার বিষয়টি কমানো যায় কিনা তা বিবেচনা করা।’ 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা গাড়ি খালাসের পর আমরা চার দিন বিনা ভাড়ায় গাড়িটি রাখার সুযোগ দিই। ফ্রি টাইম শেষ হলে পঞ্চম দিন থেকে গাড়ির ওজন ও সিসি ভেদে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। তবে এটা ঠিক যে খুলনার মোংলা বন্দরের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরের ভাড়া আদায়ের হার বেশি। এ কারণে আমদানিকারকরা মোংলামুখী হয়েছেন। সেখান থেকেই গাড়ি খালাস করান। এ কারণেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা জাহাজের খালাসের হার কমে গেছে।’

সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়